রুশ হামলার শিকার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ জুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। যা সোমবার সকাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। শনিবার সন্ধ্যায় কিয়েভ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “যেসব নাগরিককে এসময় রাস্তায় দেখা যাবে, তাদেরকে শত্রু পক্ষের অন্তর্ঘাতী বাহিনীর সদস্য হিসাবে বিবেচনা করা হবে।এর আগে এক ঘোষণায় জানানো হয়, দুই দিনের এই কারিফউ জারি থাকবে প্রতিদিন স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। কিয়েভ শহরের মেয়রের দপ্তর থেকে এরপর কারফিউ-এর এই মেয়াদ ব্যাখ্যা করা হয়।বলা হয় যে, কারফিউ বর্তমানে বলবৎ আছে। তা সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টার আগে উঠবে না।কিয়েভের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের সেনাবাহিনী শহরের ওপর চালানো সবশেষ রুশ আক্রমণ প্রতিহত করেছে। তবে রুশ অন্তর্ঘাতী গ্রুপগুলোর দাবী, তারা ইউক্রেনের রাজধানীর ভেতরে ঢুকে পড়েছে।কিয়েভের শহরে যে বহুতল এ্যাপার্টমেন্ট ভবনটি মিসাইলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- তাতে অন্তত দুজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।এদিকে, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে, তাদের বাহিনী ইউক্রেনের দক্ষিণের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ শহর মেলিতোপোলের দখল নিয়েছে।শনিবার স্থানীয় সময় বিকেলে রুশ মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে দেশটির সংবাদমাধ্যম ইন্টারফ্যাক্স এবং স্পুটনিক জানায় যে, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের জাপোরিঝঝিয়া এলাকার মেলিতোপোল শহরের নিয়ন্ত্রণ এখন রাশিয়ার হাতে।মেলিতোপোল ইউক্রেনের মারিয়োপোল বন্দরের কাছে মাঝারি আয়তনের একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ শহর। সেখানে দেড় লাখ মানুষের বসবাস।
রয়টার্স বলছে, বৃহস্পতিবার রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর এটাই প্রথম একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বসতির গুরুত্বপূর্ণ শহর, যার নিয়ন্ত্রণ নিল রাশিয়া।এর আগে ইউক্রেনের ৮ শতাধিক সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আইগর কোনাশেনকভ বলেন, ১৪টি সামরিক বিমানঘাঁটি, ১৯টি কমান্ড পোস্ট, ২৪টি এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ৪৮টি রাডার স্টেশন ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া ৮টি ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীর বোটেও আঘাত হানা হয়েছে।অন্যদিকে, ইউক্রেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিক্টর লিয়াসখো জানিয়েছেন, রাশিয়ার হামলায় এ পর্যন্ত ৩ শিশুসহ ১৯৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে চলমান লড়াইয়ে এক হাজার ১১৫ জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন বলেও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি।
এরও আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার বাহিনীকে রাশিয়ার সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনীয়রা তাদের দেশকে রক্ষায় যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। তার বাহিনী এখনো কিয়েভ এবং অন্যান্য প্রধান শহরগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও দাবী করেন তিনি।এদিকে, ইউক্রেনকে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফ্রান্স। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে ফ্রনাসের অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম।জার্মানি বলছে, তারা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ইউক্রেনের কাছে জার্মানিতে তৈরি প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা তুলে নিয়েছে।ব্রিটেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত যুদ্ধে তিন শিশুসহ প্রায় ২০০ ইউক্রেনীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে সহস্রাধিক।জাতিসংঘ বলছে, রুশ আগ্রাসনে গত ৪৮ ঘণ্টায় ১ লাখ ২০ হাজার লোক ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে। সূত্র- বিবিসি।