চিলিতে বিরাট ব্যবধানে পিনোশে আমলের সংবিধান বাতিল

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির সামরিক একনায়ক জেনারেল আগুস্তো পিনোশের শাসনামলে তৈরি সংবিধান বাতিল করে, নতুন সংবিধান রচনার পক্ষে ভোট দিয়েছে চিলি। রোববার রাতে প্রকাশিত বুথ ফেরত ফলাফল অনুযায়ী, দেশের ৭৮.২৪ শতাংশ মানুষ সংবিধান নতুন করে রচনার পক্ষে ভোট দিয়েছে। সংবিধান অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ২১.৭৬ শতাংশ। বুথফেরত ফলাফল প্রকাশের পর রাতেই চিলির রাস্তায় দেখা গেছে সংস্কারবাদী তরুণদের উল্লাস। রাজধানী সান্তিয়াগোসহ অন্যান্য শহরে জয় উদযাপন করেছে তরুণরা। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

খবরে বলা হয়, সংবিধান নতুন করে রচনার পাশাপাশি সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রণয়ন কমিটি গঠনের পক্ষেও ভোট দিয়েছে চিলির জনগণ। অর্থাৎ, বর্তমানে ক্ষমতাসীন কোনো আইনপ্রণেতা নতুন সংবিধান লেখার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবে না।

প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা সংস্কারবাদীদের জয়কে স্বীকৃতি দিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আজ থেকে আমাদের সবাইকে জোট বেঁধে কাজ করতে হবে, যেন নতুন সংবিধানটি হয় একতা, স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যতের মহৎ কাঠামো।

বিশেষ কনভেনশনের আওতায় তৈরি সংবিধানটি ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভোটারদের সামনে উপস্থিত করা হবে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক দলগুলোর কাছে নতুন সাংবিধানিক সভার সদস্য মনোনয়নের জন্য দুই মাস সময় রয়েছে। এরপর আগামী এপ্রিলে চিলির জনগণ ওই মনোনীত প্রার্থীদের মধ্য থেকে সংবিধানটি লেখার জন্য ১৫৫ সদস্যের একটি কমিটি নির্বাচিত করবে। কমিটিতে লিঙ্গ সমতা বজায় রাখার জন্য নারী ও পুরুষের সংখ্যা সমান রাখা হবে। বিশ্বে প্রথমবারের মতো সংবিধান তৈরিতে সমান ভূমিকা রাখবে নারী ও পুরুষ।

নতুন কমিটির কাছে সংবিধান লেখার জন্য সময় থাকবে নয় মাস। তবে প্রয়োজনের খাতিরে তা আরো তিন মাস বৃদ্ধি করা যাবে। খসড়া তৈরির পর সেটি ভোটারদের সামনে তুলে ধরা হবে। ২০২২ সালে একটি নতুন গণভোটে জনগণ ঠিক করবেন সেটি গ্রহণযোগ্য কিনা। সংবিধানটি কার্যকর হওয়ার জন্য অবশ্যই সেটির পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পড়তে হবে।

এদিকে, গত নভেম্বরে রোববারের গণভোটের আয়োজন ডাক দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পিনেরা। সে সময় মেট্রো রেলের ভাড়া বৃদ্ধির পরপর দেশজুড়ে অসমতা ও জীবনযাত্রার উচ্চমূল্যের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ দেখা দেয়। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সহিংস সংঘাতে প্রাণ হারান অন্তত ৩০ বেসামরিক। আহত হন কয়েক হাজার। তখনই বিক্ষোভকারীরা দেশটির শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভাতা খাতগুলোয় সংস্কারের দাবি জানায়। সবমিলিয়ে অচিরেই ডাক আসে পিনোশে আমলের সংবিধান পরিবর্তনের।

পিনোশে আমলের সংবিধান লিখেছিলেন তারই উপদেষ্টা জেইমি গুজমান। ১৯৮০ সালে লিখিত ওই সংবিধানে, শিকাগো বয়েজ নামের একটি রক্ষণশীল মতাদর্শীয় দলের নব্যউদারবাদী দর্শন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর আওতায় বেসরকারি খাতগুলোকে সরকারি সেবা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়া হয়। এছাড়া বেসরকারি খাতের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণও কমিয়ে আনা হয়েছিল।

Advertisement