ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শুরু হয়েছে দু’দিন ব্যাপী জাতিসংঘের পুলিশ প্রধানদের দ্বিতীয় সম্মেলন। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীর প্রধানদের এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকালে জাতিসংঘের ডেলিগেটস্ ডাইনিং রুমে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের পুলিশ প্রধানদের সম্মানে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ সম্মেলনের শুরু হয়। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে সাধারণ পরিষদ হলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যসহ সকল নিহত শান্তিরক্ষীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে সম্মেলনের মূল পর্বের সূচনা করা হয়।
সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণ দেন জাতিসংঘ মহাসচিবের শেফ দ্য ক্যাবিনেট মারিয়া লুইজা রিবিরো ভায়োট্টি। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী পূর্ব তিমুরের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি জোসে র্যামস্-হোরতা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ পুলিশের উপর নির্মিত একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
সম্মেলনের মূল আলোচনা অংশটিকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জসমূহ এবং জাতিসংঘ পুলিশ, সহিংসতা প্রতিরোধ ও শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ পুলিশের ভূমিকা এবং দায়বদ্ধতা ও কর্মদক্ষতা।
আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে আইজিপি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। আইজিপি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যৌন হয়রানি ও অসদাচরণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের সুদৃঢ় অবস্থান ও প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ পরিমার্জিত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে মর্মেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বর্তমান ও ভবিষ্যত্ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদেরকে প্রস্তুতি গ্রহণ এবং কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
সহিংসতার ক্রমপরিবর্তনশীল রূপের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অরক্ষিত মানুষদের রক্ষা করতে এবং বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটাতে হবে। অসম হুমকিসংঙ্কুল পরিবেশে নিরাপদে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় রসদের সরবরাহ এবং কন্টিনজেন্সি পরিকল্পনা উন্নত করার উপর জোর দেন বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান।
আলোচনা পর্বগুলোতে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশন এর প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যাক্রুয়া ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারে এবং জাতিসংঘের ডিপিকেও, ফিল্ড সাপোর্ট, হিউম্যান রাইটস্ বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল, বিভিন্ন দেশের পুলিশ বাহিনীর প্রধানগণ ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের নীতি নির্ধারকগণ অংশ নেন।
আলোচকগণ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বিশেষ করে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা, বিশ্বাস স্থাপন, সহিংসতার অগ্রিম সতর্কবার্তা সংগ্রহসহ মিশনসমূহকে কার্যকর রাখতে জাতিসংঘ পুলিশের বহুমূখী ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। জনকেন্দ্রিক, আধুনিক, ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন, সহনশীল ও বিশেষায়িত জাতিসংঘ পুলিশ বিনির্মাণে মহাসচিবের রূপকল্পের কথা উঠে আসে আলোচনায়। উল্লেখ্য বিশ্বের ১৬টি পিস্ কিপিং মিশনে ৮৯টি দেশের প্রায় ১১ হাজার নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্য বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন।
এর আগে গত ১৯ জুন জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশন-এর প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যাক্রুয়া এবং জাতিসংঘের পুলিশ অ্যাডভাইজর লুইস ক্যারিলহো-এর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। সভায় জাতিসংঘের উর্দ্ধতন এই কর্মকর্তাদ্বয় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের গঠনমূলক ও সৃজনশীল ভূমিকা এবং অব্যাহত অবদানের প্রশংসা করেন। বৈঠকটিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারী পুলিশ বিশেষ করে নারী ফরমড্ পুলিশ ইউনিটসহ বাংলাদেশ পুলিশের অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশন কার্যালয়ে বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় আনতে অনুরোধ জানান ইন্সপেক্টর জেনারেল। এসময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো: আরিফুল ইসলাম, ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ ও মিশনের মিনিস্টার ফাইয়াজ মুর্শেদ কাজী।
এদিকে বুধবার সকালে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ-এর কমিশনার জেমস্ ও’নিল এবং গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান টমাস পি. গ্যালাটির সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। বৈঠকে প্রাধান্য পায় কাউন্টার টেরোরিজম ও সাইবার ক্রাইম এর মতো ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধ দমনে দ্রুত সাড়াদানের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়ের বিষয়গুলো। এনওয়াইপিডি ও বাংলাদেশ পুলিশের মধ্যে প্রশিক্ষণ বিনিময়ের বিষয়টিও গুরুত্ব পায় এই বৈঠকে।
বৈঠক শেষে ইন্সপেক্টর জেনারেল এনওয়াইপিডি’র জয়েন্ট অপারেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন যেখান থেকে নিউইয়র্ক পুলিশের অপারেশন সমন্বয় ও মেগা ইভেন্টসমূহ পরিচালিত হয়। অপরাধীদের মুখবয়াব চিহ্নিত করার প্রযুক্তি কীভাবে এনওয়াইপিডি ব্যবহার করছে তা আইজিপিকে দেখানো হয়। বাংলাদেশ পুলিশের সাথে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের পেশাগত সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ বৈঠক ছিল অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ।
এছাড়া জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও মিশনের কর্মকর্তাবৃন্দের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
Advertisement