বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে এক প্রবাসীর এক কোটি ৯৫ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় ব্রিটিশ বাংলাদেশী কাজী জাবের নামের একজনকে আটক করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
জাবের এর আটক হওয়ার ঘটনায় ও হাতকড়া পরহিত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনার। কাজী জাবের লন্ডনে নিজেকে সরকারের বেশ প্রভাবশালী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সিক্রেট সার্ভিসের গোয়েন্দা পরিচয়ে
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং পুলিশের প্রভাবশালী অফিসারের সাথে ছবি তুলে সেগুলা দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনে ও বাংলাদেশে নানারকম প্রতারণা করে আসছিল কাজী জাবের নামের এই ব্যাক্তি। ব্রিটেন প্রবাসী ডঃ হারুন কাদী নামে এক ব্যাক্তির চেক জালিয়াতির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গত শনিবার
ঢাকায় তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আসামী ঘন ঘন বাংলাদেশ লন্ডন ভ্রমণ করে, অভিযুক্ত অন্য আসামীদের গ্রেফতার করতে এবং প্রতারণার সাথে অন্য কোন চক্র জড়িত কী না তা নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধানমন্ডি থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সাব ইন্সপেক্টর নাজমুল হুদা আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। বিজ্ঞ আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
ঢাকায় তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আসামী ঘন ঘন বাংলাদেশ লন্ডন ভ্রমণ করে, অভিযুক্ত অন্য আসামীদের গ্রেফতার করতে এবং প্রতারণার সাথে অন্য কোন চক্র জড়িত কী না তা নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধানমন্ডি থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সাব ইন্সপেক্টর নাজমুল হুদা আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। বিজ্ঞ আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
২০১৭ সালে এপ্রিল মাসে উক্ত জালিয়াতির ঘটনায় লন্ডনের ব্রিকলেনে একটি সংবাদ সম্মেলনে কাজী জাবের উদ্দীনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন স্থানীয় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ড. মো. হারুন কাদী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, তার রেস্টুরেন্টের এক ওয়েটার কাশেমের বন্ধু হিসেবে রেস্টুরেন্টে আসা যাওয়া শুরু করে কাজী জাবের উদ্দীন এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রধানমন্ত্রীর ‘সিক্রেট সার্ভিস’র আওতায় দায়িত্বে আছেন বলে পরিচয় দেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিবেচনায় তার স্ত্রী সরকারি স্কলারশীপ নিয়ে লন্ডনে পড়তে এসেছেন বলে জানান। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী এমপি লন্ডনে সফরে এলে সবার সঙ্গে ছবি তুলে তা হারুন কাদীকে দেখান। এইভাবেই নিজেকে বিশেষ বাহিনীর একজন হিসেবে ড. হারুন কাদীর কাছে প্রতিষ্ঠিত করেন।
হারুন কাদী বলেন, ব্রিটেনে রিটায়ার্ড করে বাংলাদেশে গিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করার কথা জানালে, কাজী জাবের উদ্দিন বাংলাদেশে ঢাকার উত্তরায় একটি পারিবারিক মালিকানাধীন হোটেল বিক্রি করার কথা বলে। গত ২৯ ডিসেম্বর তারিখে তাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে যায় এবং বায়না বাবদ ৫ জানুয়ারি জাবেরের নামে স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংক এর চেক নাম্বার – ০০০৭০৯০৭৬৩ নাম্বার চেকে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। যা ৮ জানুয়ারি তার ব্র্যাক ব্যাংক উত্তরা ব্রাঞ্চ শাখায় একাউন্ট নাম্বার ১৫১০১০২১০৮২৭৮০০১ হিসাবে কাবেদ ক্যাশ করে নেয়। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারে হোটেলটি তাদের পারিবারিক ব্যবসা, তার এককভাবে বিক্রি করার কোন এখতিয়ার নাই। যদিও কাজী জাবের ভুয়া পাওয়ার অব এটর্নী দেখিয়েছিল। মূলত লন্ডনে প্রতারণা করাই তার মূল পেশা। তাই টাকা ফেরত চাইতে গেলে নানা রকম টালবাহানা শুরু করে। এবং হোটেল বিক্রির ঘটনা অস্বীকার করে।
যদিয়াও অভিযুক্ত জাবের সে সব বিষয় অস্বীকার করে লন্ডনে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, জাবের সে সময় উল্লেখ করেছিলেন হারুণ কাদীর কাছ তার আরো দুই কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। সেই টাকা না দিতেই নানা রকম মিথ্যাচার শুরু করেছেন হারুণ কাদী। জাবের জানান, ঢাকায় হারুন কাদীর জমি ও ফ্ল্যাট জবর দখল থেকে মুক্ত করতেই তিনি জাবেরের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করেছিলেন। বাংলাদেশে তিনি যে চেক দিয়েছিলেন সেই চেকে ভুয়া থাকায় টাকা পরিশোধ হয়নি। ইতোমধ্যে দেশে হারুন কাদীর বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা করেছেন তিনি। বাকী টাকা পরিশোধ না করতেই তার বিরুদ্ধে নানা মিথ্যাচার করছেন হারুন কাদী। আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙানোর বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ কি এখন এতোই বোকা যে নেতা-নেত্রীর সঙ্গে ছবি দেখে কোন ধরণের কারণ ছাড়া কাউকে দুই কোটি টাকা দিয়ে দেবে।জাবেদ উল্লেখ করেছিলেন বিষয়টি লন্ডন পুলিশ অবগত আছে। তাই তাদের নির্দেশনা ছাড়া কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি কাজী জাবের।
যদিও পরে হারুণ কাদি’র অভিযোগকে মিথ্যে, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত আখ্যায়িত করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই একটি মহলের ইন্ধনে এই মিথ্যে অপপ্রচার’।
জাবেদর সংবাদ সম্মেলনে, চ্যালেঞ্জ করেছিলেন কাদি সাহেব এবিষয়ে যদি লিখিত কোন প্রমান দেখাতে পারেন তাহলে এর তিনগুন অর্থ আমি পরিশোধ করবো, আর যদি প্রমান দেখাতে না পারেন, তাহলে আমার বিরুদ্ধে আনিত এমন মিথ্যে, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত অপবাদের বিচার ভবিষ্যতই করবে। অবশেষে হারুন কাদীর চেজ প্রতারণার মামলায়ই আটক হলেন কাজী জাবের।বাংলাদেশের পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৪০৬, ৪৬৭,৪৬৮ এবং ৪৭১ ধারায় মামলা হয়েছে। ধারা ৪৬৭ প্রমানিত হলে সর্বোচ্চ কারাদন্ড আজীবন কারাবাসের বিধান আছে।
Advertisement