জিয়াকে সৈনিক সংস্থার লোকেরা মুক্ত করেছে, একথা ঠিক নয়

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল দুইজনের। আমার অনুসন্ধানে যেটুকু পেয়েছি। একটা ছিল তাহের, আরেকটা যোগাযোগ সিরাজ ভাইয়ের নিজের। ওটা ডিফারেন্ট চ্যানেলে। সিরাজ ভাইয়ের যোগাযোগটা আরও কয়েক দিন কন্টিনিউ করেছে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ১৯৮১ সালে সিরাজ ভাই জিয়ার সঙ্গে একবার দেখাও করেছেন। তার কিছুদিন পরেই জিয়া নিহত হন।

লেখক, গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার সদ্য প্রকাশিত ‘প্রতিনায়ক: সিরাজুল আলম খান’ বইয়ে এ মন্তব্য করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণবাহিনীর সাবেক কমান্ডার আবু আলম মো. শহীদ খানের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি একথা বলেন।

আলাপচারিতায় তারা বলেন-আবু আলম মো. শহীদ খান: আমি সিরাজ ভাইয়েরটা জানি না, তাহের ভাইয়েরটা জানি।

মহি: ৭ নভেম্বর ভোরবেলা তাহের এবং ইনু যখন ক্যান্টনমেন্টে যান, জিয়ার তো প্রথম প্রশ্নই ছিল, ‘ সিরাজুল আলম খান কোথায়?’ জিয়াতো সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে ডিসকাস করতে চেয়েছিল। সে জানে যে পার্টি তার। সমস্যা হলো, আমরা অনেক সময় আবেগ দিয়ে বিচার করি আর সম্পর্ক দিয়ে। জাসদ প্রথম থেকেই একটা অবস্থান নিয়ে নিয়েছে যে জিয়া বিট্রেয়ার আর তাহের হিরো। ফলে জাসদ যেটাই বলবে ওই কেমিস্ট্রিকেই ভিত্তি করে। তাই না? যেমন অবস্থানগত কারণে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত আছে বলে আমরা ভারত চলে গেছি। ফলে একটা সমীকরণ তৈরি হয়ে গেছে। এটা আমরা চেঞ্জ করতে পারব না। আমরা তখন থেকে দিল্লির চোখ দিয়ে অনেক কিছু দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। পুরো ক্যানভাসটা কিন্তু আমাদের সামনে নাই। এটা বঙ্গবন্ধুর সামনে ছিল। এবং তিনি এ বিষয়গুলো বুঝতেন। যেটা তাজউদ্দীনও বোঝেন নাই, আমরাও বুঝি নাই।

জিয়াকে তাহের ধারণা দিয়েছিলেন, ‘আমার পেছনে বিশাল পার্টি আছে।’ আর তাহের জাসদকে ধারণা দিয়েছেন, ‘আমার পেছনে জিয়া আর তার সেনাবাহিনী আছে। এটা প্লে করতে গিয়ে তাহের…।

আলম: ওখানে আরও বিষয় থাকতে পারে। তাহেরতো ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ছিলেন। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের বিষয়গুলো কন্ট্রোল করার জন্য ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের কাউকে থাকতেই হবে। আপনি কাকে দায়িত্ব দিচ্ছেন? জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে নিয়ে আসার দায়িত্ব আপনি দিলেন নায়েক সিদ্দিক, হাবিলদার আবদুল হাই আর তার কয়েকজন লোককে।

মহি: নায়েক-হাবিলদারের কথায় জিয়া আসবে?

আলম: জিয়া হচ্ছেন একজন মেজর জেনারেল।

মহি: আর্মির চিফ।

আলম: একজন হাবিলদার তাকে উদ্ধার করে এলিফ্যান্ট রোডে নিয়ে আসবে। এটা তো হয় না? বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার উচিত ছিল ক্যান্টনমেন্ট দখল করা। সেখানে তাহের বসে থাকবেন। পলিটিক্যাল লিডাররা যদি যেতে হয়, সেখানে যাবেন। প্রথম মিসটেক এটাই। আপনি একজন নায়েক বা হাবিলদারকে দায়িত্ব দিলেন জিয়াকে নিয়ে আসার জন্য। ততক্ষণে বিভিন্ন বাহিনীর বড় সাহেবরা জিয়ার কাছে চলে গেছে। জিয়া অন্য জায়গা থেকেও মেসেজ পাচ্ছেন। বন্দী অবস্থায় জিয়া কোনো মেসেজ পাচ্ছিলেন না। যেই তিনি মুক্ত হয়ে গেলেন, তার লোকজন অর্গানাইজড হয়ে গেল।

মহি: জিয়াকে সৈনিক সংস্থার লোকেরা মুক্ত করেছে, এটাও তো ঠিক না। ওরা যাওয়ার আগেই তিনি মুক্ত হয়ে গেছেন।

আলম: ওরা যাওয়ার আগে কারা মুক্ত করল?

মহি: সৈনিকেরাই করেছে, জেসিওরা করেছে, বাট দে আর নট পার্ট অব সৈনিক সংস্থা। সুবেদার মেজর আনিসুল হক আর মেজর মুহিউদ্দিন করেছে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যত সিপাহি, এনসিও, জেসিও ছিল- এদের একটা বড় অংশ জিয়ার প্রতি সিমপ্যাথেটিক ছিল, তারা ইনভলভড হয়ে গিয়েছিল খালেদা মোশাররফের বিরুদ্ধে জিয়ার পক্ষে। প্রত্যেকেরই তো আলাদা আলাদা স্বার্থ আছে। তারাই এটা করেছে এবং তারা জিয়াকে নিয়ে এসেছে। সৈনিক সংস্থার ওরা যাওয়ার আগেই জিয়া সেকেন্ড ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসে বসে গেছে, সারাউন্ডেড বাই অল অফিসার্স।

Advertisement