টাওয়ার হ্যামলেটসে পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস

দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর অত্যন্ত সফল একটি প্রভিশন ‘কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস’ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। গত ১৮ই ডিসেম্বর কাউন্সিলের ক্যাবিনেট সভায় মেয়র জন বিগসের নেতৃত্বে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে একজন নন বাঙালি কাউন্সিলর বিরোধিতা করলেও সব বাঙালি কাউন্সিলররা সমর্থন দিয়েছেন।

ক্যাবিনেট সভায় ক্যাবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার অফিসার্স কর্তৃক প্রদত্ত ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস রিভিউয়ের ডকুমেন্ট তুলে ধরেন। এই রিভিউর অংশ হিসাবে কাউন্সিল অফিসাররা প্যারেন্টস, কমিউনিটি অর্গানাইজেশনের নেতৃবৃন্দ এবং কাউন্সিলরদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন।

বাংলাদেশি টিচার্স এসোসিয়েশন এর নেতৃত্বে সম্পূর্ণ কমিউনিটি সম্মিলিতভাবে তুমুল আন্দোলনের ফলে গত 20 শে ফেব্রুয়ারি ফুল কেবিনেটে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, সম্পূর্ণ কনসালটেশন এবং অ্যাসেসমেন্ট ব্যতিরেকে কাউন্সিল এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না।

এরই প্রেক্ষিতে রিভিউ এর মূল কারণ হিসাবে বলা হয় যে টাওয়ার হামলেটসে কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস প্রথা এবং উন্নত মানের শিক্ষা পদ্ধতি কম খরচে চালু রাখা।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় রিভিউ এর মূল কারণ অথবা উদ্দেশ্যের সাথে তাদের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ উল্টো। এটা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক।

এই সার্ভিসের যবনিকাপাত করে এটা চালু রাখার কোন সুযোগ নেই। প্যারেন্টস এবং অরগানাইজেশন নেতৃবৃন্দ ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস চালু রাখার পক্ষে তাদের জোরালো মতবাদ ব্যক্ত করেন। কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার রিভিউতে চারটি অপশন এরমধ্যে একটি অপশন গ্রহণ করার জন্য কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বান করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় অফিসাররা ইতিমধ্যে অপশন তিন গ্রহণ করার জন্য রিকমেন্ডেশন বা অভিমত ব্যক্ত করেন।

উপস্থিত লিড মেম্বাররা অপশন তিন এর পক্ষে তাদের মত প্রদান করেন, ( শুধুমাত্র কাউন্সিলর রিচর্ড কিং ছাড়া) মেয়র তার বক্তব্যে কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিসের প্রশংসা করেন । খুব ভালো ভালো কথা বলেন কিন্তু অপসন তিন এর সাথে একমত প্রকাশ করেন।

এখানে উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ টিচার্স এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে গত ১৮ই ডিসেম্বর মালবারি প্লেসের সামনে ফান্ডিং কাটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এবং সংগঠনের সভাপতি আবু হোসেন ও প্যারেন্টস একই দিনে ক্যাবিনেট সভায় ডেপুটেশন প্রদান করেন। আবু হোসেন তার বক্তব্যে অপশন ৩ এর বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি প্রদান করেন এবং অপশন ১ এর পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। কিন্তু মেয়র জন বিগস্ অপশন তিন গ্রহণ করার ফলে কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিসের দীর্ঘ 40 বছর ফলপ্রসূ যাতায়াতের দুঃখজনক পরিসমাপ্তি ঘটে।

নতুন গৃহীত প্রস্তাব অপশন তিন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কমিউনিটি সার্ভিসের আওতায় যে সমস্ত শিক্ষক এবং ম্যানেজমেন্ট কাজ করেন তাদের সকলেরই চাকুরিচ্যুত হবেন।

কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস নামে আর কোন প্রভিশন কাউন্সিলে থাকবে না। প্রায় পনেরশো শিক্ষার্থীদের বাংলা অধ্যয়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলো।
এই অপশনের আরেকটি দিক হলো টাওয়ার হামলেটস এক বছরের জন্য একটি গ্রান্ট প্রতার আয়োজন করবে। অর্গানাইজেশনগুলো এপ্লাই করে বাংলা পড়ানোর জন্য গ্রান্ট নিতে পারেন। কিন্তু আমাদের অর্গেনাইজেশন গুলো কাউন্সিলের সম্পূর্ণ ক্রাইটেরিয়া মেনটেন করে গ্রান্ট পাওয়া সহজ হবে না। এবং তাও আবার এক বছর পর এই গ্রান্ট প্রথা থাকবেনা।

বাংলাদেশি টিচার্স এসোসিয়েশন ইউকে সমগ্র কমিউনিটি ওরগানাইজেশন, পেরেনটস, শিক্ষক, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং মিডিয়া সহ সকল শ্রেণীর মানুষদেরকে নিয়ে কাউন্সিলের এই ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস বন্ধ করার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য গত 20 শে ডিসেম্বর এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।

এই প্রতিবাদ সভায় সবাই আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দাবি তোলেন। এবং সকল বক্তাই কাউন্সিলের এ সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করার দাবি জানান। বক্তারা বলেন, কাউন্সিল একদিকে দুই থেকে তিন পার্সেন্ট কাউন্সিল টেক্স বাড়াচ্ছে, মেয়র এবং কাউন্সিলরদের বেতন অনেক গুণ বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু লেবার দলীয় কাউন্সিল পাবলিক সার্ভিস গুলো দিনে দিনে বন্ধ করে দিচ্ছে।

তারা আরো বলেন মাতৃভাষা এটা একটা জাতীয় ইস্যু এখানে সকলেই দল মত নির্বিশেষে এক যোগে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জ্ঞাপন করেন, যাতে আগামী ফুল ক্যাবিনেট অধিবেশনে কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস নতুন জীবন পায়।

এই প্রতিবাদ সভায় টিচার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আবু হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক সিরাজুল বাসিত চৌধুরীর সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট কে এম আবু তাহের চৌধুরী, ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, যুনেদ আহমেদ সুন্দর, ইব্রাহিম খলিল, শওকত মাহমুদ, মাসুদ আহমেদ, মাহবুব হোসেন, সালাম চৌধুরী, সাব্বির আহমেদ চৌধুরী, মাওলানা রফিক আহমেদ, রওশানারা গনি, নাহিদা আক্তার, সুফিয়া আক্তার, শেফা বেগম প্রমুখ।

Advertisement