টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল নির্বাচন ২০১৮ : সিরিয়া-যশোয়াসহ ৫ লেবার কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছেন না

কামাল মেহেদী : অবশেষে রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছেন টাওয়ার হ্যামসেটস কাউন্সিলের লেবার দলীয় কাউন্সিলর ও সাবেক ডেপুটি মেয়র সিরিয়া খাতুন। গত জুন মাসে মেয়রের উপর নানান অভিযোগ তুলে ডেপুটি মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন কাউন্সিলর সিরিয়া খাতুন। মেয়রের বিরুদ্ধে বুলিং, ইসলামো ফোবিয়াসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনে টাওয়ার হ্যামলেটস লেবারের কাছে তিনি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন বলেও জানা গেছে। তবে সর্বশেষ মধ্য জুলাইয়ে তার এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি আর প্রার্থী হবে না বলে জানান। একই সঙ্গে মেয়রের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করেন বলেও জানা গেছে। এ বিষয়ে কাউন্সিলর সিরিয়া খাতুন ব্রিটবাংলা২৪কে জানান, দীর্ঘ দিন তিনি পপলার এলাকার লেইন্সবারি ওয়ার্ডে কমিউনিটির মানুষের সেবা দিয়ে আসছেন। এবার রাজনীতি বাদ দিয়ে পরিবারকে সময় দেবেন। ব্রিটবাংলার এক প্রশ্নের জবাবে জানান, যেহেতু তিনি আগামীতে আর দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী হবেন না। রাজনীতি বাদ দিচ্ছেন। তাই ওইসব অভিযোগের কোন গুরুত্ব থাকবে না। “রাজনীতিই যখন ছেড়ে দিচ্ছি তখন আর এসব অভিযোগ নিয়ে ঘাটাঘাটি করে সময় নস্ট করতে চাই না” বলে ব্রিটবাংলা২৪কে জানান তিনি।

উল্লেখ্য নির্বাহী মেয়র জন বিগস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর ডেপুটি মেয়র হিসাবে ৩ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন লেইন্সবারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিরিয়া খাতুন। এই ওয়ার্ডে তিনি এক দশকের বেশি সময় কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্বে আছেন। জন বিগসের আমলে তিনি ডেপুটি মেয়রের পাশাপাশি কমিউনিটি সেইফটি লিড মেম্বারও ছিলেন। কিন্ত গত মে মাসে কমিউনিটি সেইফটি লিড মেম্বারের দায়িত্ব পরিবর্তন করে তাকে কম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগের লিড মেম্বারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যা তিনি মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে মেয়রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যান তিনি। নতুন লিড মেম্বারের পদ না নিয়ে বরং পদ ত্যাগ করেন ডেপুটি মেয়রের পদ থেকে। এরপর সংবাদ মাধ্যমে নির্বাহী মেয়র জন বিগসের বিরুদ্ধে বুলিং, ইসলামো ফোবিয়াসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলেন কাউন্সিলর সিরিয়া খাতুন। এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে কাউন্সিলর সিরিয়া স্থানীয় লেবার গ্রুপের কাছে মেয়রের বিরুদ্ধে লিখিত নালিশ করেছিলেন বলে জানা গেছে।  ২০১৮ সালের নির্বাচনে দাঁড়াবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেইসব অভিযোগও প্রত্যাহার করেছেন তিনি । তবে লোখমুখে সমালোচনাসহ নানান প্রশ্ন আছে মেয়রের বিরুদ্ধে কাউন্সিলর সিরিয়া খাতুনের অভিযোগ নিয়ে। মেয়র কর্তৃক কাউন্সিলর সিরিয়া খাতুন কবে থেকে  কি ধরনের বুলিং এবং হয়রানির শিকার হয়েছিলেন? কেন তিনি মে মাসের আগে এ ধরনের কোন অভিযোগ করেননি? ডেপুটি মেয়রের সঙ্গে কমিউনিটি সেইফটি লিড মেম্বারের পদটি বহাল থাকলে কি তিনি মেয়রের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলতেন? এসব প্রশ্ন আছে জনমনে। কাউন্সিলর সিরিয়া খাতুন গত প্রায় এক বছরের কম সময় থেকে মাথায় হিজাব পরতে শুরু করেছেন। মেয়রের বিরুদ্ধে আনিত তার অভিযোগগুলোর তদন্ত হলে প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসত বলে মনে করছেন অনেকে। কাউন্সিলর সিরিয়া খাতুন তার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিলেও মেয়রের পক্ষ থেকে তদন্তের মাধ্যমে এর প্রকৃত চিত্র জনগনকে জানানো উচিত বলেও মনে করেন বারার সচেতন মহল।

তবে বিতর্কিত একটি অধ্যায়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি টানলেও কাউন্সিলর সিরিয়া খাতুন বিভিন্ন সময় কাউন্সিল ক্যাবিনেট এবং স্থানীয় লেবার পার্টির অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাবেক লন্ডন মেয়র কেন লিভিষ্টোনের আমলে লন্ডন মেয়রের উপদেস্টা হিসাবেও কাজ করেন সিরিয়া খাতুন।

এদিকে শুধু সিরিয়া খাতুনই নয়, ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক কারনে লেবারের আরো ৪ জন বর্তমান কাউন্সিলর ২০১৮ সালের স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না বলে জানা গেছে। এরা হলেন মেয়র জন বিগস কেবিনেটের বর্তমান ওয়ার্ক এন্ড ইকোনমি গ্রোথ লিড মেম্বার কাউন্সিলর যশোয়া প্যাক,

এডুকেশন এন্ড চিলড্রেন সার্ভিস লিড মেম্বার কাউন্সিলর এমি ওয়াইটলক গিবস,  সেন্ট পিটার্স ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ক্লেয়ার হ্যারিসন এবং মেয়রের উপদেষ্টা ডেভ চেস্টারটন। বো ওয়েস্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যশোয়া প্যাক, বেথনাল গ্রীন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এমি ওয়াইট গিবস, ব্ল্যাকওয়েল এন্ড কিউবিট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ডেইব চেস্টারটন এবং সেন্ট পিটার্সের ওয়ার্ডের ক্লেয়ার হ্যারিসন।

তবে এই ৪ জনের মধ্যে কারোই নির্বাহী মেয়র জন বিগসের সঙ্গে কোন ধরনের কেওয়াস আছে বলে শুনা যায়নি। তারা স্বেচ্ছায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার কথা দলকে জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এর বাইরে আরেকজন বর্তমান কাউন্সিলরের মনোনয়ন এখনো নিশ্চিত হয়নি বলে জানা গেছে। তিনি হচ্ছেন কাউন্সির খালেস উদ্দীন আহমদ। জন বিগস মেয়র হবার পর কাউন্সিলর খালেস স্পীকার নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারনে মেয়রের সঙ্গে তার দুরত্ব তৈরি হয়। মে মাসে নতুন কেবিনেট গঠনের সময় কাউন্সিলর স্পীকার হিসেবে তার সর্বশেষ বক্তব্যে মেয়রের উপর পরোক্ষভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া দলীয় কিছু কাউন্সিলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে লন্ডন লেবার পার্টি থেকে সাময়িক সময়ের জন্য মেম্বারশীপ স্থগিত হলেও পরবর্তীতে ওই অভিযোগের পক্ষে কোন প্রমাণ না পাওয়ায় কাউন্সিলর খালেস উদ্দীনের সদস্যপদ বহাল রেখে লন্ডন লেবার পার্টি।

এছাড়া সাবেক কাউন্সিলর আব্দাল উল্লার মনোনয় আবেদন মৌখিকভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তিনি আপিল করেছেন বলেও জানা গেছে। অন্যদিকে সাবেক কাউন্সিলর হেলাল আব্বাস ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীতার জন্যে আবেদনই করেননি বলে জানা গেছে।

স্থানীয় লেবারের একটি সুত্র ব্রিটবাংলাকে জানিয়েছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে মধ্যবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগেই নমিনেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল টাওয়ার হ্যামলেটসে। মোটামুটি শর্টলিস্টও হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলে সব কিছু স্থগিত করা হয়। আগস্ট মাস থেকে আবার প্রক্রিয়া শুরু হবে। কাউন্সিলর প্রার্থীতার জন্যে প্রায় ১৫০ জন প্রার্থী আবেদন করেন বলে ব্রিটবাংলা২৪কে জানিয়েছে ওই সুত্র। এরমধ্য থেকে আগস্টের ভেতরে শর্টলিস্ট করবে স্থানীয় লেবার গ্রুপ। তারপর তা পাঠানো হবে লন্ডন লেবারের কাছে। সেখান থেকে পুরো প্রক্রিয়া শেষে চুড়ান্ত হয়ে আসবে ৪৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম। তবে এই তালিকায় ইম্পোজ বা আরোপ করার ক্ষমতা আছে নির্বাহী মেয়র জন বিগসের। পছন্দ এবং অপছন্দের তালিকাও লন্ডন লেবারের কাছে পাঠাতে পারেন মেয়র জন বিগস।

Advertisement