টাওয়ার হ্যামলেটস রাজনীতিতে লুৎফুর রহমানকে আটকানোর পথ নেই!

বিশেষ প্রতিনিধি : টাওয়ার হ্যামলেটস রাজনীতিতে আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন বারার সাবেক নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান। ২০১৫ সালের ইলেকশন কোর্টের রায়ের পর থেকে এতোদিন বারায় ছায়া হয়ে ঘুরছিলেন লুৎফুর রহমান। প্রকাশ্যে কোনো আলোচনায় ছিলেন না তিনি। যদিও ২০২২ সালের মেয়র নির্বাচনে তিনি নাড়া দেবেন বলে লোকমুখে শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু গত সোমবার বারায় দ্বিতীয় দফায় মেয়রাল সিস্টেম নিয়ে রেফারেন্ডামের পক্ষে লেবারগ্রুপের সিদ্ধান্তের পর একটু আগেই আলোচনায় উঠে এসেছেন সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমান। রেফারেন্ডামকে সামনে রেখে লুৎফুর রহমানের ছবিসহ ইয়েস ফর মেয়র লিফলেট প্রচার শুরু হয়ে গেছে। লুৎফুর রহমানকে আগাম আলোচনায় নিয়ে আসার জন্যে মেয়র জন বিগস ধন্যবাদ পাবার দাবী রাখেন।
২০১০ সালের মে মাসে রেফারেন্ডামে বারায় মেয়রাল সিস্টেমের পক্ষে জনগণ ভোট দেওয়ার পর একই বছরের ২১শে অক্টোবর বারার প্রথম সরাসরি ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন লুৎফুর রহমান। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনেও লেবার প্রার্থী জন বিগসকে পরাজিত করেছিলেন লুৎফুর রহমান।
এরপরের কাহিনীতো বারার সবারই জানা। তবে লুৎফুর শঙ্কা এখনো কাটেনি স্থানীয় লেবার গ্রুপের। বারায় দ্বিতীয় দফায় মেয়রাল সিস্টেম নিয়ে রেফারেন্ডাম আহ্বান লুৎফুর রহমানকে আটকানোর কৌশল বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এর যথেস্ট কারণও রয়েছে।


বর্তমান মেয়র জন বিগস নিজে আগ্রহী হয়ে মেয়রাল না লিডারশীফ সিস্টেম, এ দুটির মধ্যে একটি পুনরায় বাছাই করার জন্যে রেফারেন্ডামের প্রস্তাব করেছেন। গত সোমবার স্থানীয় লেবার গ্রুপ মেয়রের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। প্রস্তাবটি এখন কেবিনেটে উত্থাপিত হবে। কেবিনেটে নিশ্চিত পাশ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আগামী ৬ মে অনুষ্ঠিত হবে রেফারেন্ডাম।
টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার গ্রুপের একটি অংশের বা মেয়র জন বিগসের ধারণা হয়তো, রেফারেন্ডামে লিডারশীপ পাশ করবে। লিডারশীপ পাশ করলে বেঁচে গেল লেবার পার্টি। আর মেয়রাল সিস্টেম পাশ করলে খবর আছে লেবার পার্টির। তবে দ্বিতীয় দফায় রেফারেন্ডামেও মেয়রাল সিস্টেমই পাশ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। বারায় এখনো প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৪ জনই মেয়রাল সিস্টেমের পক্ষে কথা বলছেন। সাধারণ মানুষের ধারণা, মেয়র যেই হোন, যে পার্টিরই হোন, তাকে সরাসরি পয়েন্ট আউট করে কথা বলা যায়, দাবী উত্থাপন করা যায়। লিডারশীপ সিস্টেমে সাধারণ মানুষ পাত্তাই পায় না। তাই বারার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মেয়রের পক্ষে বলেই অনুমান করা যায়। আর মেয়রাল সিস্টেম পাশ হলে লেবার পার্টি থেকেও বাঙালী প্রার্থী বা মেয়র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাঙালী অধ্যুষিত বারায় বাঙালী এমপি হতে পারলে, বাঙালী মেয়র হতে সমস্যা থাকার কথা নয়। তবে বাঙালী মেয়রে বারার সাধারণ মানুষের চাইতে লেবার পাটিরই সমস্যা বেশি বলে মনে হচ্ছে। একই ইস্যুতি দ্বিতীয় দফায় রেফারেন্ডাম প্রদানে অন্তত তাই বলা যায়।
অন্যদিকে রেফারেন্ডামকে কেন্দ্র করে লুৎফুর রহমান নিজেকে ২০২২ সালের নির্বাচনের আগে বেশ ভালো করে সংশোধন করে নেবার সুযোগ পাবেন। ২০১৪ সালে দ্বিতীয় বারের মতো বারার সরাসরি ভোটে মেয়র নির্বাচিত হবার পর ২০১৫ সালে লুৎফুর রহমানকে ইলেকশন কোর্টের রায়ে টাউন হল ছাড়তে হয়েছিল। ৫ বছরের জন্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল নির্বাচন থেকে। সলিসিটর পেশাতেও তাকে নিষিদ্ধ করা হয়। ইলেকশন কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেরও সুযোগ পাননি লুৎফুর রহমান। কিন্তু মজার বিষয় হল, লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো প্রমাণ খুঁজে পায়নি পুলিশ। আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ সেটা জানিয়েও দিয়েছে অনেক আগে।
আদালতে বা পুলিশের কাছে লুৎফুর রহমান অপরাধী নয়। তাহলে সমস্যা কোথায় ছিল? তহবিল তছরূপে? এ বিষয়টি লুৎফুর রহমান নিজেই ভালো বলতে পারবেন। তার নিজের অজান্তে কিছু হয়ে থাকলে এতো দিনে হয়তো তিনি নিজে তা অনুধাবনও করেছেন। আত্মসংশোধন করে আবার মেয়র প্রার্থী হলে লুৎফুর রহমানকে আটকানোর কোনো পথ হয়তো লেবার পার্টির থাকবে না। তবে মেয়র প্রার্থী হবার আগে লুৎফুর রহমানকে অবশ্যই গেটআপ এবং মেকআপে পরিবর্তন আনতে হবে। ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যে মানুষগুলো তার আশপাশে ছিল, সেই মানুষগুলোকে যদি ত্যাগ করতে পারেন, তাহলে হয়তো কম প্রশ্নের সম্মুখিন হবেন তিনি। কারণ উপরেই বলেছি, আদালতে অপরাধী প্রমাণিত হবার মতো কিছু তিনি করেননি। তাই অপরাধী হিসেবে তাকে প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ। তবে কিছু একটা হয়েছিল! আর কি হয়েছল, কেন এবং কাদের কারণে সেটি হয়েছিল, নেতা হিসেবে, গ্রুপ লিডার হিসেবে, নির্বাহী মেয়র হিসেবে একমাত্র লুৎফুর রহমান নিজেই ভালো বলতে পারবেন।

Advertisement