ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: মো. আতোয়ার রহমান। বাড়ি দিনাজপুরের হিলি উপজেলার বাংশা গ্রামে। বাড়িতে জমিজমা আছে। কৃষি আবাদ হয়। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেটা ১৩ বছরের। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। নিজের ক্ষেত-খামারে কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝেই চলে আসেন ঢাকায়।
ভাড়ায় রিকশা চালান। পনের দিন, এক মাস, দুই মাস রিকশা চালিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে আবারও চলে যান এলাকায়। তাতে বাড়তি কিছু মজুদ হয়। জমির সার-ওষুধের দাম কিছুটা হলেও ওঠে আসে। পঞ্চাশোর্ধ আতোয়ার গত ৫-৭ বছর ধরে এভাবেই ঢাকা আসেন, আবার কিছু টাকা জমিয়ে এলাকায় ফিরে যান। কিন্তু এবার আর টাকা জমাতে পারেননি। রোববার সকালে ঢাকা এসে বুধবার রাত ৯টার বাসে এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। কারণ আতঙ্ক। করোনা আতঙ্ক।
আতোয়ারের পরিবারের লোকজন বারবার ফোন করছে। বলছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসো। ঢাকায় করোনা ভাইরাস নামে একটা রোগ (কোভিড-১৯) এটাক করেছে। অবস্থা ভয়াবহ। যে কোন সময় যে কাউকে ধরতে পারে। তাই, সময় থাকতেই বাড়ির পথ ধরো। তাছাড়া গত দু’দিনে আতোয়ারের মনেও ভয় ঢুকেছে গেছে। হঠাৎ করেই অনেকটা ফাঁকা হয়ে যাওয়া ঢাকা তার আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে।
পঞ্চাশোর্ধ এই মানুষটার সঙ্গে কথা হয় গতরাতে। তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। অনেকটা তাড়াহুড়ো করে রিকশা চালাচ্ছিলেন। জিজ্ঞেস করতেই জানান, ৯টার বাস ধরতে হবে। তার আগে মহাজনকে রিকশা বুঝিয়ে দিয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। এরপর তিন দিনের মাথায় বাড়ি চলে যাওয়ার কারণ এবং পরিবারের লোকজনের পেরেশানির কথা উল্লেখ করেন।
ঢাকা আসার আগে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে শুনেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছিলাম বিদেশে এমন একটি রোগ আসছে। কিন্তু বাংলাদেশে আসার কথা শুনিনি। এখন বাড়ির লোকজন জানতে পেরে পেরেশান হয়ে গেছে।
আতোয়ার রহমান রিকশা চালিয়ে দিনে ১০০ টাকা মহাজনকে দেন, ১২০ টাকা থাকা-খাওয়ায় ব্যয় হয়। প্রতিদিন সঞ্চয় করেন ৪০০ টাকা। এক জায়গায় গাদাগাদি করেন থাকেন ৩০ জন। বাকি সঙ্গীদের কি অবস্থা জানতে চাইলে, তিনি বলেন, সবাই আতঙ্কে। তারাও ঢাকা ছাড়তে চায়। কিন্তু উপায় নেই। কেউ কেউ বলছে, বাড়ি চলে গেলে খাবো কি? তাই আতঙ্কে থাকলেও ঝুঁকি নিয়েই থাকছে ঢাকায়। তবে যাদের সুযোগ আছে তারা চলে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি।