সিলেট অফিস :: মাত্র ৪ দিনের মাথায় সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ মামলার সকল আসামিকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মামলার এজহারভুক্ত ২ নাম্বার আসামি তারেককে গ্রেফতারের পর শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শেষ হল। এ নিয়ে মামলার এজহারনামীয় ৬ ও অজ্ঞাতনামা ২ জন নিয়ে মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করলো র্যাব ও পুলিশ। সীমিত সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন সাফল্যে প্রশংসায় ভাসছে সিলেটের সর্বত্র।
জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ ঘটনায় ওই রাতেই শাহপরান থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন নির্যাতিতার স্বামী। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় আরো ৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়। ঘটনার পরদিন কোন আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় সারা সিলেট ছিলো বিক্ষোভে উত্তাল। সবার একটাই দাবি ছিলো ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেফতার নিশ্চিত করা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সিলেটের মানুষ ধারণা করছিলেন- আসামিরা কী পার পেয়ে যাচ্ছে? কিন্তু ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মাথায় রবিবার ভোরে ছাতকের খেয়াঘাট এলাকা থেকে ছাতক থানা পুলিশ গ্রেফতার করে মামলার প্রধান আসামী সাইফুর রহমানকে। আর একই দিন ভোর ৬টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার মনতলা নামক এলাকা থেকে মামলার অন্যতম আসামি অর্জুন লস্করকে গ্রেফতার করে সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
এছাড়া রবিবার রাতেই গণধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি ছাত্রলীগ নেতা শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫) ও রবিউল ইসলামকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়।হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মাহবুবুর রহমান রনিকে গ্রেফতার করে র্যাবের একটি দল। অন্যদিকে নবীগঞ্জ উপজেলা থেকে রবিউলকে গ্রেফতার করে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ। আর রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলার কচুয়া নয়াটিলা এলাকা থেকে রাজন ও তার সহযোগি আইনুলকে গ্রেফতার করে র্যাব।
সোমবার এ ঘটনার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করতে দিনভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাত ১১টার দিকে সিলেট জেলা ডিবি ও কানাইঘাট থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে হরিপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় আসামি মাহফুজুর রহমানকে (২৫)।
দেশের আলোচিত এ গণধর্ষণ মামলার ২ নাম্বার আসামি তারেক ইসলাম তারেক শেষ পর্যন্ত পালিয়ে রক্ষা পায়নি। ঘটনার ৪ দিনের মাথায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের চাঞ্চল্যকর এই মামলায় এজাহারনামীয় ৬ আসামিসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করলো সিলেট রেঞ্জ পুলিশ ও র্যাব। এদের মধ্যে সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মামলার এজহারভুক্ত আসামি। বাকি দুই জন অজ্ঞাতনামা আসামি এ মামলার।
জানা গেছে, ঘটনার রাতেই অভিযান চালিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের সাইফুর রহমানের রুম থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধারালো ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় অস্ত্র আইনেও একটি মামলা হয়।
সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষনের ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা আসামী ধরতে মাঠে নামলেও তারা ছিলো অধরা। শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই পুলিশ ও র্যাবের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এমনকি তাদের কয়েকজন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে দাঁড়ি, গোফ ও চুল পর্যন্ত কেটে চেহারায় পরিবর্তন এনেছিল। সবচেয়ে লম্বা দাঁড়ি ছিলো আসামি তারেকের। ৪ দিন পালিয়ে রইলেও আজ মঙ্গলবার সে রেহাই পায়নি র্যাববের হাত থেকে। সব কিছু কেটে সে চেয়ারায় পরিবর্তন আনলেও র্যাব কিন্তু তাকে ঠিকই শনাক্ত করতে পেরেছে। এছাড়া আসামি সাইফুরেরও দাঁড়ি ছিল অনেক লম্বা। কিন্তু সে প্রথমেই গ্রেফতার হয় ছাতক থানা পুলিশের হাতে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে পুলিশ ও র্যাব উভয়ের হাতে ৪ জন করে পাকড়াও হয়। সিলেটে এই ঘটনা ঘটলেও আসামিরা পালিয়ে ছিলো জেলার পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে। শুধু মাত্র আসামি মাহফুজকে সিলেটের হরিপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। বাদ-বাকি অন্যান্যরা গ্রেফতার হয়েছে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার কয়েকটি স্থান থেকে।