ধর্ষণ, হত্যা, বিচার ও শাস্তি এবং আমাদের বিবেক

মো: রেজাউল করিম মৃধা।। ধর্ষণ নিত্যদিনের ঘটনা। পেপার পত্রিকা খুললে টিভি কিম্বা ফেইসবুক খুললে প্রথমেই চোখে পড়বে হয় রোড এক্সিডেন্ট অথবা ধর্ষণের সেই পৈশাচিক ঘটনা। তবে দেখতে দেখতে অনেকটা চোখের পাতা আর পলক দিতে চায় না। ধর্ষণের পর হত্যা না হয় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে মারা অথবা এমনভাবে হুমকি দিবে মুখ যেনো বন্ধ থাকে আর না হলে কি হবে সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।ফেইসবুকে ছবি ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ভোগ করে যায় তারপর ও নিস্তার নেই শুধু যে মেয়েটি তা নয় পরিবারেও নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। ধর্ষনের পর হত্যা এটাও না হয় মেনেই নিলেন কিন্তু যখন পালাক্রমে ধর্ষণ কি শিশু কি যুবতী কি কয়েক সন্তানের মা । ভাইয়ের সামনে বোনকে, স্বামীর সামনে স্ত্রী কে, সন্তানের সামনে মা কে এটা কি মেনে নেওয়া যায়? যায় না। তবুও মুখবুজে সহ্য করে শুধু বেঁচে থাকার দাবিতে। তবে যখন দল বেঁধে পরিকল্পিত ভাবে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুরিয়ে হত্যা করা হয়, তখন কে সহ্য করবে বলুন?
একটি মেয়ে হয়ে জন্মগ্রহন করা কি তার অপরাধ? এই মেয়েটিই কখনো স্ত্রী, কখনো মা। এদের সম্মান জানাতে বিবেকে বাঁধে! বখাটে যুবক সুন্দরী মেয়েকে দেখলেই তার যৈবিক ক্ষুধা বেরে যায়, প্রথম বিয়ের প্রস্তাব রাজি না হলে বা কোন রাজনৈতিক দলের চামচা বা কর্মী তার স্বার্থসিদ্ধি করতে না পেরে দলবেঁধে ধর্ষণ করবে। এখানে কারো কিছু করার নেই।অনেকটা অলিখিত নিয়মে পরিনত হয়েছে।
কিন্তু যখন কোন সম্মানীত ব্যাক্তি, হুজুর কিম্বা শিক্ষক বা গুরুজন তার ঘরে স্ত্রী থাকা সত্ত্বে ও লালসা চরিতার্থ করার জন্য অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়।বিবেক সমাজ সব নিরব হয়ে যায়।থমকে যায় পৃথিবী। লজ্জায় মাথা নত হয়ে যায়।
পশুত্ব যাদের মনে আছে, তারা সবাই পশু।
মোল্লা হোক আর পুরোহিত হোক, হোক পাদ্রী,
এদের কাছে সম্মান ও স্থানের কোন মূল্য নেই।
যৈবিক ক্ষুধা মেটাতে শিশু , নারী রেহায় নেই।
দু:খ জনক হলেও সত্য আমাদের দেশে অনেক আইন আছে কিন্তু সঠিক প্রয়োগ নেই। মানুষ সঠিক বিচার পাচ্ছে না। যার ফলে অপরাধীদের সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। যদিও গত ১৮ এপ্রিল ২০১৯ চাপাইনবাবগন্জের আদালতে অতিরিক্ত দায়রা জজ মো: সওকত আলী ৫ বছর আগের প্রতিবন্ধী তরুনীর ধর্ষণের পর হত্যা মামলার রায়ে ৫ জন আসামী কে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন। শুধু রায় নয়। রায় কার্যকর করতে বলেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। দেখা যায় আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে চিহ্নিত আসামীরা বেকুসুর খালাস পেয়ে বুক ফুলিয়ে চলে। আর অপরাধীরাও অপরাধ করতে মরিয়া হয়ে উঠে।
যৌন হয়রানীর জন্য একটি পৃথক আরো কঠিন হতে পারে।সেটা দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নারী এ শিশু ধর্ষনের স্বীকার হচ্ছে , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, রাস্তাঘাটে, নির্জন পার্কে এমনকি বাসের ভিতরে ও হচ্ছে। হচ্ছে ট্রেনে, লন্চে , স্টিমারে জাহাজে কিম্বা উরোজাহাজে, কোথাও নিরাপদ নেই। যে হারে যৌন নির্যাতন বেড়েছে তাতে সবাই শংকার মধ্যে আছে। এ লজ্জ্বা থেকে বাঁচার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। মেয়ের ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে অপমান অপদস্ত হয়ে বিচার না পেয়ে বাবাও ট্রেনের নিচে পরে সমাজ কে বুঝিয়ে দেন। এখানে বিচার নেই হয় মুখ বুজে থাকো না হলে অাত্নহত্যা কর। কিন্তু সেই বাবার চিৎকার কি সরকার, কি সমাজ, আমাদের কাছে পৌঁছাতে আর কত সময় লাগবে?
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের কঠিন সাজা আছে এবং তার বাস্তবায়ন ও আছে। কোথাও শিরোচ্ছেদ, কোথাও ফাঁসি, কোথাও যাবজীবন কারাদন্ড কোথাও ১০ বছর অথবা ৫ বছরের জেল। আমাদের দেশেও তো সাজা দেওয়ার আইন আছে তবে পার্থক্য শুধু প্রয়োগের। আইনের যথাযোগ্য প্রয়োগ ও বিচার সুনিশ্চিত হলে, সুফল অবশ্যই আসবে।
সর্বোপরি আমাদের বিবেক কে জাগরিত করতে হবে। যত দিন না এটা কে অন্যায় হিসেবে বোধ করতে না পারবে ততদিন এটা থেকে বের হয়ে আসা দুরহ হবে।আমাদের বিবেক জাগরিত হলে , অবশ্যই ধর্ষণ হত্যা হবে না।কখন সবাই শান্তিতে জীবন কাটাতে পারবেন।

লেখক : মোহাম্মদ রেজাউল করিম মৃধা। কমিউনিটি এডিটর, ব্রিটবাংলা২৪কম, সিনিয়র ক্যামেরনম্যান, চ্যানেল এস এবং ইভেন্ট সেক্রেটারী, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব।

Advertisement