এম সাখাওয়াত হোসেন :: নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের আলোচনার বিষয়ে গণমাধ্যমে যা জেনেছি, তা খুবই দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশনার থাকার সময় আমারও এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সে সময় অনেক অভিযোগ, অনেক অপ্রত্যাশিত শব্দ আমাদের কানে এসেছিল। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের সংলাপের রেকর্ডগুলো শুনলে বুঝবেন, কী ধরনের হুংকার আর গর্জন আমাদের শুনতে হয়েছিল। ওই সব হুংকারে আমরা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। আমাদের তো শুনতে হবে। আবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবস্থাও নিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনে গতকাল মঙ্গলবারের আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে বলতে পারি, রাজনীতিবিদদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের প্রত্যুত্তর দেওয়া সমীচীন হয়নি। বিশেষ করে, নির্বাচন যখন একেবারেই দোরগোড়ায়। এ সময় কমিশনের এ ধরনের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। হয়তো নানা জায়গা থেকে কমিশনের ওপর চাপ থাকতে পারে। এ ধরনের নাজুক সময়ে অত্যন্ত ধৈর্যশীল থাকতে হয়। আমাদের সময় বিএনপির বড় বড় নেতা এসে যখন হুমকি দিতেন, আমরা শুধু শুনে গেছি। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাইনি।
এ ছাড়া গত সোমবার নবাবগঞ্জে সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা হয়েছে, সেটা তো সত্যি। এসব ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হয়। প্রথম আলোতে দেখলাম, নাটোর–২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেছেন, যাঁরা নৌকায় ভোট দেবেন শুধু তাঁরাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন।
নির্বাচন কমিশন যদি শুরু থেকে অভিযোগ আমলে নিয়ে পদক্ষেপ নিত, তাহলে এ ধরনের পরিস্থিতি না–ও হতে পারত। কাজেই এ সময়ে এসে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল পদে যাঁরা আছেন, তাঁদের ধৈর্য হারালে চলবে না। তাঁরা যেহেতু বাংলাদেশেরই নাগরিক, কীভাবে আচরণ করতে হবে, সেটা তাঁদের জানা উচিত। আমাদের মতো দেশে নির্বাচন নিয়ে যেহেতু তুলকালাম ঘটে, সেখানে ধৈর্যশীল হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
যা–ই হোক, এত কিছুর পরও আশা করব, নির্বাচন কমিশন শক্ত উদ্যোগ নেবে। যদি না নেয়, তা হবে হতাশাব্যঞ্জক। আর নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশ থেকে ব্যর্থতার দায় কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ওপরই বর্তানো হবে। নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলবে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠতে পারে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি কি নির্বাচনে থাকবে? নির্বাচনে থাকা না–থাকার সিদ্ধান্ত বিএনপিকেই নিতে হবে। একজন নাগরিক হিসেবে বলতে পারি, বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পাল্লা আজ একদিকে হেলে পড়েছে। যত বিতর্কই থাকুক না কেন, শেষ পর্যন্ত বড় দুই দলের ওপর বাংলাদেশের গণতন্ত্র নির্ভর করে। প্রত্যেক বড় দলকেই মনে রাখতে হবে, দল কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, বরং জনগণের সম্পদ। শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করা তাই মোটেই সমীচীন মনে বলে করি না। কারণ, তাদের প্রার্থীরা তো মাঠে আছেন। তাঁরা এত দিন ধরে শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। শেষ মুহূর্তে সরে গেলে প্রার্থীদের বিশাল ক্ষতি হবে। হতাশার সৃষ্টি হবে। বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, সরকারি দল তাদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে। নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে গেলে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা থাকলে আইনি দিক থেকে তা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ হারাবে বিএনপি।
নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে বেশি কিছু অর্জনের সুযোগ নেই। বরং নির্বাচনে অংশ নিলে এর মধ্যে কোনো ব্যত্যয় থাকলে সেগুলো তুলে ধরা যাবে। সেটাও কম কথা নয়। কাজেই নির্বাচন বর্জন কোনো সমাধান হতে পারে না। লড়াইয়ের মাঠে একবার যখন কেউ নামে, সেখান থেকে তার পিছু হটার সুযোগ নেই।
আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়ার কারণে। কাজেই সংকট উত্তরণের দায়িত্বও বিএনপিকে নিতে হবে। সামনে যত বাধাই আসুক বিএনপিকে সেটা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।