প্রয়াত নেতাদের আদর্শ মাথায় রেখে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু জনগণের সংগঠন, সাজেদা চৌধুরীরর মতো অসংখ্য নিবেদিত নেতাকর্মী এই সংগঠনের হাল ধরেছেন বলেই চরম দুঃসময়ে এই সংগঠন দিক হারায়নি, নীতি আদর্শ নিয়ে এগিয়ে গেছে।
আশা করি আমাদের যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা প্রয়াত নেতাদের আদর্শটা মাথায় রেখেই এগিয়ে যাবেন, এটাই আমি চাই।রোববার (৩০ অক্টোবর) জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনে সংসদ উপনেতা মরহুম সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং সংসদ সদস্য শেখ এ্যানী রহমানের ওপর আনা শোক প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।স্পিকার এ সংক্রান্ত শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করলে জাতীয় সংসদ তা সর্বসন্মক্রমে গ্রহণ করে। পরে এক মিনিট নীরবতা ও দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের যে অবদান রেখে গেছেন তা ভুলার নয়। চরম দুর্দিনে দলের হাল ধরা ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন। বারবারই আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত এসেছে, পাকিস্তানের সময়, মুক্তিযুদ্ধের সময়। সাজেদা চৌধুরী নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিলেন যেমন, তেমনই মুক্তিযোদ্ধাদেরও সংগঠিত করেছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন।শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রামে যেমন তার অবদান রয়েছে। আমাদের জাতীয় জীবনেও অবদান রয়েছে তার। ১৫ আগস্টের পর তো আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর অকথ্য নির্যাতন নেমে আসে। সাজেদ চৌধুরীও এর শিকার। জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেফতার করে। তার অপারেশন হয়েছিল, গায়ে জ্বর ছিল এই অবস্থায় জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। মতিয়া চৌধুরীকেও গ্রেফতার করে। তিনিও অসুস্থ ছিলেন। তাদের ডিভিশনও দেননি। সাধারণ কয়েদির মতো জেলে ফেলে রাখেন। এ দেশের প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রামে সাজেদা চৌধুরী সবসময় সামনে থাকতেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দিল্লি গিয়েছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমরা তাকে ফুফু বলে ডাকতাম।তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান আইন করেছিল পার্টির রেজিস্ট্রেশনে কারও নাম দেওয়া যাবে না। কিন্তু এ ব্যাপারে সাজেদা চৌধুরী অটল ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু ছাড়া পার্টি হয় না। আমাদের দলের মধ্যেও কারও কারও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল। তিনি কিন্তু এ ব্যাপারে অটল ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল জিয়াউর রহমান, তাই এই আইন করেছিলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, আমি দেশে আসার পর তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সব কাজ তিনি সুচারুরূপে করতেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তাকে বন ও পরিবেশমন্ত্রী বানিয়েছিলাম। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হয়েছে এর অবদান সাজেদা চৌধুরীর। তিনি সুন্দরবনকে সাজিয়েছিলেন। তিনিও পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রায় দুই দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিবেশ ছিল। পঁচাত্তরের পর যে সংঘাত শুরু হয় সেই সংঘাতের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা ক্ষমতায় এসে শান্তি চুক্তি করি। এক হাজার আটশ অস্ত্রধারী আমার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে। কোথাও এটা দেখা যায় না। আমার প্রত্যেকটি কাজে তিনি সহযোগিতা করতেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সংবিধান সংশোধনেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন।ছাত্র রাজনীতি যখন করতাম তখন থেকেই তাকে চিনতাম। তিনি বেশি বয়সে লেখাপড়া করেন। তিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা। তাকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিত প্রাণ নেতাকে হারালো। তিনি চলে যাওয়াতে শুধু আওয়ামী লীগের নয় দেশেরও ক্ষতি হয়েছে। বয়স হয়েছে আমাদেরও চলে যেতে হবে। একে একে সবাই ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বয়স হয়ে গেছে যেতেই হবে। হয়তো আমিও একদিন চলে যাবো। তবে যে যেটা করেছে আমাদের তো স্মরণ করতেই হবে।বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জিয়াউর রহমানের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার আমাদের আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী। শুধু আওয়ামী লীগ কেন, আমাদের বিরোধী দলের যারা আছেন বিরোধী দলের নেতা যিনি রওশন এরশাদ, জেনারেল এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু থেকে যারাই আছে, তারা কিন্তু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সাজেদা চৌধুরী বা মতিয়া চৌধুরীকে গ্রেফতার করে জিয়াউর রহমান ডিভিশন না দিয়ে ফেলে রেখেছে, ঠিক খালেদা জিয়া একই কাজ করেছিল। রওশন এরশাদ তিনি তো মাস্টার্স ডিগ্রি পাস। প্যানেল কোডে আছে মাস্টার ডিগ্রি পাস হলে ডিভিশন দিতে হয়। সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে তাকে ফেলে রেখেছিল। একদম সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো তাও খালেদা জিয়াকে অসুস্থ বলে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছি। একটা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা করা, একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ। খালেদা জিয়া কিন্তু সেটা করেননি। বিমান বাহিনীর প্রধান জামাল উদ্দিন। তাকে গ্রেফতার করে তার নামে একটা ঘড়ি চুরির মামলা দিয়ে কোনো ডিভিশন না দিয়ে মাত্র দুটি কম্বল দিয়ে তাকে জেল খানায় পাঠিয়েছিলেন। এইভাবে মানুষকে তারা অত্যাচার করেছে নির্যাতন করেছে।আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, জাতীয় পার্টি বোধ হয় সেই নির্যাতনের কথা ভুলেই গেছে এখন। ভুলে গেছে অনেকে সেটা। আওয়ামী লীগ তো সবার আগে নির্যাতিত। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, জেনারেল এরশাদ সবাই নির্যাতন করেছে। সাজেদা চৌধুরীর মতো অসংখ্য নিবেদিত নেতাকর্মীরা দলের হাল ধরে ছিল বলেই এই সংগঠন নীতি আদর্শ হারায়নি। নীতি আদর্শ নিয়ে এগিয়ে গেছেন। আশা করি আমাদের নেতারা প্রয়াত নেতাদের আদর্শ অনুসরণ করেই সংগঠন করবে।