পম্পেওর ঘোষণা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক : মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে নির্মাণ করা ইসরাইলি সকল স্থাপনাই অবৈধ। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র একে সরাসরি অবৈধ না বললেও এ ক্ষেত্রে বেআইনি শব্দটি ব্যবহার করতো। তবে এবার আর রাখঢাক না রেখে সরাসরি একে বৈধ বলে দাবি করলো দেশটি। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ঘোষণা করেছেন, পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতিকে আর আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিহীন হিসেবে বিবেচনা করবে না যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুধু যুগের পর যুগ ইসরাইলি দস্যুতাকে স্বীকৃতিই দেয়া হলো না, একইসঙ্গে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে আরো বসতি স্থাপনে উৎসাহিত করা হলো। এতে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে যে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আশা ছিলো তাও আস্তে আস্তে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। পম্পেওর এই ঘোষণাকে বিবেচনা করা যেতে পারে, এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হিসেবে।

তবে পম্পেও বিবৃতি প্রকাশের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ইসরাইলি অবৈধ বসতি প্রসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি আরেকটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ১৯৬৭ সালে দখল করা ভুমিতে ইসরাইলি বসতিকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এই ইস্যুতে জোটটি তার পূর্বেকার অবস্থায়ই রয়েছে। পম্পেওর ঘোষণার পর তাৎক্ষনিকভাবে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিন। সেখানকার মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এর নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনাহ এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান পরিবর্তনকে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, এ ধরনের রেজ্যুলেশন বাতিলের কোনো অধিকার ওয়াশিংটনের নেই।
পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে গড়ে ওঠা সকল ইসরাইলি স্থাপনাকে অবৈধ ঘোষণা করে জাতিসংঘে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা পাশ হয়েছে। যার মধ্যে ২০১৬ সালে পাশ হওয়া এক প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ইসরাইলের এমন আচরণ ৪র্থ জেনেভা কনভেনশন পরিপন্থী। এরমধ্য দিয়ে ইসরাইলকে দখলদারি শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বলা হয়, দখলদারি দেশটি তার শক্তি ব্যবহার করে অন্যের ভুমিতে নিজের জনগণকে আবাসনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন ছাড়াও এ ধরনের অবৈধ বসতি স্থাপনকে নানা সময়ে ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনার সব থেকে বড় বাঁধা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন পর্যবেক্ষকরা।

পম্পেও তার ঘোষণায় বলেছেন, বর্তমান ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আর ১৯৭৮ সালে জিমি কার্টারের প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত নীতি মেনে চলবে না। ওইসময়ই প্রথম ইসরাইলের এই বসতি স্থাপনকে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিহীন আখ্যা দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসরাইলকে নানাভাবে রক্ষা করে আসলেও প্রকাশ্যে পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকে ‘বেআইনি’ হিসেবে বিবেচনা করে আসছিলো যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও ২০১৬ সালের শেষের দিকে ইসরাইলের অবৈধ বসতি নির্মাণ বন্ধে জাতিসংঘের এক প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরাইলের প্রতি নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট করতে শুরু করেন। ইসরাইলের জন্য নতুন নতুন উপহারের ব্যবস্থা করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন।

এর শুরু হয় ২০১৭ সালে। সে বছর ট্রাম্প প্রশাসন জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর পরের বছরই আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরিত করে জেরুজালেমে নিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী করার যে স্বপ্ন ফিলিস্তিনিরা দেখে আসছিলো তা আরো কঠিন করে তোলা হলো। এরপর এ বছরের মার্চ মাসে ইসরাইল কর্তৃক সিরিয়ার গোলান উপত্যকা দখলকে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ ভুমির ওপর ইসরাইলের অধিকারের স্বীকৃতিকে ধরা হয় যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে নেতানিয়াহুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপহার হিসেবে। বাকি ছিলো ফিলিস্তিনি ভুমিতে ইসরাইলি বসতি স্থাপন ইস্যু। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরাইল। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে সেখানে বসতি স্থাপন করে আসছে দেশটি। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দখলকৃত এই এলাকায় বসতি স্থাপন অবৈধ। গত সোমবার সেখানে নির্মিত ইসরাইলি বসতিকে ‘বৈধ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া নিঃসন্দেহে ইসরাইলকে দেয়া ট্রাম্প প্রশাসনের সবথেকে বড় উপহার।

Advertisement