ব্রিট বাংলা ডেস্ক : মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে একে অপরের ওপর পালটাপালটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন। শিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের কারণে সোমবার চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ।
দেশটির এক নিরাপত্তা পরিচালকসহ চার শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন এর মন্ত্রীরা।
এর পালটা প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইউরোপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কালো তালিকাভুক্ত করেছে বেইজিং। খবর রয়টার্সের।
চলতি সপ্তাহে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মানবাধিকার নিপীড়নে যুক্ত চীনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে একমত হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জোটটির দুই কূটনীতিক জানান, ১৯৮৯ সালের পর বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে এটাই প্রথম নিষেধাজ্ঞা।
ওই বছর তিয়েনমেন স্কয়ারে অভিযানের পর চীনের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার চীন। ১৯৮৯ সালে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে আরোপ করা ইউরোপের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে।
এছাড়াও দীর্ঘদিন থেকে চীনের কাঠামোগত মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা হরণের উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে ব্রাসেলস।
ওই উদ্বেগ থেকেই তিন দশকের বেশি সময় পর চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
রয়টার্স জানায়, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত এসব চীনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেশটির উইঘুর মুসলিম সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার হরণের অভিযোগ রয়েছে। এক ইইউ কূটনীতিক বলেন এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসকারী উইঘুরদের নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে।
মানবাধিকার অ্যাকটিভিস্ট ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমাঞ্চলের দুর্গম শিনজিয়াংয়ের আটক শিবিরে রয়েছে অন্তত ১০ লাখ উইঘুর। অ্যাকটিভিস্ট এবং পশ্চিমা রাজনীতিবিদদের অভিযোগ, চীন সেখানে নির্যাতন, জোরপূর্বক শ্রম শোষণ এবং বন্ধ্যত্বকরণ চালাচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের চীনা দূতাবাসের এক টুইটার বার্তায় বলা হয়েছে, নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজেদের নীতি বদলাবে না বেইজিং। টুইটবার্তায় বলা হয়, নিষেধাজ্ঞা সাংঘর্ষিক। আমরা আলোচনা চাই, সংঘাত নয়। আমরা ইইউ পক্ষকে দ্বিতীয়বার ভাবতে বলব। কেউ যদি সংঘাতের ওপর জোর দেয়, আমরা পিছু হটব না।
কারণ, জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের কোনো বিকল্প আমাদের নেই।’ চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় ১০ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন। এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, এ বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
রোববার ১৭টি গণমাধ্যমে সেটি প্রকাশিত হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসকে (আইসিআইজে) এই নির্দেশনাটি দিয়েছে।
বন্দিদের কেউ যেন পালাতে না পারেন, সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই তাদের নজরে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ক্যাম্প কর্মীদের। এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তাদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে।
এছাড়া নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ, ডাবল লক দরজা, অ্যালার্ম ও প্রবেশ দরজাসহ সব জায়গায় ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীন। দেশটির সরকারের দাবি, এসব ক্যাম্পে মুসলমানরা স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ নিতে যান।
কিন্তু প্রকাশিত নির্দেশনা বলছে, ক্যাম্পে বন্দিদের প্রথমে আদর্শ ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়। এরপর অন্য জায়গায় তাদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।