পি সি আর টেষ্ট বাতিল সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান: সরকারের করণীয় কি?

Dr. Zaki Rezwana Anwar FRSA

বৃটিশ সরকার ‘International Covid Travel Restrictions’ এর বেশ কিছু বিষয় শিথিল করেছে। এতে বহু বাংলাদেশী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন, কারণ তাদের আর  বাংলাদেশ থেকে বৃটেনে আসলে ১০ দিনের জন্যে হোটেলের ভাড়া গুনতে হবে না। তবে স্কুলের আসন্ন হাফ টার্ম হলিডেতে পর্যটন শিল্পকে চাঙা করার জন্যেই মূলত সাজিদ জাভিদ এ মুহূর্তে পি সি আর টেষ্ট বাতিলের পক্ষে জোর অবস্থান নিয়েছেন।
এখনকার পরিস্থিতিতে কয়েকটি জরুরী বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে। প্রথমত: এটাই হচ্ছে বৃটেনের প্রথম শীত যেখানে আমরা ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্ট নিয়ে শীত শুর করছি। দ্বিতীয়ত: এখনো পাঁচ মিলিয়ন বৃটেনবাসী ভ্যাকসিন গ্রহণ করেনি। তৃতীয়ত: আমাদের এই শীতে থাকবে পঞ্চাশ হাজার ডাক্তারের ঘাটতি। চতুর্থত: গত দেড় বছরে আমরা এমনভাবে হাত মুখ ধুয়েছি, মাস্ক পরেছি যে গত শীতে ফ্লু-কে আমরা ঝেঁটিয়ে দূরে পাঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলাম। কয়েকজন ব্যতিক্রম ছাড়া গণহারে আমরা সচেতনভাবে সেইসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যেসগুলো হারিয়েই ফেলেছি।
আমরা জানি পি সি আর টেষ্টের মাধ্যমে আমরা জিনম সিকোয়েন্সিং করতে পারি অর্থাৎ কোনো নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসল কি না তা দেখতে পারি যা Rapid Antigen Test বা Lateral Flow Test থেকে জানা যায় না। দুটো বিশেষ ক্ষেত্রে পি সি আর টেষ্ট জরুরী জিনম সিকোয়েন্সিঙের জন্যে। প্রথমটি হচ্ছে, ভ্যাক্সিন নিয়েছেন এমন কেউ যদি হাসপাতালে ভর্তি হন তাদের ক্ষেত্রে । কারণ আমাদের দেখা প্রয়োজন ঐ ব্যক্তির দেহে কি এমন কোনো ভ্যারিয়েন্ট ঢুকেছে কি না যা ভ্যাক্সিনকে পাশ কাটিয়েও মানুষের ক্ষতি করতে পারে। দ্বিতীয়ত আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে আগত কারোর মাধ্যমে নতুন বা ভয়ঙ্কর কোনো ভ্যারিয়েন্ট  বৃটেনে ঢুকে পড়ল কি না। ভেবে দেখুন, বৃটেন যদি জিনম সিকোয়েন্সিঙের মাধ্যমে আলফা ভ্যারিয়েন্টের কথা বিশ্ব বিজ্ঞানীদের না জানাতো তাহলে বৃটেন কেন সমস্ত পৃথিবীতে আরো অসংখ্য জীবন ঝরে পড়ত। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মধ্যে পি সি আর টেষ্ট করার মাধ্যমেই আমরা জানতে পেরেছি যে বৃটেনে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ও বিটা ঢুকে পড়েছিল।
ভ্যাক্সিন কার্যক্রমে বৃটেনের সফলতা বিশ্ব জুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা বুষ্টার ডোজও শুরু করেছি। এ অবস্থায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয় যার ফলে আমাদের ভ্যাক্সিন কার্যক্রমের সফলতাকে নষ্ট করার কিছুটা হলেও সম্ভাবনা থাকে। তাই আমি মনে করি শীতটা পার করে বা অন্তত কয়েকটা মাস পরে পি সি  আর টেষ্টের সিদ্ধান্তটি নিলে যুক্তিযুক্ত হত।
তাহলে কি আমি বলছি যে ভ্রমণকারীগণকে অনেক অর্থ ব্যয় করে পি সি আর টেষ্ট করাতে হবে যেখানে তাঁরা অনেক কম খরচে Lateral Flow Test করাতে পারেন?  মোটেই তা নয়। বেসরকারি কোম্পানীগুলোর কাছে গিয়ে ভ্রমণকারীদের যেন চড়া দামে টেষ্ট করাতে না হয় সেজন্যে সরকারের আগামী কয়েক মাসের জন্যে বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়ে কম দামে ভ্রমণকারীদের পি সি আর টেষ্ট করাবার একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা করতে পারাটা অসম্ভব বা কঠিন কিছু নয়। সরকার ইতোমধ্যেই Collinson ও Randox এর সাথে যৌথভাবে কাজ করে হিথরো ও গ্যাটউইক বিমান বন্দরে তুলনামূলকভাবে কম খরচে পি সি আর টেষ্টের ব্যবস্থা করেছে। এ রকম আরও কিছু কম্পানীর কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করে ভ্রমণকারীদের কম খরচে পি সি আর টেষ্টের ব্যবস্থা করা যেতে পারে এবং এটা করতে হবে শুধুমাত্র শীত বা বৃটেনে ফ্লু মৌসুমের সময়ের জন্যে।
 কম খরচে ভ্রমণকারীদের পি সি আর টেষ্ট চালু রাখার পাশাপাশি একই household এর নয় ইনডোরে এমন লোকজনের সমাগমে প্ল্যান ‘বি’ তে তুলে না রেখে মাস্ক পরার বিষয়টি এক্ষুণি বাধ্যতামূলক করা উচিত – এতে অর্থনীতির চাকা থেমে থাকবে না। সেই সাথে বৃটেনে যে এখনো পাঁচ মিলিয়ন মানুষ ভ্যাক্সিন দেয় নি তাদের ভ্যাক্সিনের আওতায় আনতে হবে।
অবশ্য স্কাই টিভির সাক্ষাৎকারে সাজিদ জাভিদ যখন বলেন কোভিড শুধু ‘ষ্ট্রেন্জার’ -এর কাছ থেকে আসে তখন স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে তিনি কি আসলেই মনেপ্রাণে বৃটেনের হেলথ সেক্রেটারি হতে পেরেছেন নাকি এখনো নিজেকে জেপি মরগ্যানের উপদেষ্টা হিসেবে গণ্য করছেন?
___________________________
লেখক : একজন মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ, সংবাদ পাঠক ও কলামিস্ট।
Advertisement