এসব কথা বলে বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বৃদ্ধা বাবা দেলোয়ার হোসেন। কিভাবে এসব অবুঝ সন্তানদের নিয়ে চলবে তার সংসার। ছেলেকে হারিয়ে এখন দিশাহারা। তার দাবি, ট্রলারে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার ও ইঞ্জিনের কোন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু ট্রলারে রহস্যজনক বিস্ফোরণে এত লোকের প্রাণহানি কোনভাবে মেনে নিতে পারছেন না তিনি। পরিকল্পিতভাবে ট্রলারে বোমা রেখে এ হত্যাকা- ঘটনা হয়েছে। তদন্ত করে বিচার দাবি করেন তিনি।
একই চিত্র দেখা গেছে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত জেলেরা হলেনÑ রিপন হোসেন, আবুল কাশেম, মিলন উল্যাহ, বেলাল হোসেন ও মেহেরাজ হোসেন। এছাড়া শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকা ৬ জেলে পরিবারের মাঝে। স্বজনরা জানিয়েছে, তাদের শরীরের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশই পুড়ে গেছে। সব স্বপ্ন শেষ। ৬দিনে মারা গেছে ৬ জন। সবশেষ বুধবারে রাতে মারা যায় মিরাজ হোসেন। নিহতদের খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় জুড়ে দেখা দেয় শোকের ছায়া। পরিবারের চলছে শোকের মাতম।
স্থানীয় এলাকাবাসী ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকা- বলে দাবি করে এ প্রতিবেদককে জানান, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ট্রলার মালিকের বিচারের দাবি করেন স্থানীয়রা। একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তিদের হারিয়ে দিশাহারা এ পরিবারগুলোর পাশে সবাইকে দাঁড়ানোর আহবান করেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা নিয়ে জাল-নৌকা নিয়েছেন। এখন কিভাবে এসব এনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধ করবে, সেটাও নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তবে জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলছেন, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। হতাহতের পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে বাসস্থানের ব্যবস্থার আশ^াস দেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২৮শে ফেব্রুয়ারি ভোররাতে কক্সবাজার উপকূলের বঙ্গোপসাগরে ২১ জন জেলে নিয়ে মাছ শিকার করছিলেন তারা। হঠাৎ ট্রলারে তিনটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ১২ জন জেলে অগ্নিদগ্ধ সহ ২১ জন আহত হয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ১২ জনকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’ তাদের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসে। গত ২ মার্চ ১২ জেলেকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে। পাশাপাশি রোগীদের সেবায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত, চিকিৎসা ও খরচের অর্থ সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এ সংগঠনটি। এর কয়েকদিন আগে লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে কক্সবাজার উপকূল সাগরে মাছ ধরতে যান এসব জেলে।