খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোট নেওয়া হচ্ছে ইভিএমে।এ ছাড়া প্রতিটি ভোটকক্ষে থাকছে সিসিটিভির নজরদারি। এ জন্য দুই সিটিতে মোট তিন হাজার ৪৫৬টি সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকায় নির্বাচন ভবন থেকে নির্বাচন কমিশনাররা সিসিটিভির মাধ্যমে ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দ্বিতীয় ধাপের সিটি নির্বাচন আজ।গত ২৫ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এ দুই সিটিতেও বহাল। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে প্রার্থী, ভোটার সবাই সন্তুষ্ট।মেয়র পদে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাসের কারণে দেশবাসীর বেশি নজর বরিশালে। ক্ষমতাসীন দল থেকে এবার প্রার্থী পরিবর্তন করায় এবং নির্বাচনী পরিবেশ ভালো থাকায় বরিশালে ভোটার উপস্থিতি ভালো হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।খুলনায় মূল চ্যালেঞ্জ ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ সিটিতে মেয়র পদে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস নেই।ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এ সিটিতে কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা দলের সবার জন্য উন্মুক্ত রাখে। সে কারণে কাউন্সিলর পদে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান (অব.) গতকাল রবিবার বলেছেন, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন গাজীপুরের নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে অতীতের চেয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধের জন্য চেকপোস্ট করা হয়েছে।এ নির্বাচনে দুই সিটিতেই অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা চারটি। দলগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টি। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যাঁরা কাউন্সিলর পদে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া দলটি তাঁদের সমর্থক ভোটারদেরও ভোটকেন্দ্রে যেতে বারণ করেছে।বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে নগরে ভোট উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেয়র পদে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আভাস মিলেছে। প্রার্থী ও তাঁদের নির্বাচন পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, এবার ৫০ শতাংশের বেশি ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ভোটার দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। মেয়র পদে সাতজন, ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১৮ জন ও সংরক্ষিত ১০ নারী কাউন্সিলর পদে ৪২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।মেয়র পদে যে সাতজন লড়ছেন তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস, জাকের পার্টির মো. মিজানুর রহমান বাচ্চু এবং স্বতন্ত্র তিন প্রার্থী হলেন কামরুল আহসান রুপন, আলী হোসেন হাওলাদার ও মো. আসাদুজ্জামান।
স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক দশক পর নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডেই ভোট উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। ভোটারদের মাঝে দেখা গেছে বিপুল উৎসাহ। এমন উৎসাহের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, গত পাঁচ বছর সিটি এলাকার বাসিন্দারা নানাবিধ সমস্যায় ভুগেছে। বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে এবার মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সাদিকের চাচা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। রাজনীতি থেকে দূরে থাকা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ যিনি খোকন সেরনিয়াবাত নামে পরিচিত, তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ মানুষ নির্বাচনকে ঘিরে আগ্রহী হয়েছে। বিগত দিনের ভোগান্তি লাঘবের আশায় তারা এ নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। অনেকের মতে, মেয়র প্রার্থী পরিবর্তন করায় বরিশালে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ অনেকটাই এগিয়ে গেছে।এ ছাড়া আগের সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে ভোটের আগেই নানা ধরনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ত। সংঘর্ষ ও সংঘাতের ঘটনাও ঘটত। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রচার চালাতে পেরেছেন। কোথাও সংঘর্ষ ঘটেনি। প্রতিদ্বন্দ্বীদের পোস্টার, ব্যানার পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে নগরজুড়ে। এমন নির্বাচনী পরিবেশে ভোটারদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ বেড়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনায় সম্পৃক্ত দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছি। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা কোনো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেননি। সবাই নির্বিঘ্নে প্রচার চালিয়েছেন। এমন পরিবেশের কারণেই বরিশালে একটি ভোট-উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে।নির্বাচনী মাঠে সরব উপস্থিতি জানান দিয়ে আলোচনায় রয়েছেন হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। তাঁর পক্ষে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মাঠে কাজ করছিলেন। ভোটের আগের দিন গতকাল নির্বাচনী মাঠে তাঁদের তেমন উপস্থিতি চোখে পড়েনি।বরিশাল জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নগরের বাইরে দুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন ইসলামী আন্দোলনের নেতারা। তাঁদের অনেক নেতাকর্মী এত দিন সিটি করপোরেশন এলাকায় এসে হাতপাখার ভোট চেয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে তাঁরা এখন সিটি এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন না। ফলে এখন তাঁদের উপস্থিতি কমেছে।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘আমি বিজয়ী হলে বরিশালের উন্নয়ন করার নিশ্চয়তা দিয়েছি। যার কারণে জনগণ আমাকে ভোট দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিএনপির সমর্থকরাও মনে করছে আমি জিতলে নগরবাসী সেবা পাবেন। দল-মত-নির্বিশেষে সব মানুষ আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবেন।জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাকে অনেকে বলেছেন, ভাই, ভোটটা কি দিতে পারব না? তাই আমি সরকারের কাছে, আওয়ামী লীগের কাছে, আমার দলের কাছে, সিইসির কাছে অনুরোধ করছি, তারা যেন বরিশালের মানুষের সঙ্গে অন্যায় আচরণ না করেন।’
তাপস ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, সরকার যদি অন্যায় আচরণ করে, তাহলে রাজপথে প্রতিবাদ করব। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে তিনি কালোটাকা ছড়ানো, বহিরাগতদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন।সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আজ ভোট দিতে বরিশালে আসবেন না। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানও ভোট দিতে বিরত থাকবেন বলে জানা গেছে।আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত নগরের কালীবাড়ি রোডস্থ সরকারি বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শহরের বরিশাল নগরের রূপাতলী হাউজিং আব্দুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস শহরের গোরস্তান রোডের সৈয়দ আব্দুল মান্নান ডিডিএফ আলিম মাদরাসা কেন্দ্রে এবং জাকের পার্টির মো. মিজানুর রহমান বাচ্চু ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে কামরুল আহসান রুপন শহরের কালুশাহ সড়কের আলেকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, মো. আলী হোসেন হাওলাদার শহরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর ইস্কান্দার শরীফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মো. আসাদুজ্জামান বরিশাল নগরের সদর রোডের সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন।
খুলনা
খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক, জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আ. আউয়াল ও জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন এস এম শফিকুর রহমান।বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক হিসেবে পরিচিত ১০ জন প্রার্থীও কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। এ সিটির মোট ভোটার পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার দুই লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ এবং পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন। ভোটকেন্দ্র ২৮৯টি এবং ভোটকক্ষ এক হাজার ৭৩২টি।