বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরাইল ছাড়া সব দেশে ভ্রমণ করা যাবে’ কথাটি বাদ পড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ তার নাগরিকদের পাসপোর্ট আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেবে।
রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে পাসপোর্টের বিষয়টি নিয়ে ফোনে কথা বলেন। এরপর গণমাধ্যমকে ফিলিস্তিনি দূত জানান, তিনি অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন। এ সময় অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতকে আবারও আশ্বস্ত করেন যে, বাংলাদেশের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন অটুট আছে এবং থাকবে।ইউসুফ রামাদান বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ফিলিস্তিনের সম্পর্ক সেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল থেকে। তবে পাসপোর্ট নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তের খবর আমাকে অত্যন্ত মর্মাহত করেছে।’ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টে পরিবর্তনের প্রসঙ্গটি এমন এক সময়ে এল, যখন গাজা ও এর আশপাশের এলাকায় নৃশংসতা অব্যাহত রয়েছে। এটা হওয়া উচিত ছিল না। কারণ, ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর হাতে লেগে থাকা ফিলিস্তিনি শিশুদের রক্ত এখনো শুকায়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টের এই পরিবর্তন তো ইসরাইলের জন্য উপহার। খুশি হয়েই তো ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুইট করেছে। এই সিদ্ধান্তে ভুল বার্তা গেছে।বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে বলে আশা প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা বাংলাদেশই নেবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, মাস ছয়েক আগে বাংলাদেশ সরকার ই-পাসপোর্ট থেকে ইসরাইল প্রসঙ্গটি বাদ দেয়। যদিও সরকার বলছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের ইসরাইল ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। এই পরিবর্তন করা হয়েছে পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মানের স্বার্থে। পাসপোর্টে পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তার সঙ্গে একমত নন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানের যে কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। তাহলে কি বাংলাদেশ ৫০ বছর ধরে পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখেনি?বৈশ্বিক মানদণ্ডে মালয়েশিয়ার মতো দেশের পাসপোর্টের অবস্থান ২০তম উল্লেখ করে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, মালয়েশিয়ার পাসপোর্টে তো এখনো ইসরাইলে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি আছে। তাহলে সে দেশের পাসপোর্টের মান এত ওপরে উঠল কীভাবে?
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের পাসপোর্টের এই পরিবর্তনের পেছনে কী ছিল, আমার জানা নেই। তবে অনুমান করি, গুটিকয় লোক এই কাজ করেছেন।’পাসপোর্টের এই পরিবর্তন নিয়ে রাষ্ট্রদূত দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আলোচনা করতে চান বলেও উল্লেখ করেন।দেশের পাসপোর্টে পরিবর্তনের বিষয়টি কয়েক দিন আগে সামনে আসে। এরপর ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপমহাপরিচালক গিলাদ কোহেন গত শনিবার একটি টুইট করেন। তিনি টুইটে লেখেন, ‘দারুণ খবর! ইসরাইল ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের সরকারকে তাই ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আহ্বান জানাই। এতে দুই দেশের জনগণ উপকৃত হবে এবং সমৃদ্ধি লাভ হবে।এর পরদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই পরিবর্তনে ইসরাইলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পরিবর্তনের কিছু নেই। কারণ, আমরা তো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিই না।’ একই দিন বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরাইল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ আছে এবং ইসরাইলের প্রতি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অবস্থানের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি।