বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে মিয়ানমারের স্থলভাগে ‘মোখা’

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করার সময় উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সামান্য দুর্বল হয়েছে। এটি রোববার বেলা তিনটার দিকে কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করে মিয়ানমারের স্থলভাগের ওপর অবস্থান করে।অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মিয়ানমারের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির সেনাবহিনীর প্রকাশ করা ছবিতে দেখা গেছে রাখাইন রাজ্যের থানদউয়ে বিমানবন্দরে একটি ভবন ধসে পড়েছে। সেখানকার বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার ভেঙ্গে পড়েছে। খবর বিবিসি।এছাড়া প্রবল ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে পানির প্রবাহ, ইতিমধ্যে সিতওয়েতে হাঁটু পানি জমে গেছে। বাসিন্দারা জরুরি সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষের দেওয়া বিভিন্ন নম্বরে।মিয়ানমারে বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, দুপুর ১২টার পর থেকেই বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়া বাড়তে শুরু করে।এর প্রভাবে বিভিন্ন জায়গায় বসতবাড়ি বিশেষ করে টিনের বাড়িঘর এবং অস্থায়ী আবাস ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। অনেক বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে ঝড়ে। এছাড়া দেশটির বিভিন্ন জায়গায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই, ওয়াইফাই সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইন্টারনেট সংযোগের জন্য এখন শুধু মোবাইল ডাটাই কাজ করছে মিয়ানমারে।মিয়ানমারের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার বিকেলে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র সিতওয়ে উপকূল অতিক্রম করে যাবে এবং ঝড়ের প্রভাব ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

এর আগে দুপুরে দেশটির আবহাওয়া পূর্বাভাসে মোখাকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসাবে বাদামী বা ‘ব্রাউন’ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশটি আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩৭ মাইলের মতো।রোববার সকালে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি রাখাইন উপকূলে আঘাত হানে, সকাল থেকেই সেখানে দমকা হাওয়াসহ থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।এই রাজ্যের ৭টি শহরকে ইতিমধ্যে বিপদজনক ‘লাল’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ মাইল রেকর্ড করা হয়েছে।রাখাইন রাজ্যের রাসায়ে পর্বতের একজন বাসিন্দা সকালে বিবিসিকে বলেন, ‘পুরো রাসায়ে পর্বতের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা সবাই শহরে চলে গেছেন। গ্রামে বৃষ্টি তেমন নেই। তবে অনেক বাতাস বইছে।এছাড়া সিতওয়ে শহরে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে যেতে শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রবল বাতাসে পুরনো গাছ মাটিতে আছড়ে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঠের ঘরবাড়ি।সিতওয়ের একজন বাসিন্দা বিবিসিকে বলেছেন, ‘হাঁটতে গিয়ে মনে হচ্ছে বাতাস আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।’ এরমধ্যে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সিতওয়ের বিভিন্ন এলাকা। প্রবল বাতাসে টেলিকম টাওয়ার ধসে পড়তে দেখা যায়।এতে সিতওয়ের ইন্টারনেট সংযোগ ও টেলিফোন লাইন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।রাস্তাঘাটে কোনো মানুষজন নেই। হাতে গোনা কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মীদের লাইফ ভেস্ট পরে মোটর সাইকেল চালাতে দেখা গিয়েছে।

দেশটির দুর্যোগপ্রবন এলাকাগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ আশেপাশের শহরে আশ্রয় নিয়েছে। সকাল থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মিয়াকু শহরে টহল দিচ্ছে সামরিক বাহিনী।সকালে দেশটির আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি রাখাইন উপকূল থেকে উত্তর পূর্বের চিন রাজ্য, ম্যাগওয়ে ও সাগাইং এবং কাচিন পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে।এ সময় সাগাইং, মান্দালে, ইরাবতি এবং চিন রাজ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৭০ থেকে ৯০ মাইল এবং নেপিদো, বোগো, ইয়াঙ্গুন এবং কাচিন শান এবং কায়াহ অঞ্চলে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ মাইল হতে পারে।এদিকে, মোখায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে মিয়ানমারে কর্তব্যরত জাতিসংঘ।ইতিমধ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিচু এলাকাগুলো থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই এলাকার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ আগে থেকেই দারিদ্র্য ও সংঘাত সহিংসতার কারণে মানবিক সহায়তার ওপর টিকে আছে।ফলে এই মানুষগুলোর ওপর ঘূর্ণিঝড় মোখা মরার ওপর খাড়ার ঘা এর মতো দেখা দিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। সংস্থাটির আশঙ্কা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত, ভূমিধস এবং বন্যা দেখা দিতে পারে।তবে জরুরি ত্রাণের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জরুরি তহবিলের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে।

Advertisement