ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: বিএনপি যখনই নির্বাচনে হেরে যায় তখন তাদের আচরণ ‘নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা’র মতো অভিযোগ উপস্থাপন করে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বুধবার বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে করা অভিযোগও সেরকম ছিল। তারা সবসময় প্রযুক্তিকে ভয় পায়।’
বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
তথ্যমন্ত্রী বিএনপিকে এ ধরণের আজগুবি অভিযোগ উপস্থাপন না করে বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের নেতাকর্মীরা কেন আপনাদের কাছ থেকে সরে গেছেন এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন ভোটের দিন মাঠে ছিলনা সেই বিশ্লেষণ করুন। তাহলে আপনাদের দল উপকৃত হবে।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ঢাকা সিটি নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার পর দেখলাম দুই মেয়র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তারা কিছু আজগুবি অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন। তারা বলেছেন-ইভিএম মেশিনে নাকি রাত পর্যন্ত ভোট দেওয়া হয়। ইভিএম মেশিনে যদি এমন সুযোগ থাকতো তাহলে ভোট গ্রহণের হার ২৫ শতাংশ থাকতো না, ৬০ শতাংশের উপরে যেত। ইভিএম মেশিন নিজেই সব দলের জন্য পোলিং এজেন্টের কাজ করেন। কারো যদি আঙ্গুলের চাপ না মিলে কোনভাবেই ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। এমনকি সিইসিকেও আঙ্গুলের চাপ না মেলায় ভোট দিতে অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দ্বিগুণ ভোট পেয়ে যখন জয়ী হয়েছে তখনতো বিএনপিকে নানা ধরণের অভিযোগ উপস্থাপন করতে হবে। সেটাই তারা করেছে।’
ঢাকা দক্ষিণের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করতে চারটা পর্যন্ত সময় কেন লাগলো? বিএনপির এমন অভিযোগের ব্যাপারে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা তো বিএনপির মতো গোঁজামিল দিয়ে নির্বাচন শেষ হবার দু’ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করিনি। সঠিক ফলাফল ঘোষণার জন্যেই নির্বাচন কমিশন সময় নিয়েছে। বিএনপির এসব অভিযোগ জনগণের কাছে নিজেদের হাস্যাস্পদ হিসেবে উপস্থাপন করছে। দেশের ইতিহাসে ঢাকা দুই সিটির নির্বাচন অন্যতম একটি ভালো নির্বাচন হয়েছে।’
বিএনপি সবসময় প্রযুক্তিকে ভয় পায় জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন প্রথম টেলিভিশন আসে তখন অনেকে বলেছে টেলিভিশন দেখলে ঈমান চলে যাবে। আবার যখন দেশে প্রথম মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু হয় তখনও গ্রামেগঞ্জে অনেকে প্রচারণা করেছে এটি ব্যবহার করা যাবেনা। এখন কিন্তু পবিত্র হজ্বের অনুষ্ঠান এবং বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাতও টেলিভিশনে লাইভ দেখানো হয়। বিএনপির অবস্থাও হয়েছে সেরকম। ইভিএম মেশিনেও ভোট দেওয়া যাবেনা বলে বিএনপি প্রচারণা চালাচ্ছে।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিল তখন বাংলাদেশে বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হলে তখন তিনি বলেছিলেন- এই সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে বাংলাদেশ যুক্ত হলে দেশের সব গোপন তথ্য চলে যাবে। আর সেই সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে আমরা পরে সংযুক্ত হয়েছি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে। সুতরাং বিএনপি সবসময় প্রযুক্তিকে ভয় পায় আর যখনই হেরে যায় তখন ‘নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা’র মতো অভিযোগ উপস্থাপন করে। বুধবারে তাদের সংবাদ সম্মেলনও সেই ভয়ের বহিঃপ্রকাশ।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি প্রথম থেকে বলে আসছে ঢাকা সিটির নির্বাচন হচ্ছে তাদের আন্দোলনের অংশ। তাদের আন্দোলন সম্পর্কে মানুষ জানে। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন বানচাল করার জন্য পাঁচশ ভোট কেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ভোটার ও নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারসহ অনেককে হত্যা করেছে। সুতরাং তারা যখন ঘোষণা দেয় এই নির্বাচন আন্দোলনের অংশ তখন মানুষ সেই হাঙ্গামার আশঙ্কায় করে। সেই কারণেই অনেকে ভোট কেন্দ্রে যায়নি। বিএনপি প্রথম থেকে ইভিএমের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা না চালালে এই উপস্থিতি আরো ৮ থেকে ১০ শতাংশ বেশি হতো।’
তথ্য মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা সিটি নির্বাচনে কোন কেন্দ্র দখল, বড় কোন হাঙ্গামা হয়নি, সিল মারার কোন ঘটনা ঘটেনি। অতীতে দেখেছি আমাদের দেশে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অনেক হাঙ্গামা, কেন্দ্র দখল ও মানুষ মারা যায়। ঢাকা সিটি করপোরেশনে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের ফলে এধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। শুধুমাত্র দেশের বিচারে নয় উপমহাদেশীয় মানদণ্ডেও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল অত্যন্ত ভালো একটি নির্বাচন।’
তিনি বলেন,‘কয়েকবছর আগে কলকাতা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছিল। সেখানে মেয়র পদে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র প্রার্থী ছিল রূপা গাঙ্গুলি, এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা তার স্টেজ ভেঙ্গে দিয়েছে। আর রূপা গাঙ্গুলিকে স্টেজ ছেড়ে পালিয়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ধাওয়া করে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এধরণের ঘটনা ঢাকা সিটি নির্বাচনে হয়নি। কলকাতা সিটি নির্বাচনের সময় ৭-৮জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। ৫৫ লাখ ভোটারের ঢাকা শহরে এত শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠান করার জন্যে নির্বাচন কমিশন ধন্যবাদ পাওয়ার অধিকার রাখে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যে সরকার সেটা আওয়ামী লীগের সরকার, সরকারের আওয়ামী লীগ নয়। আমাদের মূল ঠিকানা দল। আমরা যারা নির্বাচিত এমপি, মন্ত্রী থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবার মূল ঠিকানা হচ্ছে দল। সুতরাং দায়িত্ব পালন করার সময় দলকে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলের প্রতীকে হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হবার পর দলীয় কর্মীরা অনেকের কাছ থেকে দুরে সরে যায়। অনেকে আবার নিজস্ব বলয় তৈরি করেন। এটা কোনভাবেই সমীচীন নয়। নিজস্ব বলয় তৈরি করলে দেখা যাবে সংকটের সময় সেই বলয়ের লোকজন থাকবেনা। কারণ মৌচাকে যখন মধু থাকে তখন অনেক লোক ঘুর ঘুর করে। যখন মধু থাকেনা তখন কাউকে আর পাওয়া যায়না।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘৭৫’র পরে আমরা অনেক বছর ক্ষমতায় ছিলাম না। বুকে পাথর বেঁধে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। দল কিন্তু অনেক শক্তিশালী ছিল। দলের শক্তি বর্তমানের চেয়ে আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন কোন অংশে কম ছিলনা। আজকে পরপর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার কারণে আমাদের অনেকের মধ্যে আলস্য এসেছে। এই আলস্য ঝেড়ে ফেলতে হবে। দলে অনেক অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। এদের চিহ্নিত করে তারা যদি দলীয় পদে থাকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে। ২০১৪ সালের পর যারা পিঠ বাঁচানোর জন্যে অথবা ক্ষমতার সাথে থাকার জন্য আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে তাদেরকে দলীয় পদে দেওয়া যাবেনা।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকারসহ বিগত নির্বাচনগুলোতে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে তাদের সভাপতি সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা যাবেনা। দলীয় শৃঙ্খলা ছাড়া দলকে আমরা কোনভাবেই শক্তিশালী করতে পারব না।’
প্রতিনিধি সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন-সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিন্নাতুন নেছা তালুকদার, প্রফেসর মনছুর রহমান এমপি, সাবেক এমপি আকতার জাহান, কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, আয়েন উদ্দিন এমপি, এডভোকেট আদিবা আনজুম মিতা এমপি, এনামুল হক এমপি প্রমুখ। বিকালে একই ভেন্যুতে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।