মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্সকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্লে-অফের দৌঁড়ে টিকে থাকলো মাহমুদুল্লাহ-তামিমের মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। আজ টুর্নামেন্টের ২৫তম ও নিজেদের নবম ম্যাচে ঢাকা ৫ উইকেটে হারিয়েছে খুলনাকে।এই জয়ে ৯ খেলায় ৪টি করে জয়-হার ও ১টি ম্যাচে পরিত্যক্ত হওয়ায় ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থানে উঠলো ঢাকা। আর ৮ ম্যাচে ৪টি করে সমান জয়-হারে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে নেমে গেল খুলনা। এ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৯ রানের সংগ্রহ পায় খুলনা টাইগার্স। দলের পক্ষে ৫০ বলে সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা। জবাবে ৪ বল হাতে রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ঢাকা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঢাকার বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
চার পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায় ঢাকা। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়েন মাশরাফি বিন মর্তুজা, নাইম শেখ, এবাদত হোসেন ও আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শাহজাদ।বল হাতে ইনিংসের প্রথম ওভারেই খুলনার উইকেট তুলে নেন ঢাকার পেসার রুবেল হোসেন। আগের ম্যাচের হিরো সৌম্য সরকারকে ১ রানে শিকার করেন রুবেল। তিন নম্বরে নামা জাকের আলি ৫ রানের মাথায় রান আউটের ফাঁদে পড়েন ।ইনিংসের চতুর্থ ও নিজের প্রথম ওভারে খুলনার জোড়া উইকেট তুলে নেন স্পিনার আরাফাত সানি। সানির দ্বিতীয় বলে কভারে দাঁড়ানো ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহকে ক্যাচ দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার। পরের ডেলিভারিতে ইয়াসির আলিকে দারুন ঘুর্ণিতে বোল্ড করেন সানি। ফ্লেচার ৬ ও ইয়াসির খালি হাতে ফিরেন। শুরুতেই ঢাকার বোলারদের চাপে প্রথম চার ওভারে কোন বাউন্ডারি আদায় করতে পারেনি খুলনার ব্যাটাররা। পঞ্চম ওভারে ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি আসে অধিনায়ক মুশফিকের ব্যাট থেকে। তবে সপ্তম ওভারের শেষ বলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মুশফিক। আফগানিস্তানী পেসার আজমতউল্লাহ ওমরজাইর বলে বোল্ড হন মুশফিক। ১২ বলে ১২ রান করেন মুশি।
৩২ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে মুশফিকের বিদায়ে উইকেটে আসা জিম্বাবুইয়ান রাজা কাউন্টার অ্যাটাকে ৩টি বাউন্ডারি তুলে নেন।
অন্যপ্রান্তে মাহেদি ছিলেন সাবধানী। ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে আফগানিস্তানী স্পিনার কাইস আহমেদকে ছক্কা মেরে হাত খুলেছিলেন মাহেদি। তবে পরের বলেই স্টাম্পড হন ১৮ বলে ১৭ রান করা এ তরুণ ব্যাটার।
দলের বিপর্যয়ের মধ্যে শ্রীলংকার থিসারা পেরোকে নিয়ে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন রাজা। ১৫তম ওভারে পরপর দু’বলে মাহমুদুল্লাহকে ছক্কা মারেন রাজা। তবে ১৭তম ওভারের প্রথম বলেই ফজল হক ফারুকির শিকার হন ১২ রান করা পেরেরো।
পেরোর পর আর কোন স্বীকৃত ব্যাটার না থাকায়, শেষদিকে দলকে একাই টানেন রাজা। ১৯তম ওভারে আজমতউল্লাহর শেষ দুই বলে ১০ রান নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ১৩তম ও বিপিএলে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রাজা।
ফারুকির শেষ ওভারের প্রথম বলে চার মারেন ক্রিজে রাজার সঙ্গী রুয়েল মিয়া। আর চতুর্থ বলে ছক্কা হাকান রাজা। তবে শেষ বলে আউট হন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ১২৯ রানের সংগ্রহ পায় খুলনা।
৫০ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৪ রান করেন রাজা। ৮ রানে অপরাজিত থাকেন রুয়েল। ঢাকার সানি ১৫ ও আজমতউল্লাহ ২৫ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
গতকালই তামিম ইকবালের অপরাজিত ৭৩ রানের পরও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ১৪৯ রানের টার্গেট স্পর্শ করতে পারেনি ঢাকা। আজ ১৩০ রানের টার্গেটের শুরুতেই ডাবল ধাক্কা খায় ঢাকা। ১২ রানের মধ্যে তামিম ও তার সঙ্গী ইমরান উজ্জামান প্যাভিলিয়নে ফিরেন।
দ্বিতীয় ওভারে রুয়েল মিয়াকে তামিম চার ও ইমরান ছক্কা মেরে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
তবে ইনিংসের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে তামিমকে ৬ রানে লেগ বিফোর আউট করেন খুলনার বাঁ-হাতি স্পিনার নাবিল সামাদ। অন-ফিল্ড আম্পায়ার আউট না দেয়ায় রিভিউ নেন খুলনার অধিনায়ক মুশফিক। তৃতীয় আম্পায়ার তামিমকে আউট দেন। ঐ ওভারটি উইকেট মেডেন নেন নাবিল।
পরের ওভারে পেসার খালেদ আহমেদের বলে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে নাবিলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ইমরান। তামিমের মত ইমরানও করেন ৬ রান।
শুরুর ধাক্কাটা সামলে উঠতে সাবধান ছিলেন ঢাকার জহিরুল ইসলাম ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। তাই পাওয়ার প্লেতে ২৯ রানের বেশি পায়নি ঢাকা।
পাওয়ার প্লে শেষে রান তোলার গতি বাড়ান জহিরুল ও মাহমুদুল্লাহ। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেন তারা। এতে ১২ ওভার শেষে ৬৮ রান পায় ঢাকা। ১৩তম ওভারে উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া জহিরুলকে বোল্ড করে খুলনাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন রুয়েল। ৩৫ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩০ রান করেন জহিরুল। তৃতীয় উইকেটে মাহমুদুল্লাহর সাথে ৫৫ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তিনি।
জহিরুলের বিদায়ে উইকেটে এসে খালেদ আহমেদের করা ১৪তম ওভারে দু’টি ছক্কা মারেন শামসুর রহমান। পেরেরার করা ১৬তম ওভার শামসুরের বাউন্ডারিতে শুরু হলেও, শেষটা ভালো ছিলো না ঢাকার। উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে লং-অফে ইয়াসিরকে ক্যাচ দেন মাহমুদুল্লাহ। এতে বড় ধরনের ধাক্কা খায় ঢাকা। ১টি করে চার-ছক্কায় ৩৬ বলে ৩৪ রান করেন অধিনায়ক।
মাহমুদুল্লাহ যখন ফিরেন তখন ঢাকার ২৪ বলে ২৯ রান দরকার ছিলো। ১৭তম ওভারে ৫ রান আসে। পেরেরার করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই আউট হন শামসুর। তবে ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৪ বলে ২৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন শামসুর।
শামসুরের বিদায়ের ওভারে ৯ রান আসায়, শেষ ১২ বলে ১৫ রানের প্রয়োজন পড়ে ঢাকার। খালেদের করা ১৯তম ওভার থেকে ৪ রানের বেশি নিতে পারেননি শুভাগত হোম ও আজমতউল্লাহ। এতে শেষ ওভারে জিততে ১১ রানের সমীকরন পায় ঢাকা।
শেষ ওভারে বল হাতে আক্রমনে আসেন পেরেরা। প্রথম দুই বলে দুই ছক্কায়, ঢাকাকে জয়ের স্বাদ দেন শুভাগত। প্রথম বলটি বোলারের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মারেন শুভাগত। পেরেরার পরের স্লোয়ার ডেলিভারিটি কভার দিয়ে ছক্কা মেরে ঢাকার জয় নিশ্চিত করেন শুভাগত।
৯ বলে ১৮ রানে শুভাগত ও ৭ বলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন আজমতউল্লাহ। খুলনার পেরেরা ৩৯ রানে ২ উইকেট নেন। ১৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা ঢাকার সানি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
খুলনা টাইগার্স : ১২৯/৮, ২০ ওভার (রাজা ৬৪, মাহেদি ১৭, সানি ২/১৫)।
মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা : ১৩১/৫, ১৯.২ ওভার (মাহমুদুল্লাহ ৩৪, জহিরুল ৩০, পেরেরা ২/৩৯)।
ফল : মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : আরাফাত সানি (মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা)।