আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম ব্রিটেনে আসেন ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। মূলত তিনি ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য জহিরউদ্দিন বিশ্ব শান্তি পরিষদের সম্মেলনে যোগ দিতে সুইডেনের রাজধানী ষ্টকহোমে যান।
ফেরার পথে তিনি লন্ডনে আসেন। অল্পদিনের সফর হলেও শেখ মুজিব প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংস্পর্শে এসেই বুঝতে পারেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনার জন্য ব্রিটেনই হবে সবচেয়ে ভালো জায়গা।
শেখ মুজিব তার বিচক্ষনতা আর দূরদর্শিতা দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশী ও ততকালীন পড়তে আসা ছাত্রদের সাথেই ঘনিষ্ট যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
তাই মাওলানা ভাসানী ১৯৫৬ সালে মাওলানা ভাসানী আওয়ামীলীগ ছেড়ে ন্যাপ গঠন করলেও শেখ মুজিবুর রহমান ও জহিরউদ্দিনের সেই সফরের তড়িত কিছু জন সংযোগ আওয়ামীলীগের প্রতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিশ্বাস ও সমর্থন অটুট থাকে।
বঙ্গবন্ধু ব্রিটেনে ২য় বারের মতো সফরে আসেন ১৯৫৮ সালের জুন মাসের শেষের দিকে।
মূলত এপ্রিল মাসে মার্কিন লিডারশীপ প্রোগ্রামে যোগ দিতে গিয়ে দুই মাস আমেরিকায় অবস্থান করেন তিনি। এসময় বিভিন্ন অংগরাজ্য ভ্রমন করেন তিনি।
তখনও আমেরিকাতে প্রবাসী বাংলাদেশী থাকলেও রাজনৈতিক কারনে বঙ্গবন্ধুর নজর বরাবরের মতোই ছিলো ব্রিটেন প্রবাসী বাঙ্গালীদের প্রতি।
জুন মাসের সেই সফরও ছিলো বেম সংক্ষিপ্ত।
সে সময় তিনি বাঙ্গালী কমিউনিটির সাথে রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলেন।
মাওলানা ভাসানী ১৯৫৪ সালের ২৮ মে থেকে ব্রিটেনে প্রায় ৯ মাস অবস্থান করেও বাঙ্গালীদের সাথে যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ২ বারের সংক্ষিপ্ত সফরে তার চেয়ে বেশি আস্থা অর্জন করেন এবং বাঙ্গালীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন।
শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের সাথে মিশে গিয়ে সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্নের বীজ রোপন করেছিলেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে গেরিলা যুদ্ধ করতে আগড়তলাকে ব্যবহার এবং ভারত ও ব্রিটেনের সাহায্য নিয়ে বিশ্বজনমত গঠনের জন্য বিলেতের বাঙ্গালীদের রাজনীতিতে টেনে আনার চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে ১৯৬২ সালের প্রেক্ষাপট নিয়ে স্মৃতিচারণে বঙ্গন্ধুর ঘনিষ্ট নিত্য সহচর, মেজো ফুফুর কনিষ্ট পুত্র মমিনুল হক খোকা লিখেন, “ মিয়া ভাইর গতিবিধির ওপর সরকারের কড়া নজর। প্রায় সর্বত্র গোয়েন্দা পুলিশের চরদের সাদা পোষাকে আনাগোনা, যে কোন মুহুর্তে আমরা তার গ্রেফতারের আশঙ্কা করছি। বিরোধী মহল চিন্তিত, শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করলে আন্দোলন ঝিমিয়ে যাবে। বিরোধী দলের চরমপন্থী গ্রুপের কয়েকজনের সাথে মিয়াভাইর ছিলো বিশেষ হৃদ্যতা। তাদের সাথে পরামর্শ করে স্থির করলেন তিনি দেশত্যাগ করবেন। প্রথমে ভারত তারপর সেখান থেকে লন্ডনে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করবেন।
আর একই সঙ্গে বিশ্বজনমত গড়ে তুলবেন, যেমনটি করেছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র” ।
মূলত বঙ্গবন্ধু ৫০ দশকের মাঝামাঝি থেকেই ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশী ও ছাত্রদের মধ্যে স্বাধীনতার বীজ দেখতে পান যে বীজ তিনি রোপন করেছিলেন ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময়। বঙ্গবন্ধুর সেই ধারনা ভুল হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি মুহুর্তে, প্রতিটি বাকে জড়িয়ে আছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আর তাই বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৭৫ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ১৯ বছরে ৭ বার ছুটে আসেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে।চলবে….
তথ্যসূত্র : বিলেতে বাংলার রাজনীতি, লেখক : ফারুক আহমদ