বিশ্বনবীর ব্যঙ্গচিত্রের প্রতিবাদে মুসলিম উম্মাহর করনীয়

॥ওয়াহিদ মুহাম্মাদ মাহবুব॥

প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো একটি সময়ে পশ্চিমা কোনো লেখক, কার্টুনিস্ট, বা মডেল বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ(সঃ) কে নিয়ে কোনো একটি বাজে মন্তব্য, একটি বাজে লিখা, একটি বাজে পোস্ট ও ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে থাকে, এটি নতুন কোনো কিছু নয়। এর পিছনের ঘটনা সবারই কম-বেশি জানা। আর তা হল, মুসলিমদেরকে উত্তেজিত করে তাদেরকে উগ্র, উশৃঙ্খল ও সন্ত্রাসী হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা। বিগত দিনে আমরা তা খুব ভালো করেই উপলব্ধি করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ই অক্টোবর ২০২০ ফ্রান্সের একজন শিক্ষক, স্যামুয়েল প্যাটি বাকস্বাধীনতার নামে তার শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে প্রিয়নবী মুহাম্মদ(সঃ)কে নিয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে। এরই প্রতিক্রিয়ায় ফ্রান্সে বসবাসরত রাশিয়ান চেচেন বংশোদ্ভূত মুসলিম আব্দুল্লাহ আবুওয়াদভিচ আনজারোভ নামের এক তরুণ ঐ শিক্ষককে খুন করে। অন্যদিকে ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ কোনোরূপ আইন আদালত ও বিচারের তোয়াক্কা না করে সেই মুসলিম তরুণকে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই হত্যা করে। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ সে ব্যাঙ্গাত্মক চিত্র দোকান-পাট, সিনেমা ও শপিংমলে প্রদর্শন করে চলেছে যা নিয়ে শুরু হয়েছে গোটা বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড়। দাবানল বইছে মুলিমদের কলিজায়, রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়েছে মুসলিমদের হৃদয়ে।

ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অফ হিউমান রাইটসের ১৯ নম্বর আর্টিকেলে বাকস্বাধীনতাকে মানুষের মৌলিক অধিকার বলা হয়েছে। The Human Rights Act 1998 এর ১০ নম্বর সেকশনে মানুষের বাকস্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। মূলত কর্তৃপক্ষের বা রাষ্ট্রীয়যন্ত্রের হস্তক্ষেপ ও রোষানল উপেক্ষা করে নিজের অধিকার আদায়ের জন্য কাঙ্খিত মতামত প্রকাশ করা হলো বাকস্বাধীনতা।

ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের সাম্প্রতিক সময়ের একটি রায় (ES v Austria) খুবই প্রণিধানযোগ্য, যেখানে বাকস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে বিশেষ করে মুসলিমদের বিশ্বাসকে নিয়ে যে কেউ বাকস্বাধীনতার নামে যা মন চায় তাই বলতে পারবে না। বাকস্বাধীনতার নামে অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত, সংখ্যালঘূ সম্প্রদায়ের উপর আঘাত অথবা তাদের বিশ্বাসের উপর যা ইচ্ছা তা বলার নাম বাকস্বাধীনতা নয়। বাকস্বাধীনতার নামে কখনো অন্যের বিশ্বাস, ধর্ম, উৎসব, বর্ণ, গোত্রের উপর অযাচিত আক্রমন বাকস্বাধীনতার আওতায় পরে না বরং তা হবে পরস্পরের মধ্যে বিদ্ধেষ ছড়ানো এবং মানুষকে চরম পন্থার দিকে ঠেলে দেয়া।

ফ্রান্সে সংঘটিত বর্তমান এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা মুসলিম বিশ্ব নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করছে, মিডল ইস্ট ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে যার সাড়া পড়ছে বিশ্বের অন্য প্রান্তেও। অন্যদিকে তুর্কির প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে মানসিক হসপিটালে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও ফরাসী প্রধানমন্ত্রি এমানুয়েল মাক্রোর এই ভুমিকার তিব্র প্রতিবাদ করেন। মুসলিমবিশ্ব এমানুয়েল মাক্রোর কাছ থেকে আরও দায়ীত্বশীল আচরণ আশা করেছিল, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে তিনি সেই দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি পরিস্থিতিকে শান্ত না করে বরং মুসলমানদের বিশ্বাসের উপর পাল্টা আঘাত করে পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছেন, বন্ধ করেছেন বহু মসজিদ, রেইড দেয়া হচ্ছে মুসলিমদের মসজিদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, তৈরি করছেন মুসলিম বিদ্বেষ মুলক আইন, বৃদ্ধি করা হচ্ছে মুসলিম বর্ণ বৈষম্য। এইতো গত সপ্তাহে প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের দুই মুসলিম মহিলাকে গালমন্দ ও ছুরিকাঘাত করা হল। এর আগেও ২০১৫ সালে দেশটির শারলি হাব্দ ম্যাগাজিনে রাসুল(স) কে নিয়ে ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশ হয়েছিল। বর্তমান সময়ে বিশেষ করে খোদ এমানুয়েল মাক্রো যেন মুসলিম বিদ্বেষী এক মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন।ফলশ্রুতিতে মুসলিম বিশ্বে প্রতিবাদ, ফ্রান্স এমব্যাসি ঘেরাও, ফরাসী পতাকায় আগুন লাগানো এবং ফ্রান্স কূটনৈতিককে ডেকে পাঠানোর মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন।

ফ্রান্সের শিক্ষক স্যামুয়েলের প্রতিবাদ করা মুসলিমের ধর্মীয় বা ঈমানী দায়িত্বের মধ্যে পরে কেননা বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসে বলা হয়েছে – “যতক্ষণ না পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি নবী মুহাম্মদ(স:) কে তাঁর পিতা, তাঁর পুত্র এবং সমস্ত মানবজাতির চেয়ে বেশি ভালোবাসে, ততক্ষন পর্যন্ত সে সত্যিকারের ঈমানদার নয়”। নবী কারীম(স) কে ভালবাসা একটি প্রাকৃতিক অনুভূতি যা বিশ্বাসীর অন্তরে প্রবাহিত হয়।এই ভালবাসা প্রতিটি বিশ্বাসীর জন্য একটি পুণ্য এবং ঈমানের শর্ত হিসাবে বিবেচিত হয়। আমরা সাহাবীদের জীবনী থেকে আমাদের প্রিয় নবীকে কি ভাবে ভালোবাসতে হয় তার অনন্য শিক্ষা দেখেছি। কিভাবে নিজের জীবন, মাল, সন্তান-সন্ততি, এমনকি পিতা-মাতার চেয়েও অধিক ভালোবাসা যায় তার কালজয়ী দৃষ্টান্ত আমাদেরকে এখনো আলোর দিশা দেখায়, দেখায় পথচলার পাথেয়, দেখায় নবী কারীম(সঃ) কে অনুসরনের অনন্য সুন্দর দীক্ষা।

বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতে পাশ্চাত্যের পাতানো ফাঁদে কোনো অবস্থাতেই পা ফেলা যাবে না বরং অত্যান্ত বুদ্ধিমত্তা ও দায়িত্বের সাথে এবং সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করতে হবে আর রাসূল(স)কে ভালোবাসার সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। রাসূল(স) এর প্রতি ভালোবাসার প্রকৃত নজির হবে আমরা যদি আমাদের জীবনে, কাজে, কর্মে, চিন্তায়, চেতনায়, মননে, ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রাসূল(স) এর আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে সেটি হবে রাসূল(স) এর প্রকৃত ভালোবাসা। সংক্ষেপে রাসূল(স)কে ভালোবাসার কয়েকটি মৌলিক নীতি তুলে ধরা হলো;

১. মহানবী হযরত মুহাম্মদ(স)কে জীবনের সর্বক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ রোল মডেল হিসেবে গ্রহণ করা: বর্তমান সময়ে বিশেষ করে যুবকদের কাউকে না কাউকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে দেখা যায়, কেউ ইন্ডিয়ান ফিল্মষ্টারকে, মার্কিন পপ সংগীত তারকাকে, কেউ বা তারকা খেলোয়াড়দেরকে কেউ বা আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে। কিন্তু যাকে আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির আদর্শ ও রোল মডেল হিসেবে পাঠিয়েছেন তার প্রতি বা তার সুন্নাহর প্রতি যেন সমস্ত অনীহা। আল্লাহ তায়ালা সূরা আহযাবের ২১ নম্বর আয়াতে বলেছেন – “তোমাদের জন্য রাসূল(স) জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ”।

আসলে এর মানে কি? সর্বোত্তম আদর্শের মানে হলো নবী করিম(স) এর সমস্ত জীবনই মুমিনের জন্য আদর্শ, যেমন- রাসূল(স) কিভাবে ঘুমোতেন, কিভাবে ঘুম থেকে উঠতেন, কিভাবে ওযু করতেন, কিভাবে নামাজ পড়তেন, কিভাবে রোজা রাখতেন, হ্বজ সহ অন্যান্য ইবাদাত ও তাসবীহ-তাহলীল করতেন, কেমন করে চুল নখ কাটতেন, কি ধরনের পোশাক পরতেন, কিভাবে বাজার-ঘাট করতেন, কিভাবে সংসার চালাতেন, কেমন ছিল স্ত্রীদের প্রতি তার আচরণ ও ভালোবাসা, পরিবারের প্রতি কেমন ছিল তার দায়িত্ববোধ, পিতা হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন, স্বামী হিসেবে তার ভূমিকা কেমন, শিক্ষক হিসেবে তার আচরণ, নেতা ও সংগঠক হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন, প্রতিবেশীর প্রতি তার ব্যবহার কেমন ছিল, এতিম হিসেবে কেমন ছিলেন, বয়স্ক, স্নেহাস্পদ ও সমবয়সীদের প্রতি তার আচরণ কেমন, সেনাপতি, কর্মী, রাষ্ট্রপতি হিসেবে কি ভূমিকা ছিল তার, তার বিদেশনীতি, অমুসলিমদের প্রতি কেমন ছিল তার ব্যবহার অর্থাৎ প্রতিটি মুসলিমকে নবী করিম(স) এর গোটা ৬৩ বছরের জীবনটাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার মধ্যদিয়ে তার প্রতি আমাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

২. রাসূলের পদাঙ্ক অনুসরণ করা: মানবজাতির নৈতিক মূল্যবোধগুলোকে বাস্তব, আক্ষরিক ও প্রায়গিক অর্থে জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য উন্নত চরিত্র দিয়েই নবী মুহাম্মদ(স) কে বিশ্ববাসীর নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। যেমনটি বুখারী শরীফে নবী করিম(স) বলেছেন – “আমাকে পূর্ণাঙ্গ উন্নত চরিত্র দিয়ে পাঠানো হয়েছে”।

এই হাদিস থেকে আমরা যেমন রাসূল(স) এর আধ্যাতিক জীবনের দিক নির্দেশনা পাই ঠিক তেমনি পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবেনর দিকনির্দেশনাও পেয়ে থাকি। হযরত আনাস ইবনে মালিক(রা) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন-যেখানে তিনজন লোক এসে নবীকরিম(স)এর স্ত্রীদের নিকট তার/নবী(সঃ) এর ইবাদত, ইবাদতের ধরণ, সময়, সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। নবী করিম (স) কোনো এক স্ত্রী তাঁদের জানালেন, নবী(স) ইবাদত করার পদ্ধতি, সময় ও নিয়মাবলী । জানানো হলে তারা ভাবতে লাগলো রাসুলের চেয়ে তারা যেন আরো বেশি ইবাদত করতে পারবে। তাদের মধ্যে প্রথমজন বলেছিল: “আমি এখন থেকে সারা রাত জেগে ইবাদত করবো”। দ্বিতীয়জন বলেছিল: “আমি এখন থেকে সারা সারা বছর রোজা রাখবো এবং রোজা ভঙ্গ করব না”। তৃতীয়জন তখন বলেছিল: “আমি নিজেকে নারীদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখবো এবং কখনই বিয়ে করবো না”।এই সময়ে রাসূল(সে) তাদের সামনে এসে উপস্থিত হয়ে তাদের কতকপোথন শুনে বলেছিলেন “আমি আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করি এবং তোমাদের মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি আল্লাহ সচেতন। তবুও, আমি উপবাস করি এবং আমি রোজা ভঙ্গ করি। আমি ইবাদত করি এবং আমি বিশ্রাম করি। এমনকি আমি বিয়েও করি। যে আমার সুন্নাহ থেকে বিচ্যুত হয়, সে আমার সাথে নেই।”

হাদিসে বর্ণিত এই তিন ব্যক্তি খুব বেশি আবেগপ্রবণ ছিল তাদের ইবাদতের ক্ষেত্রে। কিন্তু রাসূল খুবই চমৎকারভাবে ভাবে আবেগের বশবর্তী না হয়ে বরং বাস্তবতার নিরিখে আমল, আখলাক ও ইবাদতের নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।বর্তমান পরিস্থিতে ফ্রান্সের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো ভাবেই যাতে ইসলামের ভুল ইমেজ বা ব্যাখ্যা ভিন্নধর্মীদের কাছে না যায়, সেদিকে থাকতে হবে কঠোর নজরদারি। ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম, বিশ্ব শান্তি স্থাপনে ইসলামের ভূমিকা অনস্বীকার্য । মক্কা বিজয় হলো যার অন্যতম নিদর্শন।

৩. রাসূলের জীবনী অধ্যায়ন, প্রচার ও প্রসার করা: রাসূলের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অন্যতম পন্থা হলো তার জীবনী অধ্যায়ন করা, গবেষণা করা, প্রচার-প্রসার করা, রাসূলের জীবন চরিত্রকে নিজ জীবনে পুংখানুপুঙ্খ ভাবে অনুসরণ করা। পাশাপাশি তার উপর যে ঐশী বাণী কুরআনুল করিম নাজিল হলো যাকে বলা হয়েছে রাসূল(স) এর জীবন চরিত্রের ম্যানুস্ক্রিপ্ট তা অধ্যায়ন করা এবং ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবেন উনুকরণ, উনুসরণ ও উপস্থাপন করা।

ইসলামে অন্ধ অনুকরণ ও অন্ধ ভালোবাসার কোনো সুযোগ নেই। আপনি যে জিনিষকে জানেন না বা চিনেন না বা বুঝেন না, তাকে কিভাবে ভালোবাসবেন? তাই রাসূলকে ভালোবাসার প্রথম শর্তই হলো রাসূলকে পূর্ণাঙ্গভাবে জানা, বুঝা, তার সম্পর্কে উপলব্দি, গবেষণা করা ও জ্ঞানার্জন করা। রাসূল(স) কে না জেনে ভালোবাসালে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ তৈরী হতে পারে, বা রাসূলের সঠিক আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ঘটতে পারে, তাই স্বেচ্ছাচারী আবেগের চেয়ে জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে আমাদের ভালবাসার সহজাত অনুভূতি গড়ে তুলতে হবে।

রাসূল(স) কে ভালোবাসার আরেকটি নিদর্শন হলো প্রতিনিয়ত তার উপর দরূদ ও সালাম পেশ করা। তিরমিযী শরীফের হাদিসে বলা হয়েছে “ রাসুল(স) বলেছেন-কেয়ামতের দিন ওই সমস্ত লোকেরা আমার নিকটতম হবেন, যারা আমার উপর বেশি বেশি দরূদ ও সালাম পেশ প্রেরণ করেন”

৪. রাসূল(স) কে সর্ব ক্ষেত্রে অনুসরণ করার মাধ্যমে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ: রাসূল(স) কে তাঁর রব এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন একটি মিশন দিয়ে, তা ছিল তিনি মানব জাতির কাছে আল্লাহর দ্বীনকে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা, আর এজন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সমস্ত সৃষ্টির চেয়েও অধিকতর পছন্দ করেছেন। আল্লাহ তাকে পছন্দ করেছেন কারণ তিনি রাসুলকে ভালবেসেছেন এবং তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট ও রাজি-খুশী ছিলেন। আল্লাহ যদি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট না হতেন বা থাকতেন তাহলে তিনি তাকে রাসুল হিসেবে মনোনীত করতেন না। আমাদেরকে অবশ্যই তাকেই ভালোবাসতে হবে যাকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে হবে যার উপর আল্লাহ খুশি রয়েছেন। সূরা আল-ইমরনের ৩১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘তোমরা যদি সত্যই আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমাকে (নবী কারীম সঃ কে) অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদের ভালবাসেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” এই অনুসরণ কেমন হবে তা শিখতে হবে রাসূলের চলনে, বলনে, কথনে, আচরণে, সর্বোপরি রাসূল (সঃ)এর জীবনাদর্শ থেকে। শিক্ষা নিতে হবে দুর্যোগকালীন সময়ে এবং কঠিন পরিস্থিতে তিনি কিভাবে শত্রুর মোকাবেলা করতেন, আবার শত্রুর প্রতি কেমনই বা ছিল তার ব্যাবহার।

তাই সমগ্র পৃথিবী আজ যেমন রাসূলের(সঃ) সম্মান ও ইজ্জত রক্ষায় তাদের ভালোবাসা প্রদর্শন করছে, পাশাপাশি এটিও খেয়াল রাখতে হবে যেন অতি আবেগী হয়ে ও অতি উৎসাহিত হয়ে অনৈসলামিক, চরম ও উগ্র পন্থা আমরা কেউ গ্রহণ না করি। কোনো অবস্থাতেই আইনকে নিজের হাতে তুলে না নিয়ে বরং নিয়মতান্ত্রিক ভাবে আমাদের ক্ষোভ, ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রদর্শন করি তাঁদের প্রতি যারা আমাদের প্রিয় নবী(সঃ) নিয়ে ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশ করেছে। আর রাসূলের প্রতি ভালোবাসার সর্বোত্তম পন্থা ইসলামের শিক্ষা ও রাসূল(সঃ) আদর্শকে বেশি বেশি প্রচার ও প্রসার করে, কুরআন ও সুন্নাহার আলোকে নিজের জীবন গঠনের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহ গঠন করি এবং আল্লাহর দুনিয়াতে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করি।

লেখকঃ ওয়াহিদ মুহাম্মাদ মাহবুব, সলিসিটর, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস।

Advertisement