বৃটিশ রাজনীতিতে শতাব্দীর মধ্যে লজ্জাকর রেকর্ড তৈরীর মধ্য দিয়েই কি বিদায় ঘন্টা বাজবে স্যার কিয়ার ষ্টারমারের?

।। Dr. Zaki Rezwana Anwar FRSA ।।

আজ পহেলা জুলাই, ২০২১, প্রয়াত জো কক্সের নির্বাচনী এলাকা ব্যাটলি এন্ড স্পেনে বাই-ইলেকশনের জন্যে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত ‌‌‌হয়েছে। যদি এই বাই- ইলেকশনে লেবার পার্টি হেরে যায় তাহলে এটি হবে বৃটিশ রাজনীতিতে শতাব্দীর মধ্যে লজ্জাকর রেকর্ড! কারণ বৃটিশ রাজনীতিতে গত ১০০ বছরেও কোনো বিরোধী দলই ক্ষমতাসীন সরকার দলের কাছে দু-দুটো বাই- ইলেকশনে হারেনি!

গত ২৪ বছর ধরে এই এলাকা লেবারের জন্যে একটি নিশ্চিত এলাকা ব’লে গণ্য হয়ে আসছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে এখানকার মুসলিম জনগোষ্ঠী স্যার কিয়ার ষ্টারমারের মুসলিম বিরোধী মন্তব্যে এই অঞ্চলের বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেই ক্ষোভে আরো পেট্রোল ঢেলে দেওয়া হয়েছে লেবারের আরেক অফিসিয়ালের মুসলিম বিরোধী মন্তব্যে। সেখানকার মুসলমানগণ প্রকাশ্যেই সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে তারা লেবারকে এবার ভোট দিচ্ছে না। কাজেই ব্যাটলি এন্ড স্পেনের বাই-ইলেকশনে লেবারের পরিণতি হার্টলিপুলের মতই হতে যাচ্ছে – এটিই ধরে নেওয়া যেতে পারে।

এখন কথা হচ্ছে, এরপর স্যার কিয়ার ষ্টারমারের পরিণতি কেমন হবে বা কে ধরবে লেবারের হাল, আর কোন্ কায়দাতেই বা সরানো হবে স্যার কিয়ার ষ্টারমারকে, সেই সাথে কোন্ পরিস্থিতিতে কারাই বা নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় নামবেন?

গভপোলের সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রায় ৭০ ভাগ লেবার সদস্য মনে করে যে এ পরিস্থিতিতে সব চাইতে ভাল লেবার লিডার হতে পারতেন এন্ডি বার্নহাম। কারণ তিনি সংবেদনশীল প্রকৃতির মানুষ যিনি হয়তো জনগণের কাছাকাছি যেতে পারতেন এবং লেবারের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বাড়তো। কিয়ার ষ্টারমারের জন্যে সুখবর হচ্ছে, এন্ডি বার্নহাম পার্টির নেতৃত্বের লড়াইয়ে অংশই নিতে পারবেন না যেহেতু তিনি বর্তমানে গ্রটার ম্যান্চেষ্টারের মেয়র, তিনি ওয়েষ্টমিন্সষ্টারে নেই।

এখন স্যার কিয়ার ষ্টারমার যদি নিজে থেকে পদত্যাগ না করেন তাহলে একজন প্রতিযোগিকে নমিনেট করতে ৪০ জন এমপির সমর্থনের প্রয়োজন পড়বে, তবে যদি কিয়ার ষ্টারমার নিজে থেকে পদত্যাগ করেন তাহলে ২০ জন এমপিই একজন প্রতিযোগিকে নমিনেট করতে পারবে। সমস্যা হচ্ছে লেবারের বামপন্হীদের ৪০ জন এমপির সমর্থন আদায় করা অত্যন্ত কঠিন বলে আমি মনে করি।

যদি কিয়ার ষ্টারমার পদত্যাগ না করেন এবং যেহেতু লেবারের বামপন্থীদের মধ্যে যথেষ্ট মতৈক্যের অভাব, সেক্ষেত্রে হঠাৎ করে নেতৃত্বের লড়াই যদি শুরু হয়ে যায় তাহলে জরীপ অনুযায়ী ঈভেট কুপার, লিসা নন্দি এবং এন্জেলা রাইনার যথাক্রমে মাত্র ৩৫% , ১৩% ও ১২% সদস্যের সমর্থন পাবে। অর্থাৎ স্যার কিয়ার ষ্টারমারের চাইতেও হতাশা বয়ে নিয়ে আসার মত একজন লিডার পাবে লেবার।

আমার ধারনা, যা হয়তো ঘটবে তা হচ্ছে, লেবারের মধ্যে soft left যারা রয়েছেন যারা ষ্টারমারকে নেতৃত্বের লড়াইয়ে সমর্থন করেছিলেন তারা হয়তো ষ্টারমারের সঙ্গে আলাপের মাধ্যমে বোঝাবেন যে লেবারের অধঃপতনের জন্যে ষ্টারমার দায়ী – এ কলঙ্ক নিয়ে টিকে থাকার চাইতে ষ্টারমারের পদত্যাগ করা ভাল এবং কেবলমাত্র তখন বামপন্থীরা ২০ জন এমপির সমর্থন নিশ্চিত করে একজন প্রতিযোগীকে নমিনেট করতে পারবে। সেক্ষেত্রে শ্যাডো এক্সচেকার জন ম্যাকডোনেল একজন সম্ভাবনাময় প্রতিযোগী হবেন বলে লেবার দলের অনেকেই মনে করে।

যাই হোক, স্যার কিয়ার ষ্টারমারের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে লেবার দল একজন নতুন লিডার পাব সে ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী। মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র কমিউনিটি এক্টিভিস্ট।

Advertisement