ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: সাবেক এটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। আজ সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি রাজধানীর আদদ্বীন হাসপাতালে মারা যান। হাসপাতালটির জনসংযোগ কর্মকর্তা তবিউর রহমান আকাশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আজ সকাল ৮টা ৩০মিনিটে রফিক-উল হক স্যার ইন্তেকাল করেন। তার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সবার চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন।
তিনি আরও জানান, গত মঙ্গলবার হঠাৎ করে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের।
তার অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। তাৎক্ষণিক তাকে নেয়া হয় আইসিইউতে। এরপর থেকে তিনি আইসিইউতেই ছিলেন।
গত ১৫ই অক্টোবর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে রাজধানীর মগবাজারে আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি হন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। এরপর কিছুটা সুস্থবোধ করলে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরে যান। কিন্তু দুপুরের পরপরই ফের তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
জানা গেছে, রক্তশূন্যতা, ইউরিন সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন প্রবীণ এই আইনজীবী। তিনি ডা. রিচমন্ড রোল্যান্ড গোমেজের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ১৯৩৫ সালের ২রা নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯০ সালের ৭ই এপ্রিল থেকে একই বছরের ১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের ষষ্ঠ প্রধান আইন কর্মকর্তা (এটর্নি জেনারেল)। কিন্তু কোনো সম্মানী নেননি। পেশাগত জীবনে তিনি কখনো কোনো রাজনৈতিক দল করেননি। তবে, নানা সময়ে রাজনীতিবিদরা সব সময় তাকে পাশে পেয়েছেন। রাজনীতিবিদদের সম্মান সব সময়ই অর্জন করেছেন তিনি। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক তার জীবনের উপার্জিত অর্থের প্রায় সবই ব্যয় করেছেন মানুষের কল্যাণ ও সমাজসেবায়। আর তার এই উদ্যোগকে বিরল বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন আইন অঙ্গনে তার সমসাময়িকরা।
রফিক-উল হক ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করেন। ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বার এট ল’ সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে এবং ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন তিনি। বর্ণাঢ্য জীবনে আইন পেশায় দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর পার করেছেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনি বিষয় নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী।
তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান, ২০১১ সালে প্রিয়তমা স্ত্রী ডা. ফরিদা হকের মৃত্যুর পর থেকেই নিঃসঙ্গতা অনুভব করতেন তিনি। এরই মধ্যে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে তার বাম পায়ে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর থেকে তার স্বাভাবিক হাঁটাচলা ব্যাহত হয়। মাঝে-মধ্যে পায়ে ব্যথা হতো। যে কারণে হুইল চেয়ারে যাওয়া-আসা করতে হতো তাকে।