ব্রিটেনে করোনা আতঙ্কে বাংলাদেশিরা

ব্রিট বাংলা ডেস্ক : ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের মধ্যে করোনা আতংক বিরাজ করছে। এ পর্যন্ত প্রাণঘাতি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত রয়েছেন অসংখ্য লোক।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন এটি ‘একটি প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে খারাপ জনস্বাস্থ্য সংকট’। অনেক পরিবারকে তারা সতর্ক করেছেন যে তারা তাদের সময়ের আগে প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলবে। তিনি বলেছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপের জন্য যে সময় পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা ছিলনা । যুক্তরাজ্যে ভাইরাসে এখন পর্যন্ত মোট ১০ জন মারা গেছে।

স্কুলগুলোকে বিদেশে ভ্রমণ বাতিল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ৭০ বছরের বেশি বয়স্ক এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ রয়েছে তাদেরকে ভ্রমণে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

সারাদেশে সর্বশেষ ৫৯৬ জন আক্রান্তের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে । তবে সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালেন্স জানিয়েছেন, সংক্রামিতদের প্রকৃত সংখ্যা ৫ হাজার থেকে ১০ হাজারের মধ্যে হতে পারে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় মনে করছে আসছে সপ্তাহের মধ্যে দেশেটির ভাইরাসটি আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এ কারনে দেশটিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে এক বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটিতে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লকডাউন বা মানুষ কার্যত গৃহবন্দী হওয়ার খবরে বাঙালিরা ও চাল ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ করা শুরু করেছেন। বাঙালি খাবার দাবারের বৃহত আমদানীকারক যারা ইউরোপে ও নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল ডাল মসলা সরবরাহ করে থাকেন, তারা জানিয়েছেন মানুষ যেভাবে বেশি পরিমান চাল ডাল তৈল কিনছেন, তাদের কাছে যা মজুদ আছে বড় জোর এক সপ্তাহ তারা সরবরাহ করতে পারবেন। বাইরের দেশ থেকে সব ধরনের পণ্যদ্রব্য আসা বন্ধ হওয়ার কারণে তারা নতুন করে পন্য আমদানী করতে পারছেন না।

বাংলাদেশি অধ্যূষিত টাওয়ার হ্যামলেটে চারজন রোগি রয়েছে বলে ব্রিটেন স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর টাওয়ার হ্যামলেটস এর বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াভহভাবে। কারণ শুধুমাত্র টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলেই লক্ষাধিক বাংলাদেশির বসবাস। অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এত দিন টাওয়ার হ্যামলেটের চারপাশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পরেছিলো। কিন্তু সম্প্রতি তা টাওয়ার হ্যামলেটের হাসপাতালে রোগী সনাক্ত হওয়া ও একজনের মৃত্যু আমাদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয় থেকে বলছেন, করোনা ভাইরাসে সব থেকে বেশি ঝুকিতে আছে দেশটির বয়ষ্করা ও শিশুরা। আর বয়ষ্কদে ও শিশুদের সেই ঝুকি থেকে বাঁচাতে প্রায় ঘরবন্দি তারা। একই সঙ্গে এই সপ্তাহ থেকে দেশটিতে সকল কনসার্ট, জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে খুব শীঘ্রই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

প্রয়োজন ছাড়া একদমই ঘর থেকেই বের হচ্ছেন না বয়স্করা। করোনায় আতঙ্কিত দেশটিতে এরই মধ্যে বন্ধ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি অফিস ও মার্কেট। যার মধ্যে রয়েছে ফেইসবুক, এইচএসবি, চায়না মার্কেট,কুইন্স মার্কেট উল্লেখযোগ্য।

ভাইরসটি যত দিন যাচ্ছে তত বেশি মানুষের মধ্যে আতঙ্কের তৈরি করায় তার প্রভাব পরেছে দেশটির খাদ্যবাজারসহ অর্থনীতিতে। দেশটির বড় বড় সুপারশপে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ভাইরাসটি ব্রিটেনে ছড়িয়ে পরার কিছুদিন আগে থেকেই মানুষের মধ্যে খাদ্য মজুদ করে রাখার প্রবনতা তৈরি হয়েছিলো। তবে সম্প্রতি টেসকো, সেইনসব্যারি, আজদার মতো বড় সুপারশপ গুলো থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একটি প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, কোন ক্রেতা যে কোন পণ্য পাঁচটির বেশি কিনতে পারবেন না। একই সাথে ক্রেতারা চাইলেই যেসব পন্য বাজারে কম রয়েছে তা একাধিক কিনতে পারবেন না। ওয়েটনি মার্কেট আইসল্যান্ড নামক সুপার স্টোরে কোন পণ্যই একজনকে দুইটার বেশী দেয়া হচ্ছে না। কাউন্টারে নিয়ে আসলে ও ক্রেতার হাত থেকে দুইটির অধিক পণ্য আটকে দিচ্ছেন বিক্রয় কর্মীরা। ক্রেতার ভীড় সামলাতে নতুন করে বসানো হয়েছে কাউন্টার।

এ বিষয়ে হোয়াইচ্যাপেলের একাধিক বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ২০০৮ সালের পরে অর্থনীতি এমন চাপের মুখে পরছে। এখনই পণ্যের দাম বাড়েনি। তবে পরিস্থিতি এমন হলে সামনে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়বে। এরই মধ্যে স্টাফ সংকট তৈরি হয়েছে। তাছাড়া ট্যুরিস্ট না থাকার কারনে বেচাবিক্রিও কমেছে কয়েকগুন।

অন্যদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্ক বিরাজ করছে দেশের শেয়ারবাজারসহ দেশটির মূলধারার অর্থনীতিতে। ‘মহাধসের’ ফাঁদে পড়েছে অর্থনীতি। সোমবার সকাল থেকে তীব্র দরপতনে লেনদেন চলছে পুঁজিবাজারে। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার স্থিতিশীল নয়। এর মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্কে দর পতনের গতি বেশি দেখা যাচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। সরকারের নতুন বাজেটে যদিও ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্ধ রাখা হয়েছে করোনা মোকাবেলায়।

সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, যে কারো যদি ঠান্ডা লাগে তাহলে তাকে এক সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

উল্লেখ্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯ নিয়ে কড়া সতর্কতা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, করোনার মহামারি নিয়ন্ত্রণের সক্ষম হবে না ব্রিটেন।

Advertisement