ব্রিটেনে করোনার ভারতীয় ধরন যে হারে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্রিটেনে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ১৩শ ১৩ জন রোগি শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১২শ ৫৫ জনই ইংল্যান্ডে। ৩৫ জন স্কটল্যান্ডে, ১২ জন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এবং ১১ জন ওয়েলসের। অন্যদিকে ইংল্যান্ডে শনাক্ত হওয়া ৩০ শতাংশই লন্ডনের মানুষ। আর ২৫ শতাংশ উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের।
এদিকে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রয়োজনে স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে বলে দেশটির সরকার জানিয়েছে। শুক্রবার টেন ডাউনিং স্ট্রীটের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, ইংল্যান্ডে লকডাউন পুরোপুরি লকডাউন শিথিলের বিষয়ে সরকার ভেবে চিন্তে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৭ মে থেকে ব্যাপক আকারে লকডাউন শিথিল হচ্ছে ইংল্যান্ডে। রেস্টুরেন্ট, পাব, সিনেমা, থিয়েটার, খেলাধুলার স্টেডিয়াম খুলে দেওয়া হচ্ছে। ইন্ডোরে সর্বোচ্চ ৬ জন এবং আউটডোরে সর্বোচ্চ ৩০ জন এক সঙ্গে বসতে পারবে। ২১ জন থেকে পুরোপুরি লকডাউন শিথিলের পরিকল্পনা আছে সরকারের। কিন্তু ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমন আশংকাজনকভাবে বাড়ার কারণে পুরোপুরি লকডাউন শিথিলের বিষয়ে শঙ্কা তৈরী হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজ়রি গ্রুপ ফর ইমার্জেন্সিস এর অধ্যাপক অ্যাডাম ফিন জানান, সত্যিই চিন্তা বাড়িয়েছে ভারতীয় স্ট্রেন। এটির সংক্রমণ ক্ষমতা সম্পর্কে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে লকডাউন শিথিলের বিপক্ষে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্হ্য বিশেষজ্ঞরা।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রুখতে ভ্যাকসিন কতটা কাজ দিচ্ছে, তা নিয়েও সন্দিহান বিশেষজ্ঞেরা। কারণ ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ় নিয়েও মৃত্যুর খবর মিলছে ভারতে।
সম্প্রতি ২ জন আমেরিকান ফাইজারের দুই ডোজ টিকা নিয়ে ভারত ভ্রমনে যান, তার পরেও এই দুই জন ভারতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হন এবং মারা যান। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অবস্থায় শুধু মাত্র ভ্যাকসিন প্রদানে জোরদারের ভরসায় লকডাউন তুলে দেওয়া বিপদ হতে পারে।
এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত বিদেশ ফেরত পর্যটকদের জিনোমিক তথ্য সিকোয়েন্স করে ওয়েলকাম’স সেঙ্গার ইন্সস্টিটিউট জানিয়েছে, ৬ শতাংশ ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত। এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৭ হাজার নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, যুক্তরাজ্য করোনা সংক্রমণ মার্চের তুলনায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভারতীয় ধরনে সংক্রমণ সংখ্যায় দ্রুত বাড়ছে। অন্য একটি গবেষণায় ইম্পিরিয়ালের গবেষক দল ১১৫টি পজ়িটিভ রিপোর্ট পান। তার মধ্যে ২৬টি নমুনার ভ্যারিয়্যান্ট চিহ্নিত করা যায়। এর মধ্যে ২৪টি কেন্ট ভ্যারিয়্যান্ট। বাকি দু’টি ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্ট। কিন্তু আক্রান্ত দু’জনের কেউই লন্ডন ছেড়ে অন্য কোথাও যাননি। অর্থাৎ, তাঁরা লন্ডনেই সংক্রমিত হয়েছেন।
ভ্যারিয়্যান্টটি লন্ডনে ছড়াতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এখনও এই স্ট্রেনে সংক্রমিতের সংখ্যা কম। কিন্তু সব মিলিয়ে ভারতের দিকে তাকালে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্নতা রয়ে গিয়েছে। হেলথ সেক্রেটারী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, ‘আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজন হলে আরও পদক্ষেপ নিতে দেরি করা হবে না।