ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: সাংবাদিক করণ থাপারভারতীয় নাগরিক হওয়ার চেয়ে বাংলাদেশের উইপোকা হওয়া অনেক বেশি আকর্ষণীয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তুলনামুলক এক লেখায় এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের সাংবাদিক করণ থাপার। ‘হাউ বাংলাদেশ ইজ আউটপারফরমিং ইন্ডিয়া’ শীর্ষক তার এ লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে হিন্দুস্তান টাইমসে। এতে তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কৃষাণ রেড্ডির সাম্প্রতিক একটি মন্তব্য তুলে ধরেন। যেখানে কৃষাণ রেড্ডি বলেছেন, ভারত যদি নাগরিকত্ব প্রস্তাব করে তাহলে বাংলাদেশের অর্ধেক খালি হয়ে যাবে। অর্ধেক বাংলাদেশী ভারতে চলে আসবেন।
এক্ষেত্রে কৃষাণ রেড্ডিকে অগণতান্তিক ও আক্রমণাত্মক আখ্যায়িত করে করণ থাপার লিখেছেন, রেড্ডি এটা প্রকাশ করেছেন যে, তিনি বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ। করণ থাপার লিখেছেন, তিনি জানেন না তুলনার দিক দিয়ে ভারতকে অনেক দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
অনেক সূচকে এগিয়ে গেছে। এসব হচ্ছে জীবন মানের সমতা নির্ধারণের সূচক। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি এমন হারে বেড়ে যাচ্ছে যা ভারত দুই থেকে তিন বছর পর প্রত্যাশা করতে পারে। ভারতের প্রবৃদ্ধি শতকরা ৫ ভাগের নিচে। আর বাংলাদেশ শতকরা ৮ ভাগের উপরের দিকে।
দ্বিতীয়ত, চীন ছেড়ে আসা কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করতে নির্মলা সীতারমন করপোরেট ট্যাক্স শতকরা ১৫ ভাগ প্রস্তাব করেছেন। দুটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হলো একটি যেখানে এই বিনিয়োগ প্রকৃতপক্ষে যাচ্ছে। তার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক জ্বল জ্বল করছে লন্ডন ও নিউ ইয়র্কের হাই স্ট্রিটগুলোতে। সেখানে ভারতের লুধিয়ানা বা তিরুপুরের পোশাক খুবই কম। বিস্ময়ের কিছু নয় যে, ২০১৯ অর্থ বছরের বাংলাদেশের মার্চেন্ডাইজ রপ্তানি দুই অংকে বেড়েছে। অন্যদিকে ভারতেরটা দ্রুত পতনই হচ্ছে। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে আয়ুষ্কাল অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের এই আয়ুষ্কাল যথাক্রমে ৭৪ ও ৭১ বছর। ভারতে তা যথাক্রমে ৭০ ও ৬৭। তিনি লিখেছেন, ভারতে নবজাতক মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ২২.৭৩ ভাগ। বাংলাদেশে তা ১৭.১২ ভাগ। ভারতে শিশু মৃত্যুর হার ২৯.৯৪ ভাগ। বাংলাদেশে তা ২৫.১৪ ভাগ। ৫ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুহার ভারতে ৩৮.৬৯ ভাগ। বাংলাদেশে ৩০.১৬ ভাগ। বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষিত নারীর শতকরা হার ৭১ ভাগ। ভারতে তা ৬৬ ভাগ। বাংলাদেশে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণের শতকরা হার ৩০ ভাগ। তা আরও বাড়ছে। অন্যদিকে ভারতে তা শতকরা ২৩ ভাগ। গত দশকের চেয়ে এই অংক শতকরা ৮ ভাগ কম।
তিনি আরো লিখেছেন, যখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন যে, অর্থনৈতিক কারণে অবৈধ উপায়ে কিছু ভারতীয় বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। তিনি হয়ত ঠিকই বলেছেন। মানুষ তাদের জীবনমানের উন্নতির জন্য অভিবাসী হয়। সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশে জীবনধারা দৃশ্যত উন্নত। আপনি যদি ভারতীয় মুসলিম হয়ে মাংস খাওয়ার কারণে, লাভ জিহাদের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে পিটিয়ে মারার ঝুঁকিতে থাকেন, নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে আপনি সহজেই সীমান্ত পেরিয়ে অন্যপাশে চলে যেতে সহজেই প্রলুব্ধ হবেন।
করণ থাপার শেষের দিকে লিখেছেন, কৃষাণ রেড্ডিকে কারো বলা উচিত যে, যদি যুক্তরাষ্ট্র নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে অর্ধেক ভারতীয় সেখানে চলে যাবেন। প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা তারচেয়েও বেশি হতে পারে। লেখার শুরুর দিকে করণ থাপার লিখেছেন, সত্যি বলতে কি, আজকের এই পরিস্থিতির জন্য আমি অভিযোগের আঙুল প্রথমে হেনরি কিসিঞ্জারের প্রতি তুলতে চাই। ১৯৭০-এর দশকে এই মার্কিন কূটনীতিবিদ বাংলাদেশকে একটি আন্তর্জাতিক তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উল্লেখ করেন। যুদ্ধ পরবর্তী ওই সময়ে, অবশ্য বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমনটাই ছিল। সে সময়ের টেলিভিশন সংবাদে বাংলাদেশে বন্যা দুর্গত অঞ্চলের ছবিও ছিল নিত্যনৈমেত্তিক ঘটনা। তাই কিসিঞ্জারের সংজ্ঞা সে যাত্রা টিকে গিয়েছিল। আজকের বাংলাদেশ অবশ্য ভিন্ন এক দেশ। বাংলাদেশের ব্যাপারে পৃথিবীর দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সময় লাগলেও, আমি অন্তত এই ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। আর আমার মতো ভারতবাসীরাও বাংলাদেশ নিয়ে সেই ৭০-এর দশকের আদ্যিকালের ধারণা রাখা উচিত নয়। অথচ গত সপ্তাহে আমাদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কে রেড্ডি সেই কাজটাই করেছেন।