মসজিদ নির্মাণের জন্যে ১ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা হয়েছে পাব : ২১ এপ্রিল চ্যানেল এসে ফান্ড রেইজিংয়ে সবার সহযোগিতা চেয়েছে আইজলওয়ার্থ দ্বীন সেন্টার

ওয়েষ্ট লন্ডনের হাউন্সলো বারাধীন আইজলওয়ার্থ এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকা রিচমন্ড, টুইকেনহাম, উইটন, হ্যানওয়ার্থ ও ব্রেন্টফোর্ড এলাকায় কোন মসজিদ বা সেন্টার নেই। তাই এলাকায় বসবাসরত মুসলিম কমিউনিটি দীর্ঘদিন যাবত একটি মসজিদের স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। তাদের সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। আইজলওয়ার্থ দ্বীন সেন্টার (আডিসি) মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য ইতোমধ্যেই প্রায় মিলিয়ন পাউন্ডে একটি পাব কিনেছে, সেজন্য তারা কাউন্সিল থেকে প্লানিং পারমিশনও পেয়েছে। কিন্তু বিল্ডিংয়ের রিফার্বিশমেন্ট কাজের জন্য তাদের ৫শ‘হাজার পাউন্ডেরও বেশি অর্থের প্রয়োজন। কাজ শেষ হলে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে পারবেন। এজন্য এই রামাদ্বানকে সামনে রেখে তারা ব্যাপক ফান্ড রেইজিং প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে ২১ এপ্রিল, বুধবার সেন্টারের পক্ষ থেকে চ্যানেল এস এ লাইভ চ্যারিটি আপিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইডিসি‘র বিস্তারিত কার্যক্রম, প্রজেক্টের বর্তমান ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও ফান্ড রেইজিং তৎপরতা ইত্যাদি কমিউনিটির সামনে তুলে ধরতে ১১ এপ্রিল লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের সাথে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাখেন সেন্টারের চেয়ার মাসুদুর রহমান, প্রজেক্ট প্রেজেনটেশন দেন এমসি মেম্বার আজিজ বারী, কোরআন তেলাওয়াত ও দোআ পরিচালনা করেন আইডিসি ইমাম শায়খ আবু সাঈদ আনসারী। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আইডিসি মেম্বার, সাংবাদিক আকবর হোসেন।

দ্যা জর্জ ইন পাব ক্রয় :

২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে প্রায় ১ মিলিয়ন পাউন্ড দামে একটি কমিউনিটি সেন্টার উইথ প্রেয়ার ফেসিলিটিজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্যা জর্জ পাব ক্রয় করা হয়। তারপর দীর্ঘ তিন বছর নানা চেষ্টা তদবিরের পর ২০১৯ সালে লোকাল কাউন্সিল এই সেন্টারকে প্লানিং পারমিশন দেয়। শীঘ্রই এর রিফারবিশমেন্ট কাজ শুরু করতে হবে। এজন্য ৫০০ হাজারে পাউন্ডের উপরে ফান্ডের প্রয়োজন। এর মধ্যে অন্তত ২৫০ হাজার পাউন্ড হলে কাজ শুরু করা যাবে এবং বাকী ২৫০ হাজার পাউন্ড লাগবে পুরো কাজ সম্পন্ন করে সেন্টারকে চালু করা উপযোগী করতে।

আইজলওয়ার্থ দ্বীন সেন্টার (আইডিসি), Charity No.: 1143215
আইজলওয়ার্থ দ্বীন সেন্টার ওয়েস্ট লন্ডনের হাউন্সলো বারায় অবস্থিত একটি মসজিদ ও কমিউনিটি সেন্টার। ২০১০ সালে এই সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়। উক্ত বারার আইজলওয়ার্থ, রিচমন্ড, টুইকেনহাম, উইটন, হ্যানওয়ার্থ ও ব্রেন্টফোর্ড এলাকায় কোন মসজিদ বা ইসলামিক সেন্টার নেই। দীর্ঘদিন ধরে অত্র এলাকায় বসবাসরত মুসলমানরা বিশেষ করে বাংলাদেশি কমিউনিটি বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় আইডিসি‘র জন্ম হয়। অত্র এলাকার মুরুব্বীরা সব সময়েই একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন। তাদের অনুপ্রেরণায় এবং কিছু উদ্যমী তরুণদের নিরলসপ্রচেষ্ঠার মাধ্যমে আইডিসি আইজেলওয়ার্থ এলাকায় মসজিদ ও কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠার প্রকল্প হাতে নিয়ে নিয়েছে।
এতোদিন ধরে আইডিসি ‘আইজলওয়ার্থ পাবলিক হল‘ (IPH) ভাড়া করে নিয়মিত জুমুআর নামাজ, তারাবীহ, মুসলিম ছেলেমেয়েদের জন্য দ্বীনি শিক্ষার জন্য সেটারডে স্কুল – আল ফাতিহা সহ নানা কার্যক্র্রম চালিয়ে আসছে। প্রতিনিয়তই জুমুআর নামাজে মুসুল্লী ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে (যদিও কভিড পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে জুমুআ বন্ধ রয়েছে। তবে বাচ্চাদের জন্য অনলাইন স্কুল চালু রাখা হয়েছে)। কিন্তু একটি নিজস্ব স্থায়ী জায়গা না থাকলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সহ অন্যান্য কার্যক্রম বিশেষ করে বাচ্চাদের দ্বীনি শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন এবং ব্যয়বহুলও বটে। তাই সংগঠনের ট্রাষ্টি ও ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যরা স্থায়ী ঠিকানা খুঁজতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে আইজলওয়ার্থে দ্যা জর্জ পাব কেনার সুযোগ আসে।

ফান্ড রেইজিং কার্যক্রম :

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা জানান, বর্তমানে তাদের কাছে প্রায় ৬০/৬৫ হাজার পাউন্ডের মতো ফান্ড আছে। পবিত্র রামাদ্বানে তারা ফান্ড রেইজিংয়ের জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। তাদের টার্গেট হচ্ছে ১শ‘টির মতো জাষ্টগিভিং পেইজ খোলা যা‘ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং ধীরে ধীরে তারা লক্ষ্যে পৌঁছে যাচ্ছেন। ছোট্ট ছেলেমেয়েরাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। তারাও বড়দের পাশাপাশি মসজিদের জন্য ফান্ড সংগ্রহে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ইতোমধ্যে ফ্রেন্ডস অব আইডিসি নামে বিভিন্ন মসজিদ, ইসলামিক সেন্টার ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সাথে জুম মিটিং করা হয়েছে। সবার কাছ থেকে খুবই ইতিবাচক ও আশাব্যঞ্জক সাড়া পেয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

আইডিসি‘র ভিশন :
কমিউনিটির মানুষের শারিরীক ও মানসিক জীবনমানের উন্নয়নমূলক সেবা, ধর্মীয় ও কালচারাল বোধের বিকাশ ও জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনসহ ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের প্রত্যয় নিয়ে আইডিসি যাত্রা শুরু করে।

বর্তমান কার্যক্রম :

আইজেলওয়ার্থ পাবলিক হলে জুমুআ, তারাবীহ ও আল ফাতিহা ইসলামিক স্কুল (সেটারডে স্কুল), এমপ্লয়মেন্ট, আলোচনা, ওয়াজ, সেমিনার, ছেলেমেয়েদের উপযোগী অনুষ্ঠান, মহিলা পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, অন্যান্য ফেইথ গ্রুপের সাথে যৌথ অনুষ্ঠান, ফুড ব্যাংকের জন্য খাবার সংগ্রহ ও বিতরণসহ নানাবিধ কার্যক্রম চালু রয়েছে।

ঈদ ইন দ্যা পার্ক

এটি আমাদের এলাকায় একটি অত্যন্ত জনপ্রিয়, সু্শৃংখল, আনন্দময় ও স্বতঃস্ফূর্ততায় ভরপুর আইডিসি আয়োজিত ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠান – ঈদ ইন দ্যা পার্ক। বছরে দু‘বার ঈদের সময় স্থানীয় পার্কে পরিবারের সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে অংশগ্রহণ করেন। পার্কে নামাজের পর বাচ্চাদের উপযোগী নানা বিনোদনমূলক আয়োজন থাকে এবং হালকা আপ্যায়নের ব্যবস্থাও রাখা হয়। এতে বাংলাদেশী কমিউনিটির বাইরেও অন্যান্য কমিউনিটির মানুষ স্বপরিবারে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

করোনা ভাইরাস লকডাউন

করোনার মাঝেও আমাদের কার্যক্রম থেমে নেই। আইডিসি লোকাল বিজনেস মালিকদের সহযোগিতায় পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ ফ্রন্টলাইন অফিসার, কর্মীদের মাঝে খাবার বিতরণ করে। এলাকার বয়স্ক মানুষদের জন্য ঔষধ সংগ্রহ এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ প্রদানও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা

সেন্টারটি চালু হলে এখানে ৫ ওয়াক্ত নামাজ, ছেলেমেয়েদের ইসলামী শিক্ষা, বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান, ট্রেনিং ও দক্ষতাবৃদ্ধি কর্মসূচী থাকবে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এলাকার মানুষের কল্যাণে নানা সেবামূলক কার্যক্রম, সবার জন্য অপেন ডে, এক্সিভিশন, ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ইস্যূতে পারস্পরিক আলাপ আলোচনা ও গবেষণার ভিত্তিতে পরামর্শ প্রদান, সর্বোপরি আগামী প্রজন্মের জন্য তাদের বিশ্বাসের লালন, চারিত্রিক মাধুর্য এর বিকাশ ও সুনাগরিক তথা আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবার সুবিধাসহ একটি অত্যাধুনিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য ।

শেষকথা

পরিশেষে, আগামী ২১ এপ্রিলের চ্যানেল এস লাইভ আপিলকে সফল করে তোলার জন্য আইডিসির পক্ষ থেকে আকুল আহবান জানাচ্ছি। আল্লাহর ঘর মসজিদের রিফার্বিশমেন্ট কাজের জন্য কমিউনিটির সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। এই আইডিসি‘র মাধ্যমেই আমাদের মুরুব্বীদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আল্লাহতাআলা আমাদেরকে সে তওফিক দান করুন।

Advertisement