ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: বছর পঁচিশ আগে ইংল্যান্ডের ফুটবল দলের ম্যানেজার ছিলেন গ্লেন হডল। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সাথে পূর্বজন্মের কাজের সম্পর্ক নিয়ে তিনি একটি হৃদয়বিদারক মন্তব্য করে বসেন। সেখানে তার সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তাকে চাকরী হারাতে হয় এবং বহু বছর তিনি সামাজিকভাবে বয়কট অবস্থায় থাকেন। তখন কিন্তু তার বাক-স্বাধীনতার কথা কেউ বলেনি।
জার্মানীতে নাৎসীদের পক্ষে কিছু বললে বা হলোকসট্ সম্পর্কে আপত্তিককর কিছু বললে শাস্তির বিধান আছে। কেউ তাদের বাক-স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না।
আমাদের দেশে মুক্তচিন্তার একজন সাংবাদিক হিন্দু ধর্মের দেবীকে নিয়ে একটি অনাকাঙ্খিত বক্তব্য দেয়ার পর তীব্রভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন। তখন কিন্তু আমরা তার বাক-স্বাধীনতার কথা বলিনি।
এসব উদাহরণের মানে হচ্ছে বাক-স্বাধীনতা পৃথিবীর কোথাও আনলিমিটেড বা অসীম না। পৃথিবীর বহু দেশের সংবিধান ও আইনে বাক-স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
যৌক্তিক মাত্রায় ও জনস্বার্থে হলে এসব সীমাবদ্ধতা আরোপ স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য।
সমস্যা হচ্ছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (দ:) এর বিষয়েও বাক-স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতার থাকা উচিত- এটা যেন কেউ কেউ মানতে চান না। ফ্রান্সের এখনকার ঘটনার দিকে তাকালে আমরা তা বুঝতে পারি।
ফ্রান্সে তার ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে যা হচ্ছে তা অবশ্যই নিন্দনীয়। জেসাসকে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করলে তার অনুসারীদের কিছু না এসে গেলে তাকে নিয়ে তা হয়ত করা যাবে। কিন্তু আমাদের নবীকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে তার অনুসারীদের মনে আঘাত লাগলে তা থেকে অবশ্যই সবার বিরত থাকা উচিত। কারণ বাক-স্বাধীনতার সীমারেখা টানা হয় প্রধানত মানুষের ওপর এর প্রভাবকে (যেমন মানহানি, ধর্মীয় অনুভূতি, অপরাধে উস্কানি) বিবেচনায় রেখে। এসব বিবেচনায় বহু বিষয়ে যদি বাক-স্বাধীনতার সীমা মানা হয়, পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ধর্মের সবচেয়ে বড় নবী সম্পর্কে তা কেন করা যাবে না?
কেউ কেউ বলছেন, ফ্রান্সে বসতি গড়লে তাদের মতো মন-মানসিকতার হতে হবে মুসলমানদের। তাদের প্রশ্ন ফ্রান্সে তাহলে থাকতে গেছে কেন মুসলমানরা? আমার মতে, এসব বলা অযৌক্তিক। কারণ, ফ্রান্সে মুসলমানরা গেছে প্রধানত সেসব আফ্রিকান দেশ থেকে যেখানে ফ্রান্সের চরম নিপীড়নমূলক ঔপনিবেশিক শাসন ছিল, যেসব দেশে তারা যুদ্ধ বাঁধিয়েছে এবং যেসব দেশে তেল-গ্যাস সম্পদের ওপর তাদের দখলদারিত্ব বজিয়ে রেখেছে। যেসব দেশের সম্পদ লুট করতে তারা গিয়েছিল সেখানে গিয়ে কি তারা তাদের সাথে মানানোর চেষ্টা করেছিল? তাহলে তাদের ভিকটিমদের একাংশ বাধ্য হয়ে তাদের দেশে বসতি গড়ে নিজের ধর্মীয় মূল্যবোধকে কেন বিসর্জন দিবে?
মহানবীর (দ:) ব্যাঙ্গচিত্র নিয়ে ধর্মীয় আবেগে তাদের প্রতিবাদ সমর্থন করি। কিন্তু ধর্মীয় উন্মাদনায় হত্যা কোনভাবে সমর্থন করি না। আমাদের নবী (দ:) নিজেই উনার নিগ্রহকারী ও অবমাননাকারীদের এমন শাস্তি দেননি। এসব হত্যা বরং নিষ্ঠুরভাবে মানুষের জীবনের অধিকার কেড়ে নেয়, আমাদের শান্তির ধর্ম সম্পর্কে ভুলবার্তা দেয়, বিশ্বব্যাপী বহু মুসলমানকে নানান ভোগান্তিতে ফেলে।
ধর্মীয় উন্মাদনা নিন্দনীয়। তবে ধর্মীয় আবেগকে আঘাত করে যারা এসব উস্কে দেন তাদের কর্মকাণ্ডও নিন্দনীয়। যেসব মুসলিম শাসক অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় থাকতে ফ্রান্সের মতো দেশে এসব কাজের প্রতিবাদ করেন না তারাও নিন্দনীয়।