ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: মারাত্মক অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে মাদক চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন মালয়েশিয়ার মালিন্দো এয়ারের একজন ফ্লাইট এটেনডেন্ট জাইলি হেনা জয়নাল (৪০)। তিনি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় ধরা পড়েন। এ সময় তার নিম্নাঙ্গে অন্তর্বাসের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয় হেরোইন। ব্যাস, আইনের আওতায় পড়ে যান জাইলি হেনা জয়নাল। বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে আদালত। এতে তাকে সাড়ে নয় বছরের জেল দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন নিউ ইয়র্ক পোস্ট। এতে বলা হয়, জাইলি হেনা জয়নালের ৯ বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে।
সে জন্ম নিয়েছে মারাত্মক জটিলতা নিয়ে। প্রচন্ড ব্যথা সহ্য করে তাকে বাঁচতে হচ্ছে। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক দফা তার অপারেশন করানো হয়েছে। এতে জাইলি হেনা জয়নালের পরিবার মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটে পড়ে। এ অবস্থায় ওই পরিবারটিকে মেডিকেল খরচে সহায়তা করতে অর্থ দান করতে স্টাফদের প্রতি ২০১৮ সালে ইমেইলে আহ্বান জানায় মালিন্দো এয়ার।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের রিপোর্টে বলা হয়েছে বৃহস্পতিবার ভিক্টোরিয়া কাউন্টি কোর্টের বিচারক মাইকেল কাহিল বলেছেন, মাদক পাচারের জন্য তিন মাস ধরে প্রাকটিস করেছেন জাইলি হেনা জয়নাল। তিনি বালিশের মতো জিনিস দুই পায়ের ফাঁকে রেখে স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটা অভ্যাস করেছেন। ওই বালিশের মতো প্যাকেটে রাখা হতো বিশাল পরিমাণের হেরোইন। এভাবেই দুই উরুর মাঝখানে অন্তর্বাসের ভিতর তিনি মাদক পাচার করতেন ফ্লাইট ব্যবহার করে। কর্মকর্তারা বলেছেন, মাদক পাচারের একজন বড় প্লেয়ার জাইলি হেনা জয়নাল। তিনি লাখ লাখ ডলারের হেরোইন নিয়ে যেতেন মেলবোর্নে। ২০১৯ সালের ৬ই জানুয়ারি বর্ডার গার্ড এজেন্টদের মুখোমুখি হন তিনি। ওই পার্সেলের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাকে তল্লাশির জন্য আলাদা করে ফেলেন তারা। ওই সময় তাদেরকে জাইলি হেনা জয়নাল বলেছিলেন তিনি ভেবেছিলেন কোনো এক রকম মাদক বহন করছেন তিনি। তবে সেটা যে হেরোইন ছিল তা তিনি বুঝতে পারেন নি।
বিচারক মাইকেল কাহিল বলেছেন, আট প্যাকেট হেরোইন পাচার করেছেন জাইলি হেনা জয়নাল। একে বলা হতো ‘টিকেট’। এর প্রতিটি প্যাকেটের ওজন প্রায় ২.২ পাউন্ড। এই হেরোইন তিনি ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় বহন করে নিয়ে যান। বিনিময়ে প্রতিটি প্যাকেজের জন্য তাকে দেয়া হতো ১৭০০ ডলার। তিনি মালয়েশিয়া ফেরার পরই এই অর্থ পেয়ে যেতেন। মাদক পাচারের একটি অভিযোগ স্বীকার করেছেন জাইলি হেনা জয়নাল। এ জন্য তাকে সাড়ে ৯ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। বিচারক মাইকেল কাহিল বলেছেন, পাচার করা হেরোইনের বাজারমূল্য প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
প্রথম দিকে কাপকেক এবং টাপারওয়্যার বিক্রি করে মেয়ের চিকিৎসার খরচ যোগানোর চেষ্টা করেছেন জাইলি হেনা জয়নাল। কিন্তু তিনি ও তার স্বামী প্রচন্ড আর্থিক সঙ্কটের কাছে নত হয়ে পড়েন। সাহায্য চান অন্যদের। জাইলি হেনা জয়নালের স্বামীও একজন ফ্লাইট এটেনডেন্ট। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিনি।
আর্থিক অনটনের এক পর্যায়ে এক বন্ধু এগিয়ে যান তাদের কাছে। তিনি জাইলি হেনা জয়নালকে কিছু একটা বহন করে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব দেন। সেই থেকে শুরু।