যত টাকাই লাগুক না কেনো সরকার প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন সংগ্রহ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা দেশের সকল নাগরিককে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেবো বলে ঘোষণা করেছি। এজন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য যত টাকাই প্রয়োজন হবে আমরা সেই টাকা দেবো।মঙ্গলবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।ভ্যাকসিন সংকট কেটে যাওয়ার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ভারত ভ্যাকসিন রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা সাময়িকভাবে সমস্যায় পড়ে গেছি। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বর্তমানে আমাদের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এখন আর কোন সমস্যা হবে না। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সব কোম্পানির সাথে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। আশা করছি জুলাই মাস থেকে আরও ভ্যাকসিন আসবে। ব্যাপকভাবে ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করবো।স্বাস্থ্যখাতকে সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, গত বছর আমরা করোনার প্রথম ঢেউ সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। সেই অভিজ্ঞতায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। মহামারি মোকাবিলা করে জনস্বাস্থ্য ও জনজীবন সুরক্ষা করতে আমরা সক্ষম হবো ইনশাল্লাহ।
করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যখাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থার কথা জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ এখনও বিদ্যমান থাকায় যেকোন জরুরি চাহিদা মোকাবিলায় আমরা এ বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রেখেছি। দ্রুততম সময় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১০ হাজার চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যখাতে অভিঘাত থেকে মুক্তি পেতে সমন্বিত বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। বাজেটে এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছিল পৃথিবীর সব জায়গায় আমরা যোগাযোগ করি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দেওয়ার আগেই আমরা টাকা পাঠিয়ে ভ্যাকসিন বুক করেছি।তিনি বলেন, ভ্যাকসিন কেনার জন্য বাজেটে আমরা ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি। বিভিন্ন উৎস হতে ইতোমধ্যে এক কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করেছি।যারা বিদেশ যাচ্ছেন তাদের আগে ভ্যাকসিন দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। যাতে বিদেশে গিয়ে তাদের কোয়ারেন্টাইন করতে না হয়। কর্মস্থলে সরাসরি যেন যেতে পারে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। কোন ভ্যাকসিন কোন বয়স পর্যন্ত দেওয়া যাবে তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে‑ তা বিবেচনায় রেখে আমরা স্কুল থেকে শুরু করে সকলে যাতে ভ্যাকসিন পায় সে ব্যবস্থা নিয়েছি। এর মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন খুলতে পারে সেই ব্যবস্থা নেবো।বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসে সারা বিশ্ব যখন ক্ষতিগ্রস্ত এমন সময় আমরা বাজেট দিয়েছি। একদিকে সারা বিশ্ব করোনায় আক্রান্ত, অপরদিকে আমাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। একই সময় বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। এই তিনটি গৌরবময় অধ্যায়ের মাঝে করোনায় জর্জরিত।তিনি বলেন, মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব সত্ত্বেও সরকারের পদক্ষেপে আমাদের অর্থনীতি পূর্ণাঙ্গভাবে পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। আমাদের সরকার সংকটকালে দেশের মানুষের পাশে আছে। মানুষের পাশে থাকবে। জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, জীবন-জীবিকার সুরক্ষা দেওয়া এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কোন উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন হলে দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। মানুষের পাশে আমরা দাঁড়াবো।