ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
ঐক্য ফ্রন্টের ২য় দফা সংলাপ এবং তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে একটি গল্পের কথা মনে হলো – এক ভদ্রলোক ঘোড়ায় চড়ে একটি দোকানে গেলেন। দোকানে ঢুকার সময় তিনি ঘোড়াটিকে দোকানের বাহিরে একটি খুঁটিতে বেঁধে ভিতরে ঢুকলেন। এক দুষ্ট ছেলে তখন ঘোড়াটি নিয়ে চলে গেলো। ভদ্রলোক বাহিরে এসে ঘোড়াটি না পেয়ে রেগে আগুন হয়ে গেলেন।
তিনি দোকানিকে ডেকে বললেন ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘোড়াটি ফিরিয়ে দিতে না পারলে তিনি খুলনাতে যা করেছিলেন তা আবার করবেন। দোকানি তখন ভয়ে কাঁপতে শুরু করলেন। কারণ ঘোড়ার কোথায় গেলো কিংবা কিভাবে গেলো তা তিনি জানেননা। সুতরাং তিনি কি ভাবে বাহির করবেন? তার উপর ঘোড়ার মালিকের খুলনার ঘটনার পুনরাবৃত্তির হুমকি তার ভয় আরো বাড়িয়ে দিলো। হটাৎ করে ছেলেটি ঘোড়া নিয়ে হাজির। ভদ্রলোক তখন খুশি হয়ে ঘোড়া নিয়ে চলে যাওয়ার সময়, দোকানি তাকে খুব জোর করে ধরলেন খুলনাতে তিনি কি করেছিলেন তা বলার জন্য। ভদ্রলোক তখন বললেন খুলনাতে এভাবে আমার একটি ঘোড়া চুরি হয়ে গিয়েছিলো। অনেক খুজাখুজির পরে ঘোড়া না পেয়ে কোন উপায় না দেখে তিনি অবশেষে ৩০ মাইল রাস্তা হেটে এসেছিলেন!!!
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই কয়েকদিনের কথাবার্তা কিংবা হুঙ্কার আর ২য় সংলাপের পর অভিব্যক্তি উপরের গল্পের সাথে খুবই মিল রয়েছে। বিশেষ করে মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মনসুর কিংবা কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য ছিলো খুব বেশি বেসামাল। আমার মনে হয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও তাদের এই অতিউৎসাহী বেসামাল বক্তৃতায় খুব খুশি ছিলেননা। তবে তাদের দোষ দিলে ভুল হবে। বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে তাদের গ্রহণ যোগ্যতা, নীতি, লক্ষ্য ও আদর্শ প্রমানের জন্য এর কোন বিকল্প ছিলোনা। আপাত দৃষ্টিতে তারা বিএনপিতে তাদের এই হুঙ্কার দিয়ে সফল ভাবে অভিষিক্ত হয়েছেন। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে তাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রচন্ড অভাব রয়েছে। তাদের সংলাপের সুপারিশ প্রথম দফায় শেখ হাসিনার গ্রহণকে ধরে নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা সরকারের দুর্বলতা আর সেজন্য খুশিতে গদগদ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অসংলগ্ন কথাবার্তা এমনকি নির্বাচন কমিশনকে আঙ্গুল উঁচিয়ে দেশ ছাড়ার হুমকি প্রদান করতে দ্বিধা বোধ করেননি। তারা ধরে নিয়েছিলেন তাদের হুক্কা ধমকে কাজ হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় যখন শেখ হাসিনা শক্ত অবস্থান নিলেন তখনই কেবল তাদের ভাষার পরিবর্তন হতে শুরু করলো। রাজনীতিতে অপরিপক্ষ ও অদূরদর্শীদের স্থান নাই। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এখন তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবেন এবং নির্বাচনে ও অংশ গ্রহণ করবেন। নির্বাচন এলেই এক শ্রেণীর ফটকাবাজদের দেখা মেলে। যারা নিজেদের জাহির করতে গিয়ে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। আশা করবো এবারের নির্বাচনে ফটকাবাজরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হবেননা।