আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস রবিবার (১৬ জুলাই)। সেনা সমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ধানমন্ডির বাসভবন সুধা সদন থেকে গ্রেফতার করা হয় শেখ হাসিনাকে। তাকে প্রায় ১১ মাস রাখা হয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ কারাগারে। দিনটিকে ‘গণতন্ত্র অবরুদ্ধ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।গ্রেফতারের কয়েক দিন আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে দেখতে গেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। এরপরই ১৬ জুলাই ভোর রাতে সুধা সদন ঘিরে ফেলে যৌথ বাহিনী। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে ঢাকার নিম্ন আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।সেদিন শেখ হাসিনা আদালতের গেটে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩৬ মিনিটের বক্তৃতায় তৎকালীন অবৈধ সরকারের হীন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে দেশবাসীর উদ্দেশে নিজ হাতে আবেগঘন একটি খোলা চিঠিও লেখেন তিনি।শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ১১ মাস বন্দিজীবন কাটাতে হয় তাকে। সেই সময় বিশেষ কারাগারের পাশেই সংসদ ভবন চত্বরে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করে বিচার প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়।গ্রেফতার হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলটির প্রবীণ নেতা তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিল্লুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন।শেখ হাসিনার অবর্তমানে শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখেন জিল্লুর রহমান ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। নেতাদের মধ্যে সৃষ্ট দ্বিধাবিভক্তিও দূর করেন তারা দুজন। পাশাপাশি শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলন চালিয়ে যান আপসহীনভাবে। কারাবন্দি আওয়ামী লীগ সভাপতির মুক্তির দাবিতে সারা দেশে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করে আওয়ামী লীগ। প্রায় ১ কোটি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলন তরান্বিত করা হয় এবং সেনা সমর্থিত সরকারের ভিত নড়বড়ে করে তোলে ওই কর্মসূচি।
এদিকে কারাগারে শেখ হাসিনার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে। একপর্যায়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের ১১ জুন আট সপ্তাহের জন্য জামিন দেওয়া হয় শেখ হাসিনাকে। মুক্ত শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসেন তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। চিকিৎসা শেষে ওই বছরের ৬ নভেম্বর দেশে ফিরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। আওয়ামী লীগের আন্দোলন তখন আরও গতি পায়। অবশেষে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন সেনা সমর্থিত সরকার। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।আওয়ামী লীগ সভাপতির কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে রবিবার (১৬ জুলাই) ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা করবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ।কারাবন্দি দিবসে যার যার অবস্থান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দেশবাসীকে প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একইসঙ্গে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সব বাঙালির হৃদয়ে দেশপ্রেমের বহ্নিশিখা প্রজ্বলিত করে সংকট জয়ের ঐক্যবদ্ধ সুরক্ষাব্যুহ সৃষ্টি করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।