ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: সোনা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ছে বেসরকারি উড়োজাহাজ প্রতিষ্ঠান ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস লিমিটেড। এমন অভিযোগ ওঠছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। উড়োজাহাজ থেকে দফায় দফায় চোরাচালানের সোনা উদ্ধার করেছে ঢাকা কাস্টম হাউস এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। চোরাচালানে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকারও করেছেন এয়ারলাইনসটির কর্মীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, সবশেষ মাসকাট থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইট থেকে ৭ কেজি ২৯০ গ্রাম সোনা উদ্ধার করে ঢাকা কাস্টম হাউস। এর বাজারমূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। এর আগে গত বছর ১১ জানুয়ারি শাহজালাল বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস থেকে ৪ কেজি ৬৪০ গ্রাম সোনা উদ্ধার হয়। একই বছরের ৩১ জুলাই একই বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার যাত্রী বহনকারী গাড়ির চালকের কাছ থেকে ৩ কেজি ৭১২ গ্রাম সোনা উদ্ধার করে কাস্টমস, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর ১৭ লাখ টাকা মূল্যের তিনটি সোনার বারসহ আটক হন ইউএস-বাংলার কর্মী। তার আগে ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের কেবিন ক্রু রোকেয়া শেখ মৌসুমী। একই বছরের ২০ এপ্রিল প্রায় ৭ কোটি টাকা মূল্যের ১৪ কেজি সোনা জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর ফ্লাইট থেকে ৪ কেজি ৬৪ গ্রাম সমান সোনার বার উদ্ধার হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ৪ কেজি ৬৬৫ গ্রাম সমান সোনার বার উদ্ধার করে কাস্টমস, যার বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা হওয়ার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সোনা চোরাচালানের বিষয়ে গভীর মনোযোগ রয়েছে কাস্টমসের। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে রয়েছে কাস্টমস। এয়ারলাইনসের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও তাদের নজরদারিতে রয়েছে।
বাংলাদেশ জুয়েলারি প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, এয়ারলাইনসগুলো জড়িত না থাকলে কোনোভাবেই আকাশপথে সোনা চোরাচালান সম্ভব নয়। তাদের সঙ্গে অন্যরাও জড়িত। বিমানবন্দরে ১৭টি সংস্থা কাজ করে, তাদের আড়াল করে সোনা চোরাচালান অনেক কঠিন।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি-বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, এতো দিন জানতাম সোনা চোরাচালানের সঙ্গে এয়ারলাইনসগুলোর ক্রুরা জড়িত থাকেন। তবে সরাসরি এয়ারলাইনসগুলো জড়িত না থাকলে বিপুল পরিমাণ সোনা চোরাচালান কেবিন ক্রুরা করতে পারেন কি না খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর এই সহসভাপতি।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকার ৪ কেজি ৬৪০ গ্রাম সোনা উদ্ধার করে ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রিভেনটিভ টিম। সোনার বারগুলো কালো স্কচটেপ মোড়ানো অবস্থায় ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চোরাচালান প্রতিরোধে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ফ্লাইট নম্বর বিএস৩১৬-এর যাত্রী অবতরণের সিঁড়ির নিচে ৪০টি সোনার বার পাওয়া যায়। এ বিষয়ে কাস্টমস আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর শাহজালালে তিনটি সোনার বারসহ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের কাস্টমার সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্ট ওমর ফারুককে আটক করে ঢাকা কাস্টম হাউস। বিদেশ থেকে সোনার বারগুলো নিয়ে আসা মামুন মিয়া নামে এক যাত্রীকেও আটক করা হয়। এর আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কাস্টম হাউসের প্রিভেনটিভ টিম বিমানবন্দরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে ট্রানজিট ও বোর্ডিং এলাকায় নজরদারি এবং তল্লাশি করে। আটক যাত্রী ও ইউএস-বাংলার কর্মীকে পুলিশে দেওয়া হয়।
একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১০ কেজি সোনার বারসহ গ্রেপ্তার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের কেবিন ক্রু রোকেয়া শেখ মৌসুমী। পুলিশ দুই দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে। এ সময় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারক তোফাজ্জল হোসেন।
এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর সকালে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) মৌসুমীকে প্রায় ১০ কেজি সোনাসহ গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় এপিবিএনের এসআই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে মৌসুমীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সোনা চোরাচালান আইনে মামলা করেন। মামলায় ইউএস-বাংলা থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে যোগ দেওয়া কেবিন ক্রু নেছার উদ্দিন, তার স্ত্রী, যাত্রী সুহেল খাঁ, লাকী ও বাপ্পীকে আসামি করা হয়।
২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ফ্লাইট থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকা মূল্যের ১৪ কেজি সোনা জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা। ওই দিন বিকালে ব্যাংকক থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে আসা ফ্লাইটের টয়লেটে ওই সোনা পাওয়ার কথা জানায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। তারা জানান, প্রতিটি ১০ তোলা ওজনের মোট ১২০টি সোনার বার উদ্ধার হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা দল গোপন সংবাদ পায়, ব্যাংকক থেকে আসা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের (বিএস ২১৪) ফ্লাইটের মাধ্যমে সোনা চোরাচালান হবে। উড়োজাহাজটি অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে তল্লাশি করা হয়। একপর্যায়ে বিমানের টয়লেটে পরিত্যক্ত অবস্থায় ওই বারগুলো পাওয়া যায়।
২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট থেকে ৪ কেজি ৬৪ গ্রাম সমান সোনার বার উদ্ধার করে ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রিভেনটিভ টিম। এয়ারলাইনসের (ফ্লাইট নম্বর বিএস৩২২) ১১ এ ও ১১ বি সিটের ভিতর থেকে ওই সোনা উদ্ধার করা হয়। এর বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তখন জানায় ঢাকা কাস্টম হাউস।
একই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ফ্লাইট থেকে ৪ কেজি ৬৬৫ গ্রাম সমান সোনার বার উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দা। এয়ারলাইনসের (ফ্লাইট নম্বর বিএস২০২) থেকে ওই সোনা উদ্ধার করা হয়। এর বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।