ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে স্ত্রীর পরকীয়া সইতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জাহাঙ্গীর (৪০) নামে এক ব্যক্তি। গতকাল সোমবার রাতে উজেলার গাবসারা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
স্থানীয়রা জানান, রাজাপুর গ্রামের হায়দার জমাদ্দারের মেয়ে লাভলীর সঙ্গে প্রায় ১৬ বছর আগে গোপালপুর উপজেলার উড়িয়াবাড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীরের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর তিনি রাজাপুরে ঘরজামাই হিসেবে থাকা শুরু করেন। তাদের পরিবারে দুই ছেলে রয়েছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতেন জাহাঙ্গীর। একপর্যায়ে তার স্ত্রী লাভলীর ও প্রতিবেশি আবদুর রশিদের ছেলে আমিনুল ওরফে বাবুর (২৫) মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তাদের মধ্যে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও হয়। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় জাহাঙ্গীরের মনে। স্বামীর নিষেধ সত্ত্বেও লাভলী ও আমিনুল চালিয়ে যেতে থাকে তাদের পরকীয়া। কাজের ফাঁকে জাহাঙ্গীর বাড়িতে আসলে লাভলী ও জাহাঙ্গীরের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। স্বামীর অবর্তমানে প্রায় রাতে লাভলীর ঘরে যাতায়াত করতো আমিনুল।
গত ১০ই জানুয়ারি স্বামী জাহাঙ্গীর বাড়িতে না থাকায় আমিনুল লাভলীর ঘরে প্রবেশ করলে স্থানীয় লোকজন তাদের আটক করে। এ নিয়ে গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, ইউপি সদস্য ওয়াহেদ আলীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি সালিশ বসে। সালিশে পরকীয়ার কথা স্বীকার করে লাভলী ও আমিনুল। পরে সালিশে আমিনুলকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা না পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে লাভলী। কয়েকদিন আগে ইটভাটার কাজ শেষ করে বাড়িতে এসে ঘটনার বিস্তারিত শুনে জাহাঙ্গীর। বাড়িতে আসার পর থেকেই লাভলী ও জাহাঙ্গীরের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ চলতেই থাকে। স্ত্রীর পরকীয়া ও সম্মানহানী সইতে না পেরে সোমবার রাতে বাড়ির পাশে গাছের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে জাহাঙ্গীর।
আজ মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় লোকজন জাহাঙ্গীরের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এদিকে স্ত্রীর পরকীয়ায় স্বামীর আত্মহত্যার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। লাভলী ও আমিনুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির বলেন, লাভলী ও আমিনুলের দুই বছর ধরে পরকীয়া চলছিলো। সালিশে উভয়ই পরকীয়ার কথা স্বীকার করে। বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় সালিশে সবার সম্মতিতে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু জরিমানার টাকা মেয়েটি এখনো পায়নি। আজ সকালে শুনতে পাই ওই মেয়ের (লাভলী) স্বামী আত্মহত্যা করেছে।
ভূঞাপুর থানার ওসি মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীরের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্তও কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।