জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতেই যাচ্ছে। নিজেদের হাতে এ কার্যক্রম রাখতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাত যুক্তি নাকচ করে দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইসির সচিবের কাছে রোববার এক লাইনের চিঠি দিয়ে সরকারের ওই সিদ্ধান্ত সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চিঠিতে এ কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ইসির হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা কার্যক্রম রাখার চেষ্টা আবারও ব্যর্থ হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি পেয়েছি। এটি নির্বাচন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে কমিশনাররা বসে সিদ্ধান্ত দেবেন।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নিজেদের হাতে রাখতে ৭ জুন সাত যুক্তি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয় ইসি। জবাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৭ মের একটি চিঠির বরাত দিয়ে রোববারের চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’ চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠিতে দেওয়া নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালনের অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৭ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছিল, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে সুরক্ষা সেবা বিভাগ ওই দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত। এজন্য এ সংক্রান্ত দায়িত্ব সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস অ্যামং ডিফারেন্ট মিনিস্ট্রিস অ্যান্ড ডিভিশনস’ এ সুরক্ষা বিভাগের দায়িত্বগুলোর মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। চিঠিতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ সংশোধনেরও কথা বলা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ইসির কাজ নয়। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বর্তমানে নাগরিকদের ১২২ ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ১২১ ধরনের সেবাই নির্বাহী বিভাগের অধীন বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগ দিয়ে আসছে। একটি মাত্র সেবা ইসি দিচ্ছে। এছাড়া সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের যে ব্যাখ্যা নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, তা-ও গ্রহণযোগ্য নয়। তারা জানান, সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে এ সেবা দিতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।
তবে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, এটি ভোটার তালিকার বাই প্রোডাক্ট। এছাড়া ইসির যে চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এমন জবাব দিল, সেখানে এটিসহ সাত ধরনের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা কোনো জনবল নির্বাচন কমিশনে নেই। ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্য কারিগরি জনবল ডেটা প্রসেসিং করে, অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ডেপুটিশনে নিয়োজিত কর্মকর্তারা স্মার্টকার্ড প্রিন্টিংয়ের কাজ করছেন। এসব কর্মকর্তা ২০০৮ সাল থেকে এ কাজের সঙ্গে জড়িত। এই দীর্ঘ ১২ বছর সময়কালে নানা ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ ও পারদর্শী করে তোলা হয়েছে। তারা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা। জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত আলাদা কোনো জনবল না থাকায় এসব কার্যক্রম অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের কাছে ন্যস্ত করা হলে মাঠ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিশাল একটি জনবলের প্রয়োজন হবে, যা ব্যয়সাপেক্ষ। ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে আলাদা করার লক্ষ্যে ২০০৯-২০১০ সালেও একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ লক্ষ্যে একটি সংস্থা কাজ শুরু করলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ফলে তা নির্বাচন কমিশনের কাছে রয়ে যায়। পরে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ এর মাধ্যমে এর কার্যক্রম বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে।