ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: আরো একটি বিতর্কিত প্রস্তাব পাস হওয়ার পর বুধবার হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি সব আইন প্রণেতা বা পার্লামেন্ট সদস্য পদত্যাগ করেছেন। ওই আইনের অধীনে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন রাজনীতিককে বরখাস্তের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে হংকং কর্তৃপক্ষকে। এর সামান্য পরপরই বুধবার বরখাস্ত করা হয়েছে সিভিক পার্টির আইনপ্রণেতা আলভিন ইউং, কোক কা-কি, ডেনিস কোক এবং প্রফেশনালস গিল্ড দলের আইনপ্রণেতা কেনেথ লিউংকে। এর প্রতিবাদে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি সব সদস্য পদত্যাগ করেছেন বলে খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, হংকংয়ের ৭০ আসনের পার্লামেন্টে গণতন্ত্রপন্থিদের আছে ১৯টি আসন। এর মধ্যে ৪ জনকে বরখাস্ত করার পর বহাল ছিলেন ১৫ জন। কিন্তু তারা এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তাদের পদত্যাগপত্র বৃহস্পতিবার জমা দেয়ার কথা রয়েছে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির উ চি-ওয়াই এ কথা জানিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমকে। তবে শূন্য আসনগুলোতে কোনো উপনির্বাচন দেবেন না হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম। তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ৯ মাস। এখন আর উপনির্বাচন দেয়া হবে না। প্রথমে ওই চারজন আইনপ্রণেতাকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে ও তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সহকর্মীরা একযোগে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চারজন আইনপ্রণেতাকে বরখাস্ত করাকে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন হংকংয়ের ওপর চীনের হস্তক্ষেপ আরো কঠোরভাবে বৃদ্ধি হিসেবে। তবে এ অভিযোগ বেইজিং প্রত্যাখ্যান করে। এর আগে গত জুনে হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক আরো বিতর্কিত একটি আইন পাস করে চীন। এর অধীনে বিচ্ছিন্নতাবাদ, রাষ্ট্রদ্রোহ এবং বিদেশি শক্তির সাথে যোগসাজশ এসবকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় বিপুল সংখ্যক অধিকারকর্মীদের। এর মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের অনেকাংশেই স্তব্ধ করে দিতে পেরেছে চীন। হংকং ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান উ চি-ওয়াই চারজন আইনপ্রণেতাকে বরখাস্ত প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, এখন আমরা বিশ্বের কাছে আর বলতে পারবো না যে, আমাদের এক দেশ দুই সিস্টেম কার্যকর। এর মধ্য দিয়ে সরকারি ঘোষণার মৃত্যু ঘটেছে। চীনা রেজ্যুলুশনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব। তিনি বৃটেন-চায়না যৌথ ঘোষণার অধীনে হংকং যে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা ভোগ করতো, চীনের এই রেজ্যুলুশন তার প্রতি আরো বড় আঘাত। হয়রানি করার, কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার এবং গণতন্ত্রপন্থি বিরোধীদের অযোগ্য করে দেয়ার মাধ্যমে চীনের আন্তর্জাতিক সুনাম ধ্বংস করা হচ্ছে। অন্যদিকে হংকংয়ে দীর্ঘ সময় যে স্থিতিশীলতা ছিল তাকে খর্ব করা হচ্ছে। চীনের এসব উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও।
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বেইজিংপন্থি। তিনি বেইজিং সরকারের কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের সমর্থক। এ অবস্থায় চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস স্ট্যান্ডিং কমিটি বুধবার একটি নতুন রেজ্যুলুশন পাস করেছে। এতে বলা হয়েছে, যদি কোনো আইনপ্রণেতা হংকংয়ের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন, চীনের সার্বভৌমত্বকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান, হংকংয়ের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে বিদেশি শক্তিকে আমন্ত্রণ জানান অথবা যদি জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ে এমন কোনো কাজে জড়িত থাকেন, তাহলে তাকে বরখাস্ত বা অযোগ্য ঘোষণা করা হবে। এই আইনের ফলে আদালতের দ্বারস্থ না হয়েই হংকং সরকার সরাসরি সংশ্লিষ্ট আইনপ্রণেতা বা এমপিকে বরখাস্ত করতে পারবে। কিন্তু বুধবার যে চার আইনপ্রণেতাকে বরখাস্ত করা হয়েছে তারা কখনোই হংকংয়ের স্বাধীনতাকে সমর্থন করতেন না। এ অবস্থায় বরখাস্ত হওয়া ডেনিস কোক বলেছেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বনের দাবি এবং গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করার কারণে যদি অযোগ্য ঘোষণা করা হয়, তাহলে তাতেই আমি সম্মানীত বোধ করি। জবাবে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, চার আইনপ্রণেতাকে বরখাস্ত করা হয়েছে যুক্তিযুক্তভাবে, যৌক্তিক কারণে, সংবিধান ও আইন অনুযায়ী। এক দেশ দুই ব্যবস্থা প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে এমন পদক্ষেপ অত্যাবশ্যক।