সেনাবাহিনীর বিতর্কিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত ও গৃহবন্দি মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে নির্ধারিত একটি মামলার রায় হঠাৎ স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) জান্তাশাসিত দেশটির একটি আদালতে এই রায় ঘোষণার কথা থাকলেও আচমকাই তা স্থগিত করা হয়।সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) একজন জ্যেষ্ঠ নেতার বরাতে মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে তথ্যটি জানিয়েছে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে বার্মিজ সেনাবাহিনী। এরপর বন্দি করা হয় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে।অভ্যুত্থানের পর ৭৬ বছর বয়সী গৃহবন্দি সু চির বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার। মামলাগুলো যেসব অভিযোগে করা হয়েছে, সেসব হলো- রাষ্ট্রের গোপন তথ্য পাচার, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওয়াকি টকি রাখা ও ব্যবহার, ক্ষমতায় থাকাকালে ঘুষ গ্রহণ, নিজের দাতব্য সংস্থার নামে অবৈধভাবে ভূমি অধিগ্রহণ ও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ায় গাফিলতি।
বিশ্লেষকদের মতে, গত জুন থেকে রাজধানী নেইপিদোর বিশেষ সামরিক আদালতে এসব মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।মার্কিন মিডিয়া ব্লুমবার্গ বলছে, মঙ্গলবার অং সান সু চির বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার কথা থাকলেও বাড়তি আরেক ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে হঠাৎ তা স্থগিত করা হয়।বার্মিজ সরকারের একজন কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্যগত কারণে ইতোপূর্বে আদালতের সামনে সাক্ষ্য দিতে পারেননি জাও মিন্ট মং নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু ওই ব্যক্তি এখন আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিতে চান এবং আদালত আসামী পক্ষের ওই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাতে রয়টার্স বলছে, দেশব্যাপী উত্তেজনা সৃষ্টি এবং কোভিড-১৯ প্রোটোকল লঙ্ঘনের মাধ্যমে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ভাঙার দায়ে মঙ্গলবার অং সান সু চির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবেন মিয়ানমারের একজন বিচারক। মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী এই অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে যথাক্রমে সর্বোচ্চ দুই ও তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।একইভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সু চির সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং সহ আসামী উইন মিন্টেরও একই কারাদণ্ড হতে পারে।রয়টার্স জানায়, অবশ্য রায়ের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের জান্তা সরকার অথবা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও কোনো তথ্য সামনে আনেনি। একইসঙ্গে এ বিষয়ে মুখ না খুলতে আসামী পক্ষের আইনজীবীদের ওপরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি বলছে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী- আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন বিচারক। ওইদিন আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু হলে সাক্ষ্য দেবেন জাও মিন্ট মং নামের ওই ব্যক্তি। যদিও মঙ্গলবার স্থগিত হওয়ার পরে রায় ঠিক কবে ঘোষণা করা হবে সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।