ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল আজ বৃহষ্পতিবার। এদিন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল চট্টগ্রামের লাভলেইন এলাকায় অবস্থিত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীসহ অধিকাংশ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা আজ শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে ভীড় করেন। তবে এই উৎসবের মধ্যেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে হরহামেশা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিবেন সেটা জানা থাকায় শোডাউন ঠেকাতে আগে থেকেই নগরীর লাভলেইন এলাকায় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ঢুকার প্রতিটি পয়েন্টে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে আসা সমর্থকের ঢল সামাল দেওয়া গেলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা ঠিকই এতো ব্যারিকেড অতিক্রম করে অনেকটা শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
আজ বেলা পৌনে ১২টায় বর্তমান চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দিতে আসেন। এ সময় পুলিশি ব্যারিকেড উপেক্ষা করে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নগর কমিটির অর্থ সম্পাদক সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, নোমান আল মাহমুদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচিত হলে বর্তমান মেয়রের চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করব। আগের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে পরিবেশবান্ধব, সুস্থ ও স্বাস্থ্যসম্মত চট্টগ্রাম করা হবে। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় সমন্বিত প্রয়াস নেওয়া হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করব।’
বিএনপি প্রার্থী ডা: শাহাদাত হোসেন নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন দুপুর পৌনে ২টায়। সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, যুগ্ম সম্পাদক ইয়াসিন চৌধুরী লিটনসহ প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।
এ সময় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ডা: শাহাদাত হোসেন ভোটের দিন ২৯ মার্চের পরিবর্তে ৩১ মার্চ করার দাবি জানান। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের উদ্দেশ্য যদি হয় ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করা তাহলে অবশ্যই ২৯ মার্চের পরিবর্তে ৩১ মার্চ নির্বাচনের তারিখ ধার্য করতে হবে। কারণ টানা বন্ধে ভোটাররা বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতে পারে। সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র, ইসি, আওয়ামী লীগ মিশে একাকার হয়ে গেছে। তাছাড়া চট্টগ্রামের উপনির্বাচনে মানুষ যে ভোটকেন্দ্র বিমুখ হয়ে গেছে তাদের ভোটমুখি করার দায়িত্ব সরকার এবং ইসির।’
সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা-২০১৬ এর ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় কোনো প্রকার মিছিল কিংবা শোডাউন করা যাবে না। এছাড়া প্রার্থী পাঁচজনের অধিক সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবে না। অথচ প্রধান দুই প্রার্থীই এর কয়েকগুণ বেশি নেতাকর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই দুই প্রার্থী যখন নেতাকর্মী সমেত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দিতে গেলে সে সময় অন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতেও বেগ পেতে হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী বর্তমান চসিক মেয়র কোনো ধরনের নির্বাচন কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। তবে এখনও যেহেতু প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি তাই উনার আজকের উপস্থিতি আচরণবিধি ভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে না।’
প্রসঙ্গত, আগামী ১ মার্চ চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ৮ মার্চ। ৯ তারিখে প্রতীক বরাদ্দের পরেই প্রকাশ্য প্রচারণা শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। এবার ইভিএম পদ্ধতিতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে।