২৫০ ফর্মুলা থেকে ভ্যাকসিন তৈরি, করোনা এবার নির্মূল হবে পৃথিবী থেকে!

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস নিছক সাধারণ কোন ফ্লু ভাইরাস নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জিনের গঠন বদলে প্রতিনিয়ত এই ভাইরাস নিজের চরিত্রই বদলে ফেলছে। এই ভাইরাসের বিশেষ স্ট্রেন সার্স-সিওভি-২-এর স্পাইক প্রোটিন জোড় বাঁধছে মানুষের শরীরের বিশেষ জিনের সঙ্গে। বাহক কোষ বা হোস্ট সেলের সাহায্যেই আরও সংক্রামক হয়ে উঠছে করোনা। এত বেশি নিজেকে বদলাচ্ছে এই ভাইরাস যে এর মতিগতি বোঝাই অসম্ভব হয় পড়ছে বিশ্বের বাঘা বাঘা ভাইরোলজিস্টদের কাছে। সংক্রমণ রোখার ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়াও তাই বিলম্বিত হচ্ছে। তবে আশার আলো এটাই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, ইজরায়েল এমনকি ভারতেও এই মারণ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার উপায় আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানী-গবেষকরা। কাজও নাকি এগোচ্ছেও তরতরিয়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নোভেল করোনার সংক্রমণকে ‘প্যানডেমিক’ বা বিশ্বজোড়া মহামারি ঘোষণা করেছে। চীনে এখন ভাইরাস সংক্রামিত সাত লাখের বেশি, মৃত্যু হয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি। চীনের পরেই করোনা মহামারি সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে ইতালি ও ইরানে। ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল, ব্রিটেন, আমেরিকাতেও প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। ডব্লিউএইচও’র  রিপোর্ট বলছে বিশ্বে এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মতের সংখ্যা ৬ হাজার ৫২৩ জন। আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ১ লাখ ৬৯ হাজার।

আমেরিকা দাবি করেছে আজ থেকেই তারা করোনাভাইরাসে রোখার ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করেছে। ভাইরাসকে নির্মূল করার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা। জোরদার কাজ চলছে ইজরায়েল, চীন এমনকি ভারতেও।

ভ্যাকসিন তৈরির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর কথা জানিয়ে মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থ (এনআইএইচ) সোমবার (১৬ মার্চ) প্রেস বিবৃতি জারি করে বলেছে, ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিই আছে। আজ থেকেই তার ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হবে। প্রথমে ইঁদুরের উপর ও পরে মানুষের উপর প্রয়োগ করা হবে।

সিয়াটেলের কাইসার পার্মানেন্ট ওয়াশিংটন হেল্থ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা বলেছেন, ভ্যাকসিন এখনও পরীক্ষামূলক স্তরেই আছে। আরও ১৮ মাস সময় লাগবে পুরোপুরি এই ভ্যাকসিনকে বাজারে আনতে। তার আগে নিরন্তর এর ট্রায়াল চলবে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থের তৈরি এই ভ্যাকসিনের ফর্মুলা এখনও সামনে আনেননি গবেষকরা। জানা গেছে, ৪৫ বছরের এক রোগীর উপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছিল। দেখা গেছে, সেই রোগী চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছেন। এনআইএইচের সঙ্গে এই ভ্যাকসিনের রাসায়নিক ফর্মুলা বানিয়েছে ম্যাসাচুসেটসের বায়োটেকনোলজি কোম্পানি মোডার্না। পেনসিলভানিয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালসও ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে এগিয়ে আছে। আগামী মাসেই তারা ক্লিনিকাল ট্রায়ালের রিপোর্ট সামনে আনবে।২৫০টি ফর্মুলা থেকে করোনার ভ্যাকসিন

সার্স-সিওভি-১৯ ভাইরাল স্ট্রেনের স্পাইক প্রোটিন হোস্ট সেলের সঙ্গে জোড় বাঁধার আগেই তাকে থামিয়ে দিতে হবে। বিষদাঁত ভেঙে দিলেই আর আক্রমণ করতে পারবে না করোনা, ভ্যাকসিন বানানোর মূল ফর্মুলা এটাই, দাবি করলেন অস্ট্রেলিয়ার তিন বিজ্ঞানী কেইথ চ্যাপেল, পল ইয়ং এবং ট্রেন্ট মুনরো। ইউনিভার্সিটি অব কুইনসল্যান্ডের এবং ন্যানোটেকনোলজি ল্যাবে ‘এস স্পাইক’ নামে এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শেষ।

কুইনসল্যান্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক কেইথ চ্যাপেল বলেছেন, ২৫০টি ভ্যাকসিনের ফর্মুলা বানানো হয়েছিল ল্যাবে। তার থেকেই ট্রায়ালে এস-স্পাইক ভ্যাকসিনকেই করোনা-রোধের আদর্শ ওষুধ হিসেবে মনে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। চ্যাপেল বলেছেন, এই বছরের মাঝামাঝি মানুষের উপর প্রয়োগ করা যাবে এই ভ্যাকসিন।

কী এই ‘এস-স্পাইক’ ভ্যাকসিন? অধ্যাপক এবং গবেষক মুনরো জানিয়েছেন, করোনার সংক্রামক রোগ কোভিড-১৯ এর সঙ্গে একদিকে যেমন মিডল ইস্ট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম (মার্স)-এর মিল আছে, তেমনি কিছুটা হলেও মিল আছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সঙ্গে। এই ভাইরাল স্ট্রেনের কাজই হল হোস্ট সেলের প্রোটিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে কোষে এন্ট্রি নেওয়া। ফুসফুসের দফারফা করে একে একে শরীরের নানা অঙ্গ বিকল করা। তাই গোড়াতেই যদি মোক্ষম আঘাত হানা যায় অর্থাৎ, ভাইরাল প্রোটিনকেই রুখে দেওয়া যায় তাহলে সে আর বাহক প্রোটিনের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারবে না। নতুন এই ড্রাগে রয়েছে ল্যাবে বানানো পলিপেপটাইড অর্থাৎ অ্যামাইনো অ্যাসিডের সিকুয়েন্স যা ভাইরাল প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে দেবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াবে।

চিনের বাইরে এই প্রথম কোনও ল্যাবোরেটরিতে নোভেল করোনাভাইরাসের জিনম সিকুয়েন্স তৈরি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল মেলবোর্ন হাসপাতালের ডাক্তার, পিটার ডোহার্টি ইনস্টিটিউটের ভাইরাস আইডেন্টিফিকেশন ল্যাবোরেটরির প্রধান ড. জুলিয়ান ড্রুস এবং ডোহার্টি ইনস্টিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. মাইক ক্যাটন।

ডাক্তার মাইক ক্যাটন বলেছেন, রয়্যাল মেলবোর্ন হাসপাতালে ভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে সেখান থেকেই করোনাভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্স করা হয়। টিস্যু কালচার ল্যাবে এই ভাইরাস তৈরি করে তার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

চিকিৎসক-গবেষক মাইকের কথায়, ‘গবেষণাগারে তৈরি ভাইরাস আমাদের এর প্রতিষেধক খুঁজতে সাহায্য করবে। এই ভাইরাসকে মারতে কী ধরনের অ্যান্টিবডি দরকার তার খোঁজ আমরা পেয়েই গেছি। পরবর্তী পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে।’ মাইক আরও বলেন, দ্বিতীয়বার ভাইরাসের জিনোম বিশ্লেষণ করে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হওয়া গেছে কীভাবে এই মারণ-ভাইরাসকে রোখা যাবে। ডোহার্টি ইনস্টিটিউটের আরও এক মুখ্য গবেষক জুলিয়ান ড্রুসও রয়েছেন এই প্রজেক্টে। তিনি বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার বড় চমক আনতে চলেছে। প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ নির্মূল হবে পৃথিবী থেকে।’

Advertisement