প্রবাসীর খোলা চিঠি : করোনা পুঁজি করে ঢাকায় প্রবাসী আইনজীবির বাসা দখলের চেস্টা!

সহকর্মীদের সাথে আসিফ

করোনা ভাইরাস একটি আতঙ্কের নাম এখন সারা বিশ্বে। কিন্তু কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ এটাকে পুঁজি করে শুরু করেছে তাদের নতুন ব্যবসা।
আজ সারাদিন এরকম একটা ঘটনা দেখে নিজেকে খুব অসহায় লাগছিলো।
আমার এক ঢাকা কলেজের ছোটভাই আসিফ। ১২ বছর লন্ডনে থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করে এ বছরের জানুয়ারীতে বাংলাদেশে এসেছিলো সুপ্রিম কোর্টে বার এসোসিয়েশনে পরীক্ষা দিতে। গত ১৭ মার্চ ওর লন্ডনে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু বর্তমান করোনা মহামারীর কারণে ওর ফ্লাইট বাতিল হয়। যার জন্য ওকে বাংলাদেশে থেকে যেতে হয়। ঢাকাতে মিরপুরে ১১ নম্বর সেক্শনে আসিফের বাসা। ওদের বাসাটির উপর অনেকদিন থেকে মিরপুরের এক রাজনৈতিক নেতার নজর ছিল। সেই রাজনৈতিক নেতা অনেকভাবে চেষ্টা করে বার্থ হয় আসিফের বাসাটি দখল নিতে। এক পর্যায়ে শুরু করে ক্ষমতার প্রভাব খাটাতে, তাতেও নেতাজি ব্যর্থ হন।

গত ২৮ মার্চ বাংলাদেশের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়। তাতে আসিফ হিট স্ট্রোক হয়। আসিফকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বেড রেস্টের পরামর্শ দিয়ে বাসায় ফেরত পাঠায়। আসিফের অসুস্থতার কথা এলাকায় জানাজানি হলে ওই রাজনৈতিক নেতা যেন নতুন একটা সুযোগ পেয়ে গেলেন! তিনি শুরু করলেন এলাকার মানুষদের মধ্যে একরকমের করোনা ভীতির সঞ্চার করার। তিনি প্রচার করতে শুরু করেন যে আসিফ করোনা ভাইরাস বহনকারী। কারণ ও লন্ডন থেকে এসেছে। ২৮ মার্চ রাতে এলাকাবাসী আসিফের বাসা ঘেরাও করে রাখে। এক পর্যায় মিরপুর থানা পুলিশ এসে আসিফের সাথে কথা বলেন এবং সমস্ত রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত হন যে আসিফের হিট স্ট্রোক হয়েছিল। তখন পুলিশ এলাকাবাসীদের নিশ্চিত করেন যে আসিফ করোনা ভাইরাস বহনকারী না। রাতে এলাকাবাসি পুলিশের কথা শুনে চলে যায়। কিন্তু ২৯ মার্চ দুপুর বেলা আনুমানিক ২টার দিকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল থেকে একটা এম্বুলেন্স এসে আসিফের বাসার সামনে থামে এবং দরজায় নক করে বলে তারা আসিফকে নিয়ে যেতে এসেছে করোনা কন্ট্রোল সেন্টারে। আসিফের পরিবার তাদের অবহিত করেন যে আসিফ করোনা ভাইরাস বহনকারী না। তাদের সমস্ত রিপোর্টও দেখান, কিন্তু তারা বলেন, তারা ঢাকা ১৪ আসনের এমপির নির্দেশে এসেছেন এবং একমাত্র এমপি সাহেব যদি বলেন, তবেই তারা ফেরত যাবেন অন্যথায় তারা বাসার দরজা ভেঙে আসিফকে জোর করে নিয়ে যাবেন! আসিফ তখন আমাকে ফোন করে আমাকে পুরো পরিস্থিতি জানায়। আমি তো সব শুনে অবাক হয়ে যাই। এ কোন বাংলাদেশে আছি আমরা।
পরবর্তীতে আসিফ নিজেই কুয়েত-বাংলাদেশ-মৈত্রী-সরকারি-হাসপাতাল-উত্তরা যায় এবং এখন পর্যন্ত আসিফ হাসপাতালে অপেক্ষা করছে রিপোর্টের জন্য।

জানিনা আসিফকে আরও কত- কিছুর সম্মুখীন হতে হবে। আসিফ যখন লন্ডনে ব্যারিস্টারি পাশ করে তখন ওর আশা ছিল ও বাংলাদেশে ফিরে এসে সুপ্রিম কোর্টে প্রেক্টিস শুরু করবে। তাই এ বছর শুরুর দিকে ও বাংলাদেশে এসেছিলো। আর আসিফের মতো একজন দেশপ্রেমিক যুবক এই যে বিড়ম্বনার শিকার হলো তার কে উত্তর দেবেন আমাদের সরকার।

আমরা প্রবাসে বসে যখন দেখি আমাদের মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন্য শেখ হাসিনা যখনই লন্ডনে যান আমাদেরকে উৎসাহিত করেন বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য। তিনি যেন জাতির পিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারেন। আর আজকে কিছু দলীয় কুলাঙ্গার নেতাদের জন্য আসিফের মতো যুবকদের যে হেনস্তা হতে হয় তাহলে আমরা কার উপর ভরসা রেখে দেশে আসবো !!!

চিঠির লেখক একজন ইউকে প্রবাসী এবং বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। 

Advertisement