ব্রিটবাংলা রিপোর্ট : ব্রিটেনে এসিড হামলা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিলের ভেতরে প্রায় ৪শর বেশি এসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন। দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় এসিড হামলার ভয়াবহতা বাড়ছে লন্ডনে। তাই এসিড হামলা প্রতিরোধে যাবজ্জীবন দন্ডের দাবী উঠেছে সর্বত্র।
এসিড হামলা প্রতিরোধে ৫টি দাবী নিয়ে একটি অনলাইন পিটিশনে স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র জন বিগস। এসিড হামলা প্রতিরোধে হোম সেক্রেটারীর প্রস্তাবিত নীতিমালার মধ্যে অনলাইন পিটিশিনের প্রথম দুটি দাবীর মিল রয়েছে বলেও জানান জন বিগস। এদিকে এসিড হামলার শিকার, ক্যাম্পেইনাররা এবং সাধারণ মানুষ মনে করছেন এসিড হামলা প্রতিরোধে ব্রিটেনে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিকল্প নেই।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দলীয় কনফারেন্সে এসিড হামলা প্রতিরোধে কঠোর ঘোষণা দেন হোম সেক্রেটারী এম্বার রুড। এরপর শনিবার কিছু নীতিমালার প্রস্তাব করেছে হোম অফিস। তাতে ১৮ বছরের নীচে কারো কাছে এসিড বিক্রি নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া ১৮ বছরের বেশি কেউ যদি জনসম্মুখে দুইবারের বেশি এসিড বহনে ধরা পড়েন তাকে অবশ্যই ৬ মাসের জেলদন্ড ভোগ করতে হবে।
এসিড হামলা প্রতিরোধে হোম সেক্রেটারী বা হোম অফিসের প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র বিগস। এসিড হামলার প্রতিরোধে মেয়র জন বিগস নিজেও একটি পিটিশনে স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন।
http://www.johnbiggs.org/acid_attacks
১.যথাযথ কারণ ছাড়া এসিড বহনকে ছুরি বহনের মতোই অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
২.এসিড ক্রয়ে বয়সসীমা নির্ধারণ করতে হবে।
৩.ক্যাশ দিয়ে এসিড বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড দিয়ে এসিড বিক্রি করা হলে অপরাধীকে চিহ্নিত করা সহজ হবে।
৪.এসিডকে কম করোসিভ সম্পন্ন এবং ঘন করতে নির্মাতাদের চাপ দিতে হবে যাতে করে সহজে স্প্রে করা না যায় এবং
৫.এসিড বিক্রেতাদের স্থানীয় কাউন্সিলে রেজিষ্টার করতে হবে (২০১৫ সালে কনজারভেটিভ সরকার কর্তৃক বাতিলকৃত) এবং স্পট চেকের জন্য কাউন্সিলকে ফান্ড দিতে হবে।
নির্বাহী মেয়র জন বিগসের ৫টি দাবীর মধ্যে প্রথম দুটি দাবী হোম সেক্রেটারীর ঘোষণার সঙ্গে মিল রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ মনে করছেন এসিড হামলা প্রতিরোধে যাবজ্জীবন জেলদন্ডের বিকল্প নেই। যদিও হোম অফিসের ঘোষণা বা নির্বাহী মেয়র জন বিগসের অনলাইন পিটিশন, কোথাও যাবজ্জীবনের কথা উল্লেখ নেই।
গত ১৩ জুলাই রাতে কয়েক ঘন্টার ভেতরে ইস্ট লন্ডনে ৫টি এসিড হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলার শিকার হয়েছিলেন উবার ইটস ড্রাইভার জাবেদ হোসাইন। যেখানে এসিড লাগে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা পানি ঢালার তরিকার আবিষ্কারক হলেন তিনি।
এসিড হামলাকে হেইট বা ঘৃণাজনিত অপরাধ বলে মনে করেন তিনি। এসিড হামলা প্রতিরোধে যাবজ্জীবন দন্ডের পক্ষে ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছেন জাবেদ হোসাইন।
হোম সেক্রেটারীর ঘোষণা এবং মেয়র জবন বিগসের ক্যাম্পেইনের কিছু অংশের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন জাবেদ। তবে যাবজ্জীবন দন্ডের বিধান করা না হলে এই হামলা বন্ধ বা প্রতিরোধ সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। তারপরেও নির্বাহী মেয়রের অনলাইন পিটিশনে স্বাক্ষর করতে টাওয়ার হ্যামলেটস বারার বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানান জাবেদ হোসাইন।
২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিলের ভেতরে প্রায় ৪শর বেশি এসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে ইউকেতে। এর মধ্যে লন্ডনের অবস্থা সবচাইতে ভয়াবহ। এ কারণে ভুক্তভোগিদের দ্রুত সেবা দিতে লন্ডনে পুলিশকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদানের পাশাপাশি বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।