প্রগ্রেসিভ ইয়ুথ অর্গানাইজেশন’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও পুর্ব লন্ডনের পরিচিত মুখ মোহাম্মদ আব্দুস সালাম করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১ মাস মৃত্যুর সাথে লড়াই করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি, বুধবার রয়েল লন্ডন হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১ টায় পূর্ব লন্ডনের বার্কিং আল নুর মসজিদে জানাজার নামাজ শেষে হেইনল্টের গার্ডেন অব পিস মরহুমের দাফন সম্পন্ন করা হয়।
মরহুম আব্দুস সালাম এর মৃত্যুতে তাঁর বন্ধুদের পক্ষ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে ভার্চুয়াল দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রগ্রেসিভ ইয়ুথ অর্গানাইজেশন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মনুহর আলী’র সভাপতিত্বে ও রেদওয়ান খানের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সূচিত অনুষ্ঠানে শুরুতে পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন মরহুম আব্দুস সালামের ছেলে মহাম্মাদ ফাজলে রাব্বী, মহাম্মাদ ফাজলে এলাহি ও মহাম্মাদ ফাজলে হুদা। দোয়া পরিচালনা করেন হাফিজ রশিদ আহমদ।
এরপর পর্যায়ক্রমে মরহুম সালামের দীর্ঘ সামাজিক জীবনের উপর বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান, কমিনিটি নেতা আবদুল সালাম, শিল্পপতি ইকবাল আহমেদ ওবিই, প্রাক্তন কাউন্সিলর রাজন উদ্দিন জালাল, ক্যানারি ওয়ার্ফের পরিচালনা পরিষদে সিএসআর এবং কমিউনিটি ডিরেক্টর জাকির খান, সমদুল ইসলাম সমদুল, সাবেক কাউন্সিলর সুলুক আহমেদ, হারুন মিয়া, জুনায়েদ আহমেদ সুন্দর, মো: আব্দুল মুনিম জাহিদী ক্যারল, প্রগ্রেসিভ ইয়ুথ অর্গানাইজেশন এর সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব করম আলী, প্রাক্তন কাউন্সিলার আব্দুস শুকুর, কনর আলী, এথনি নাইটিঙ্গেল, প্রাক্তন কাউন্সিলার দরস উল্লাহ, প্রাক্তন কাউন্সিলার শায়েদ আলি, প্রাক্তন কাউন্সিলার রফিক উল্লাহ, ইয়ং মুসলিম অর্গেজানাইজেশন এর প্রথম প্রেসিডেন্ট শাহাব উদ্দিন, বৃটেনের মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সানরাইজ রেডিওর জনপ্রিয় উপস্হাপক মিসবাহ জামাল, আব্দুল কাদির, গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকের সাউথ ইস্ট রিজন এর জয়েন্ট ট্রেজারার মো: আবুল মিয়া, কবি ও সাংবাদিক আবু সুফিয়ান, রাজু, আমিনুল চান, রুনু মিয়া, মুহিবুর রহমান, শফিক শিদ্দিকি প্রমুখ। সভায় শতাধিক শুভাকাঙ্ক্ষী অংশ নিয়ে মরহুম মোঃ আবদুস সালামের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়া ৭ ফেব্রুয়ারি রোববার মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে আরেকটি দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়। এ মাহফিলে দোয়া পরিচালনা করেন , টিভি ওয়ান’র পরিচালক, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শায়খ আব্দুর রাহমান মাদানী।
ভার্চুয়াল দোয়া ও আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, মরহুম আব্দুস সালাম ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ, শক্তিশালী উদ্যমী এবং নিবেদিত প্রচারক এবং সক্রিয় অগ্রগামী নেতা। ১৯৬৯ সালে প্রতিস্টিত সিলেট ফ্রেন্ড সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন, (ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, (১৯৭৩) এবং পরবর্তীতে প্রগ্রেসিভ ইয়ুথ অর্গানাইজেশন (১৯৭৯) বাংলাদেশ যুব সংগঠন ফেডারেশন এবং মাতৃভাষা অধ্যয়ন সমর্থন। ১৯৭০ সাল থেকে তিনি পূর্ব লন্ডনের বর্ণবাদ আন্দোলন, আবাসন, স্বাস্থ্য, চাকরি এবং সমান সুযোগের বিরুদ্ধে সকল আন্দলনে প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন।
তিনি তৎকালীন বর্ণবাদী এনএফের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছিলেন এবং এই আন্দোলন করতে গিয়ে নিজের জান বাজী রেখে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য। তিনি বাঙালী কমিউনিটির অন্যতম গৌরব ছিলেন। বর্ণবাদ এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে “১৯৭৮ সালের ব্রিক লেনের যুদ্ধ” এর সফল সৈনিক ছিলেন।
তিনি ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে প্রগতিশীল যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভুমিকা রাখেন এবং বাংলাদেশ যুব সংগঠন ফেডারেশন-এফবিওয়াইওতে যোগদান করেন। তিনি পূর্ব লন্ডনের বঞ্চিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে বাংলাদেশী সম্প্রদায় এবং অন্যদের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন।
বক্তারা আরো বলেন, মরহুম আব্দুস সালাম লন্ডনের জনপ্রিয় সমাজসেবক ৭০ দশকের বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য যারা লড়াই করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম, প্রগ্রেসিভ ইয়ুথ অরগানাইজেশান এর চেয়ারম্যান মরহুম সালাম টাওয়ার হ্যামলেটস ল’ সেন্টারের সেক্রেটারি ছিলেন।
এছাড়া গহরপূর এসোসিয়েশন ইউ কে এর সাবেক সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে, ২ মেয়ে ও স্ত্রী এবং অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন।
মরহুম আব্দুস ছালাম জীবনকালে বর্নবাদীদের বিরুদ্ধে সামনের কাতারে ছিলেন। তিনি অত্যন্ত সৎ সাহসী সদালাপী মানুষ ছিলেন। বালাগন্জ ওসমানী নগর এডুকেশন ট্রাস্ট, সমিতি, গহরপূর মাদ্রাসা উন্নয়ন ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য, আজীবন দাতা সদস্য নর্থইস্ট বালাগন্জ (গহরপূর) ও আরো অনেক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।
তিনি কখনও নিজের পদ বা কর্মকাণ্ডকে প্রকাশ করা পছন্দ করতেন না। আব্দুস সালাম সব সময় ভালো কাজের জন্য সবাইকে উৎসহিত করতেন।
তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। দীঘ’দিন কমিউনিটির জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন। বর্নবাদীদের প্রতিহত করতে বিগত দিনে অত্যন্ত সাহসী ভুমিকা রেখেছেন। সারাজীবন লেবার পাটি’তে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। একজন সহজ সরল, নীতিবান, ধর্মভীরু ও পরোপকারী মানুষ ছিলেন।
মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে সাউথ আফ্রিকার মসজিদ বিহীন অঞ্চলে একটি মসজিদ স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছেন, এব্যাপারের সবার সহযোগীতা কামনা করা হয়েছে।