ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: রক্ত ঝরিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের নেশায় আরো জোরালো হয়েছে প্রতিবাদের ভাষা। উত্তর থেকে দক্ষিণ- সর্বত্র লাখ লাখ মানুষ সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। গতকালের রক্তাক্ত অধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। যেন ক্ষোভে ফুঁসছে মিয়ানমার। সেনা, পুলিশের তাক করা বন্দুককে যেন ভয় পায় না উত্তেজিত জনতা। শনিবার পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে দু’জন বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে ক্ষোভ আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। এরই মধ্যে রোববার বিখ্যাত একজন অভিনেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে তার স্ত্রী দাবি করেছেন। ওদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
শনিবার দু’জন নিহত হওয়ার পর মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিউর টম অ্যানড্রু বলেছেন, তিনি ভীত শঙ্কিত। বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট থেকে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হচ্ছে। ব্যবহার করা হচ্ছে জলকামান। আর সেনারা এখন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর খুব কাছ থেকে গুলি করছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে আরো বলা হয়েছে, বন্দুকের ভয় দেখিয়ে, হত্যার ভয় দেখিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে সক্ষম হয়নি সেনাবাহিনী। ১লা ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে চলছে গণঅসহযোগ আন্দোলন। তাদের দাবি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সুচি ও অন্যদের মুক্তি। কিন্তু সামরিক জান্তা সেখানে নতুন একটি নির্বাচনের টোপ ফেলেছে। বলেছে, সেই নির্বাচনে বিজয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। পাশাপাশি এর ভিন্নমত পোষণকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। কিন্তু সেই হুঁশিয়ারি জনতাকে নিবৃত করতে পারেনি। আজ রোববারও প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে সমবেত হয়েছে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। দুটি স্থানে তারা সমবেত হয়ে নানা রকম স্লোগান দিচ্ছেন। অন্যদিকে দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে শান্তিপূর্ণ গণবিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এই শহরেই শনিবার পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন দু’জন। উত্তরের শহর মিতকিনাতে নিহতদের উদ্দেশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। যুব সমাজ মোটর সাইকেলে ব্যানারসমেত বিক্ষোভ করেছে। ছবিতে দেখা গেছে বিক্ষোভ হয়েছে মনিওয়া, বাগান এবং দক্ষিণের দাউয়ি এবং মিইকিতে।
মান্দালয়ের একজন তরুণ বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তারা বেসামরিক জনগণের প্রধানদেরকে টার্গেট করেছে। তারা টার্গেট করেছে আমাদের ভবিষ্যতকে। এ বিষয়ে নতুন গঠিত সামরিক কাউন্সিলের মুখপাত্র জাওয়া মিন তুন টেলিফোনে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি এর আগে মঙ্গলবার বলেছিলেন, সেনাবাহিনী যা করছে তা সংবিধানের অধীনেই করছে। এতে সমর্থন রয়েছে বেশির ভাগ মানুষের। তিনি সহিংসতা উস্কে দেয়ার জন্য বিক্ষোভকারীদের দায়ী করেন। উল্লেখ্য, দেশটিতে দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলছে। এতে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন জাতিধর্মের মানুষ। কবি সাহিত্যিক। পরিবহন শ্রমিক। এমন ভোদাভেদ ভুলে মান্দালয়ে বিক্ষোভ করেছেন শনিবার। সেখানে শিপইয়ার্ড শ্রমিকদের বিক্ষোভে চড়াও হয় পুলিশ ও সেনাবাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এ সময় কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছোড়ে। কিছু সময় তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি ছুড়ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তারা গুলির কার্টিজ এবং রাবার বুলেট দেখতে পেয়েছেন। এ সময় দু’জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন কিশোর এবং অন্যজনের বয়স ২০ বছর।