ব্রিট বাংলা ডেস্ক : দুর্দান্ত ফর্মে থাকার পরও প্রত্যাশিত সম্মানটুকু পাচ্ছেন না মোহাম্মদ হাফিজ। গত ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে ব্যাটিং বিপর্যয়ে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়া পাকিস্তানকে সান্তনার জয় উপহার দিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিজের সর্বোচ্চ উজার করে দিয়ে খেলেন হাফিজ।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা ৯৯* আর শেষ খেলায় ৪১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন সাবেক এ অধিনায়ক। এমন নান্দনিক পারফরম্যান্সের পরও দেড় মাসের ব্যবধানে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে জায়গা হয়নি হাফিজের।
আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজে হাফিজকে দলে না রাখার ব্যাখ্যায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) জানায়, করোনায় বায়ো-বাবল প্রক্রিয়ায় না থাকায় হাফিজকে বিবেচনা করা হয়নি। পিসিবির এমন খোড়া যুক্তি কারোই মনঃপুত হয়নি।
তার কারণ, আগের সিরিজে দুর্দান্ত পারফর্ম করার পরও দলের সেরা ব্যাটসম্যানকে কেনো বিদেশি লিগে খেলার অনুমতি দিতে হবে? পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডতো জানত হাফিজ বিদেশে লিগ খেলতে গেলে বায়ো-বাবল নিরাপত্তার বাইরে চলে যাবে, তাহলে কেন তাকে বিদেশে খেলার অনুমতি দেয়া হলো? যেহেতু অনুমতি দেয়াই হলো সেহেতু তাকে জাতীয় দলে কেন ফেরানো হলো না? দুবাইয়ে হাফিজতো বায়ো-বাবল প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই টি-টেন লিগ খেলেছে।
শুধু তাই নয়, নিউজিল্যান্ড সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরও পিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে প্রাপ্ত সম্মানটুকু পাননি হাফিজ। এ ক্যাটাগরির হাফিজকে প্রস্তাব দেয়া হয় সি ক্যাটাগরির নিম্নস্তরে থাকার। পিসিবির এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে অন্তর্ভূক্ত হননি সাবেক এ অধিনায়ক।
দেশের হয়ে ৩৭২ ম্যাচে অংশ নিয়ে ২১টি সেঞ্চুরির সাহায্যে ১২ হাজার ৫৮৯ রান সংগ্রহের পাশাপাশি অফ স্পিনে ২৪৬ উইকেট শিকার করা মোহাম্মদ হাফিজের মতো একজন তারকা অলরাউন্ডারকে ক্যারিয়ারের অন্তিম মুহূর্তে এভাবে অবমূল্যায়ন করাটা ভালোভাবে নেননি ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
পাকিস্তানকে ৩২ ম্যাচে নেতৃত্ব দেয়া ৪০ বছর বয়সী এ অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারকে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে অবমূল্যায়ন করায় পিসিবির কঠোর সমালোচনা করেছেন সাবেক তারকা ক্রিকেটার মঈন খান।
তিনি বলেছেন, মোহাম্মদ হাফিজের মতো একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে সি ক্যাটাগরিতে রাখার প্রস্তাব দেয়া সত্যিই লজ্জাজনক। সে শুধু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলায় যদি সি ক্যাটাগরিতে জায়গা পায় তাহলে আজহার আলী ও ইয়াসির শাহরা কিভাবে টেস্ট ফরম্যাটে খেলে এ ক্যাটাগরিতে থাকে?
মোহাম্মদ হাফিজের প্রতি এমন অবমূল্যায়ন করা প্রসঙ্গে রোববার পিসিবির প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম খান বলেছেন, মোহাম্মদ হাফিজের সঙ্গে পিসিবির সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্সের প্রশংসা করি। তাকে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
একজন এ ক্যাটাগরির ক্রিকেটারকে যদি সি ক্যাটাগরিতে রাখা হয় তাহলে সেটা পাগলও মানবে না! ওয়াসিম খান বলছেন হাফিজের সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ডের সুসম্পর্ক রয়েছে। তার এ কথার কোনো ভিত্তি নেই। তার কারণ, গত বছর ক্রিকেট বোর্ডের অনুমতি ছাড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে মোহাম্মদ হাফিজ, আজহার আলীরা সাক্ষাৎ করায় ভালোভাবে নেয়নি পিসিবি। তারপর থেকেই জাতীয় দলের এ অভিজ্ঞ দুই তারকার সঙ্গে বিমাতাসূলভ আচরণ করে আসছে ক্রিকেট বোর্ড।
বোর্ডকে না জানিয়ে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করার অপরাধে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে আজহার আলীকে। হাফিজকে জাতীয় দল থেকে ছেঁটে ফেলার জন্য কম চেষ্টা করেনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। নিউজিল্যান্ড সফরের আগে করোনা টেস্টের রিপোর্ট নিয়েও কম নাটক করেনি পিসিবি।
হাফিজকে করোনা টেস্টে পজেটিভ দেখানো হয়। অথচ তিনি নিজ উদ্যোগে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে করোনা টেস্ট করালে সেই রিপোর্টে নেগেটিভ আসে। এই নেগেটিভ-পজেটিভ নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনা সমালোচনা হয়। সংবাদ মাধ্যমেও এই খবর ফলাওভাবে প্রকাশিত হয়। তবে অনেক সমালোচনার পর বাধ্য হয়েই শেষ পর্যন্ত হাফিজকে নিউজিল্যান্ড সফরে পাঠায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
ক্রিকেট বোর্ডের অনুমতি না নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং করোনা টেস্টের এই নেগেটিভ-পজেটিভ নাটকের পর হাফিজকে কেন্দ্রীয় চুক্তি এবং জাতীয় দল থেকে ছেঁটে ফেলার জন্য প্রতিনিয়তই অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। অথচ মিডিয়ায় পিসিবির সিইও দাবি করছেন হাফিজের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে, এটা ‘গোয়েলবসি’ ছাড়া আর কিছু নয়!