।। জুয়েল রাজ ।।
সুনামগঞ্জের শাল্লায় ধর্মীয় পরিচয়ে, যে পরিকল্পিত হামলা, তান্ডব ভাঙচুর লুটপাট হয়েছে, স্বাভাবিক সুস্থ্য মানুষের পক্ষে তা হজম করা কষ্টকর। এই ঘটনা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা সবই চলছে। শাল্লার ঘটনার আসামীদের গ্রেফতার শুরু হওয়ার পর এক পক্ষ নিঃশ্বাস ফেলেছেন, যখন জানা গেল মূল হোতা স্বাধীন মেম্বার যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। অতএব সিদ্বান্ত নিতে আর দেরী হয়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর বাংলাদেশ সফর নিশ্চিত করতে, ইসলামী আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগই শাল্লার নাটক মঞ্চায়ন করেছে! একটি বিশাল অংশ উপসংহার টেনেছেন এইখানে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, রামু, নাসির নগর, শাল্লা একই ঘটনার পুনারবৃত্তি, একই গল্পের ভিন্ন চিত্রায়ণ শুধু।
আমাদের প্রগতিশীল অংশ, সুশীল অংশ, আওয়ামী লীগের প্রগতিশীল অংশ বারবার বলার চেষ্টা করছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে, মুজিব বর্ষে এই হামলা নিন্দনীয়। যেন সময়টা ভুল। অন্য সময় হলে এই হামলা সঠিক ছিল। বলা হচ্ছে ঝুমন ছেলেটি ভুল করেছে, অপরাধ করেছে। কিন্তু আপনি যখন বছরের পর বছর ধরে ঝুমনের ধর্ম বিশ্বাস কে ধর্ষণ করছেন। তার ইশ্বর বা দেব দেবীকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছেন, তখন সেটি অপরাধ বা ভুল হয় না কেন? অপরাধ হয় না কেন?
মামুনুল হক তো মানুষ, নবী বা রাসুল নন, যে তাকে নিয়ে কিছু বলা যাবে না। নাগরিক হিসাবে ঝুমনের বিশ্বাস নিয়ে যদি আপনি হাসি ঠাট্টা করতে পারেন, ঝুমনের ও সেই অধিকার আছে আপনার বিশ্বাস নিয়ে হাসি ঠাট্টা করার। আজকেই বাংলা ট্রিবিউনের একটা সংবাদে দেখলাম হেফাজতের কাসেমী নামের এক নেতা সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে বলছেন, ওদের ধর্মটাই তো পরিপূর্ণ না। আপনার যদি অন্য ধর্মকে পরিপূর্ণ না বলার অধিকার থাকে, তেমনি অন্য ধর্মের একজনও আপনার ধর্ম কে অপরিপূর্ণ বলার অধিকার রাখে। কিন্ত বাংলাদেশে সেটি নেই। পুরো বিষয়টা এক তরফা। সংখ্যাগরিষ্ঠতার হিসাবে আপনাকে বিশ্বাস পাল্টাতে হবে। কথা বলতে হবে।
মাগুরায়, হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানিয়ে কয়েকটি গ্রামে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখন দাওয়াত কার্যক্রম হিসাবে আপনি সেটিকে খুব সাধারণ ভাবেই দেখার সুযোগ আছে। ধর্ম প্রচারের দাওয়াত যে কেউ দিতে পারে। ঠিক বিপরীতে ভাবুন আপনার বাসায় বা বাড়িতে গিয়ে একজন চিঠি দিয়ে আসল, নামাজ রোজা বাদ দিয়ে এখন থেকে মূর্তি পূজা শুরু করুণ, আপনার ধর্মটি পরিপূর্ণ না। বিষয়টি একবার কল্পনা করতে পারেন! বাংলাদেশে যে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়, এই সত্যটাই কাউকে বুঝানো যায় না। না আওয়ামী লীগ না জামায়াত বিএনপি। মোটামুটি সবার বক্তব্য বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে ভাল আছে। বাস্তব সত্যের মুখোমুখি হতে সবাই ভয় পান। উদাহরণ হিসাবে ভারতকে সামনে নিয়ে আসেন।
ভারত কেন, পৃথিবীর সব দেশেই সংখ্যালঘুদের প্রতি নির্যাতনের ঘটনা আছে। ব্রিটেনের মত উন্নত দেশেও ধর্মীয় পরিচয়ে বা শুধুমাত্র গায়ের চামড়ার কারণেও বর্ণবাদী হামলা হয়। যেসব ঘটনাকে দূর্বৃত্ত বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যায়। বাংলাদেশের মত পরিকল্পিত ভাবে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে কিংবা সভা করে প্রস্তুতি নিয়ে আক্রমণ হয় না। এবং এইসব বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সরকার, সাধারণ মানুষ, প্রশাসন যে ভূমিকা রাখে সেই উদাহরণ আমরা উল্লেখ করিনা। আমারিকার জর্জ ফ্লয়েড এর হত্যাকান্ডের পর বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পুরো পশ্চিমা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
অথচ আজকে লন্ডনে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে একটি প্রতিবাদী মানববন্ধন দেখলাম, তাদের প্রেরিত সংবাদ মোতাবেক সেখানে যারা এসেছিলেন সবাই হিন্দু ধর্মালম্বী লন্ডনের অন্য ধর্মের একজন বাংলাদেশীর নাম দেখলাম না! তাঁদের পাশে দাঁড়াতে দেখলাম না।
পৃথিবীতে কিছুই চিরস্থায়ী নয়, বহু জাতি, রাষ্ট্র, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম হারিয়ে গেছে মানব সভ্যতা থেকে। আবার নতুন করে জন্ম নিয়েছে, পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানা ভাবে এইটাই নিয়ম। এইটাই ঘটে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। ধর্মের নামে বাংলাদেশে যে উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়ছে, এসব তারই ধারাবাহিকতা। ইসলাম ধর্মালম্বী ছাড়া বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডে ভীন্ন ধর্ম, ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী কেউ থাকতে পারবে না। এইটা চরম বাস্তবতা। হউক সেটা আগামী বিশ বছর কিংবা পঞ্চাশ, একশত বছর। ধর্মের নামে এরা এই বিতারণ প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করছে শুধু।
আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ যদি বুক টান করে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তে দাঁড়ায়, ধর্মীয় দল গুলোর সেই সাহস নেই আওয়ামী লীগের সামনে মাথা তুলে দাঁড়ায়। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আওয়ামী লীগ দাঁড়াচ্ছে না কেন? কারণ মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ, হেফাজত, কিংবা জামায়াত শিবিরে খুব একটা পার্থক্য নেই। ধর্মের অমোঘ বাণী দিয়ে ধীরে ধীরে এই প্রজন্মকে তারা তৈরী করেছে। এমন আওয়ামী লীগকেও আমরা চিনি, যারা সাঈদীকে হুজুর বলে সম্বোধন করে এবং বিশ্বাস করে সাঈদীর বিচার প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক। শাল্লার হামলার পরিকল্পনা প্রস্তুতি, বা হামলায় যারা অংশগ্রহণ করেছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতাদের গ্রামের মানুষ। আওয়ামী লীগ ভোটের রাজনীতির কথা বলে বলে, ভোটের হিসাব নিকাশ করে যে ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছে, ধর্মীয় গোষ্ঠী তিলে তিলে সেই আওয়ামী লীগকেই গ্রাস করে নিচ্ছে। যেভাবে বিএনপিকে গ্রাস করেছে জামায়াত। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাই মানসিক ভাবে উগ্র ধর্মীয় মতবাদকে লালন করা শুরু করেছেন।
আর এর মূল্য অবশ্যই আওয়ামী লীগকে চুকাতে হবে। ইতিহাস আমাদের তাই বলে। সেই কাফফারা যেন আওয়ামী লীগকে শত বছর পিছিয়ে না দেয়।
এখনো সময় আছে। ৭০/ ৭১ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ভাল সময় অতিক্রম করছে আওয়ামী লীগ। উন্নয়নের চ্যালঞ্জ, মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ সফল ভাবে অতিক্রম করতে পারলে, মৌলবাদের বিরুদ্ধে সফল হওয়ার চ্যালেঞ্জও নিতে পারবে। মামুনুল হকের বিরোধীতা যদি ইসলাম বিরোধিতা হয়৷ তাহলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হারাম, সেই ফতোয়া আওয়ামী লীগকে মেনে নিতে হবে। অন্যতায় ঝুমন দাশ কে মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে মামুনুল গংদেরও গ্রেফতার করতে হবে। আর সেটিই ন্যায় বিচার। ঝুমনের জন্য এক আইন মামুনুলের জন্য ভিন্ন আইন হতে পারে না।
করোনাকালীন সময়ে যে সব ওয়াজীগণ, ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, ধর্মের নামে মিথ্যাচার করেছেন, ভুল বার্তা দিয়েছে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এদের বিচারের আওতায় আনা যেত। বিচার করা না হউক অন্তত সতর্ক করা যেত। এইসব ওয়াজী গণই মাঠে ময়দানে আবার জমিয়ে বসেছে। গর্বাচেভের মত একই মিথ্যাচার বিশবার বলে বলে সেটিকে সত্য বানিয়ে ফেলছে।
বাংলাদেশে যতগুলো ওয়াজ মাহফিল হয়, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ৯৯ ভাগ ওয়াজে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সংস্কৃতিকে অবমানানা করে ওয়াজ করেন এরা। ইদানিং আবার শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বন্ধনা। একদল ওয়াজে এসে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর বন্ধনা দিয়ে শুরু করে, তিনি কিভাবে ইনশাল্লাহ বলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। অতএব এই স্বাধীনতার মালিক এই দেশের মুসলমান গোষ্ঠী। অনলাইনে ভিডিওটি এখনো আছে, এনায়েত আব্বাসীকে একজন প্রশ্ন রেখেছেন, হিন্দুর সম্পত্তি জবর দখল বা নির্যাতন করলে কি গুনাহ হবে আল্লাহ কি শাস্তি দিবেন?উনি উত্তরে বলেছেন, এইটা করা যদিও ঠিক না। আর যাই হউক এর শাস্তি হিসাবে আল্লাহ আপনাকে জাহান্নামে দিবেন না এইটা নিশ্চিত। তো, যে ছেলেটি প্রশ্ন রেখেছিল, সে পরের দিন গিয়ে প্রতিবেশী হিন্দুর সম্পত্তি দখল করতে কি এক মিনিট বিলম্ব করবে।
একটা করে বর্বর ঘটনা ঘটে আমরা লেখা লেখি করি, কিছু মানুষ হায় হায় করি। কিছু মানুষ ত্রাণ নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। অনেকে সহমর্মিতার পরশ বুলিয়ে আসেন। এই মানুষগুলোর জন্য হয়তো ক্ষত বিক্ষত মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখে। কিন্ত ভিতরের ক্ষতো মুছে দিতে পারেন নি।
ভারতের পশ্চিমবঙের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে অনেকের ঘুম হারাম। কে পাশ করবে। তৃণমূল না বিজেপি। তিস্তার পানি না আসুক, তবু মমতাকেই ক্ষমতায় চায় আমাদের দেশের মানুষ, কারণ বিজেপি হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক দল। তৃণমুল মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসবে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনে, তার প্রতবাদ চলছে ডানে বামে সব জায়গায়, একবার চিন্তা করুণ পশ্চিমবঙ্গের আব্বাসীর মতো, বাংলাদেশে কোন ভীন্ন ধর্মের নেতা যদি বক্তব্য রাখেন, অবস্থাটা কি হতে পারে! চিন্তা করলেই গাঁ শিউরে উঠে।
দুর্বৃত্ত শব্দের প্রতিশব্দগুলো যা বলে, দুর্জন, দুশ্চরিত্র, দুষ্ট স্বভাব, দুরাত্মা। এই পরিচয় চোর ডাকাত ধর্ষণকারী ঘুষখুর, যে কোন ধর্ম বর্ণের হতে পারে, কিন্তু সাম্প্রদায়িক নির্যাতনগুলো যখন হয় তখন আর এরা দুর্বৃত্ত নয়। একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী। কিন্তু আমরা দুর্বৃত্ত বলে বলে ধর্মীয় পরিচিয়টা গোপন করে এক ধরণের দায়মুক্তির চেষ্টা করি। বারবার বলি শান্তির ধর্ম অন্য ধর্মের প্রতি নির্যাতন কে সমর্থন করে না। কিন্ত ভুলে যাই ধর্মের নামেই এসব হয়।
বাংলাদেশের মানুষের ভিতর এক ধরণের দারুণ দুর্বৃত্ত প্রবৃত্তি কাজ করছে। সাধারণ মানুষ নয়, দায়িত্বশীল সংবাদ মাধ্যমগুলোও এই দুর্বৃত্ত প্রবৃত্তিতে আটকে গেছে। যখনই শুধুমাত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘু দোষে নিপীড়ন নির্যাতন আক্রমণ হয়, খুব সুন্দর করে সেটাকে দুর্বৃত্ত কর্তৃক হামলা, নির্যাতন, মূর্তি ভাঙা বাক্যগুলো ব্যব্যহার করে ধর্মীয় বিষয়টাকে সুন্দর করে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার ব্যাপক প্রবণতা বিদ্যমান। যার ফলে এই দুর্বৃত্ত নামক প্রজাতির সাথে আমাদের আর পরিচয় হয়না। ভিন্ন গ্রহের এই প্রজাতিটি আমরা আর চিনতে পারি না। দিনশেষে আওয়ামী লীগ বিএনপি জামায়াত এর রাজনীতিতে বিভক্ত হয়ে যায়। কিন্ত মধ্যখানে যে মানুষগুলো নির্যাতিত হয়, তাঁদের বুকের ভিতর যে রক্তক্ষরণ হয়, যে ভয় কাজ করে, পলায়নপর মানসিকতা তৈরী করে তার কোন প্রতিকার হয়না।
শাল্লার ঘটনাটি অন্তত দুর্বৃত্ত শিরোনামে আসে নাই কোথাও। মাইকে ঘোষণা দিয়ে ফেইস বুকে লাইভ করে হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান স্বয়ং সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মামুনুল হকরা যতটা না এই সব ঘটনার জন্য দায়ী তার চেয়ে বেশী দায়ী আওয়ামী লীগ। বিষাক্ত সাপকে দুধকলা দিয়ে পোষে বড় করছে। শুধু মাত্র স্থানীয় নেতা, চেয়ারম্যান, এমপিদের দলীয়ভাবে এইসব ওয়াজে উপস্থিতি বন্ধ করে দেয়া হউক। বাংলাদেশে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধর্মীয় উসকানী দেয়া ওয়াজ কমে যাবে। গ্যারান্টি দিয়ে বলে দিতে পারি। কিন্তু আওয়ামী লীগ এইটা করবে না।
আমার এক বন্ধু দীর্ঘ ২০/২২ বছরে তিলে তিলে বেশ কিছু ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে, একদিন ফোন করে বলল, ইউরোপ ভূক্ত দেশ মাল্টায় চলে আসতে চাইছে। ভিসা লাগানো শেষ। জানতে চাইলাম বেড়াতে না থাকতে? বলল থাকতে।
আমি অবাক হলাম! তার যুক্তি হল আমার দেশ আমার মাটি আমি যদি প্রাণ খুলে হাসতে না পারি, আমার নিজের কথাটা না বলতে পারি সবসময় একটা ভুলের ভয়ে বাস করি। কি জানি কি ভুল করলাম কী না। এইটা যে কী পরিমান কষ্টের বুঝবে না। আমি ফেইসবুক ব্যবহার করি কিন্তু কোন স্ট্যাটাস দেই না। কিছু মানুষ এইভাবেও হারিয়ে যায়, এদেরকে কেউ জোর করে দেশান্তরি করে না। এই ভয়টা পত্রিকার পাতায় আসে না।
আমার একমাত্র বড় ভাইয়ের ছেলে, তাকে দেশের বাইরে নিয়ে আসার এক ধরণের চাপ আমার উপর। আমি মনে প্রাণে চাই সে দেশে চাকরী বাকরী করুক। আমাদের বংশানুক্রমকে বাংলাদেশের মাটিতে ধরে রাখুক। কারণ তার চলে আসার মধ্য দিয়ে দেশের সাথে আমার শিকড় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আমার মা বাবার পরে সেই একমাত্র ব্যাক্তি। দেশান্তরি আমার হয়তো স্থায়ীভাবে আর দেশা ফেরা হবে না কোনদিন। আমার চৌদ্দ পুরুষের মাটি, আমার গ্রাম, আমার দেশ, সহায় সম্পত্তি যে টুকোই আছে সেসব অক্ষত থাকুক। আমার সন্তান জানবে তাঁর শিকড় বাংলাদেশ। আমি শিকড়হীন হতে চাই না। পৃথিবীর উন্নত দেশের একটি ব্রিটেন, যাকে স্বপ্নের দেশ বলা হয়। আমরা যারা দেশ থেকে বড় হয়ে আসা মানুষ, প্রতিটা মানুষ প্রতিদিন একবার স্বপ্ন দেখে দেশে ফেরার। নাড়ীর কাছে ফিরে যাওয়ার। সেই পথটা যেন বন্ধ না হয়।
শাল্লার নোয়াগাঁও এর তাণ্ডবের লাইভ ভিডিও যারা দেখেছেন, দেখবেন সেখানে বিশাল একটা অংশ কিশোর নিতান্ত শিশুও আছে। এদের ভিতর সাম্প্রদায়িকতার যে বিষ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সেই বিষে নিশ্বাস নেয়া খুব কঠিন হবে। সেই বিষে আমার উত্তর প্রজন্ম কি ফিরবে কোনদিন? নিশ্চয় নয়।
লেখকঃ ব্রিটেন প্রবাসী সাংবাদিক, কলামিস্ট।