লন্ডন ইস্ট একাডেমির ২০২০ ও ২০২১ সালের জিসিএসই উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধণা অনুষ্ঠিত হয়েছে । গত ৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে লন্ডন মুসলিম সেন্টারের প্রথমতলায় প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের প্রধান ইমাম শায়খ আব্দুল কাইয়ূম,লন্ডন ইস্ট একাডেমি পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান হোসেন শিপার, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ বদরুদ্দোজা ও শিক্ষক ওমর মোবারক।শিক্ষার্থী মুসা আলম ও মুয়াদ তানভিরের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন তালহা আমিন ও হামজা হোসাইন। ছাত্রদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাসরুর উসায়েদ, ইশফাক উদ্দিন,ইব্রাহিম উদ্দিন,জহির হাজী,রায়ান চৌধুরী,ওসমান হাজী ও হাসান আলী খান।
ইমাম শায়খ আব্দুল কাইয়ূম বিদায়ী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা তোমাদের শিক্ষা জীবনের একটি ধাপ শেষ করে এখন অন্য ধাপে যাওয়ার পথে । তোমরা শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপ পূর্ন করেছো এজন্য তোমাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তোমরা হয়তো ভাবছো আমরা স্বাধীন জীবনে পা রাখছি । এখন আর কোনো রেসটিকশন নেই। তোমরা এতোদিন যে নিয়মনীতির মধ্যে ছিলে তা কঠিন লেগেছে। তোমাদের স্বাধীনতা ছিলো না । তবে তোমরা একদিন বুঝতে পারবে যে জীবনের কত মুল্যবান সময়টুকু এখানে পার করে গেছো। আমি তোমাদের অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানাই। তারা তোমাদের জন্য মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করেছেন। এটা সর্বোত্তম বিনিয়োগ । এই বিনিয়োগ তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য বড় কাজ দেবে ইনশাল্লাহ। তোমরা হয়তো এখন এই বিনিয়োগটা দেখতে না পারছো না । কিন্তু একদিন সেই ফল দেখতে পারবে। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, তোমাদের কঠোর অধ্যাবসায়, অভিভাবকদের বিনিয়োগ, কোনো অবস্থাতেই বিফলে যাবে না । তোমরা একদিন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছবে এ জন্য সকলে আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে । আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে এখানে ইসলামের যে আলো দিয়েছেন এটি তোমাদের মধ্যে ধারণ করতে হবে । নিজের জীবনটা ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে পরিচালনা করাটাও একটি বড় দাওয়া । তোমরা কিভাবে এখানে লেখাপড়া করেছো, কীভাবে সহপাঠিদের সাথে চলাফেরা করেছো, কিভাবে পরস্পর কথাবার্তা বলেছো, যোগাযোগ রক্ষা করেছো-তার মধ্যে পরোক্ষ দাওয়া নিহিত রয়েছে। তোমরা মোটিভেটেড পিপুল । তোমরা নেতৃত্ব দিবে । তোমাদেরকে অন্য কেউ নেতৃত্ব দেবে না। এই উচ্চাকাঙ্খা আমি তোমাদের মধ্যে দেখতে চাই।
তোমাদের প্রতি আমাদের দোয়া থাকলো। উচ্চ শিক্ষা লাভ করে তোমরা যেন আবার এখানে ফিরে আসো। এই সেন্টার তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তোমরা কখনো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে না। সবসময়ই এই মসজিদ ও সেন্টারের সাথে সংযুক্ত থাকবে। আমাদের সাথে থাকবে। বিভিন্ন দাওয়া-তরবিয়ায় আমাদের কন্ট্রিবিউট করবে । তোমাদেরকে আমাদের প্রয়োজন। আমরা তোমাদের জন্য গর্বিত। তোমাদের জীবনে যাতে ভালো উচ্চাকাঙ্খা থাকে । আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে জান্নাতে একত্রিত করেন।
লন্ডন ইস্ট একাডেমির চেয়ারম্যান হোসাইন শিপার বলেন, তোমাদের পিতামাতা তোমাদেরকে এদেশের সরকারি স্কুলে পাঠাতে পারবেন । সেখানে তোমরা বিনামূলে লেখাপড়া করতে পারতে। কিন্তু তাঁরা সেটা না করে তোমাদেরকে লন্ডন ইস্ট একাডেমিতে পাঠিয়েছেন। তোমাদের জন্য তাঁরা কত অর্থ ব্যয় করেছেন। এর মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলাম। তোমরা যাতে ইসলামী শিক্ষা লাভ করতে পারো । তাই তোমরা উচ্চ শিক্ষার জন্য যেখানেই যাওনা কেন ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে যাবে । নতুবা মা-বাবার চেষ্টাটুকু সম্পুর্ণ বৃথা যাবে । সরকারি স্কুলে যে সাবজেক্টগুলো পড়ানো হয় এখানেও তোমাদেরকে সেই সাবজেক্টগুলোই পড়ানো হয়েছে। কিন্তু পার্থক্যটা হচ্ছে ইসলাম । তোমরা ইসলামি শিক্ষা লাভ করেছো । ইসলামি পরিবেশের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠেছে । সরকারি স্কুলে যেমন বিজ্ঞান পড়ানো হয়, ইংলিশ পড়ানো হয়। তোমরাও লন্ডন ইস্ট একাডেমিকে একইভাবে পড়েছো। সমান কারিকুলাম। শুধু পার্থক্য একটি জায়গায়। তোমরা ইসলাম শিখেছো । এই শিক্ষাই তোমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ।
প্রধান শিক্ষক বদরুদ্দোজা বলেন,কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ সালের জিসিএসই পরীক্ষর্থীদের বিদায় সংবর্ধণা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ফলে এ বছর ২০২১ সালের ফলপ্রার্থীদের সাথে করতে হলো।এতে ২০২১ সালের শিক্ষার্থীদের একটি লাভ হবে তারা ২০২০ সালের শিক্ষার্থী যারা ইতোমধ্যে কলেজে এক বছর কাটিয়ে এসেছে তাদের কাছ থেকে কলেজ লাইফ সম্পর্কে জানতে পারবে।তিনি বলেন, কলেজ জীবনে ভালো সহপাঠী খুঁজে নেয়া একটি বড় কাজ । ভালো সহপাঠি তোমাদের ভালো কাজে অনুপ্রেরণা যোগাবে। মন্দ সহপাঠি বিপথগামী করবে।এমন সহপাঠির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে তোমার লক্ষ্য উদ্দেশের মিল আছে।তোমাদের বন্ধুত্বের মুল উদ্দেশ্য হতে হবে ইসলাম। ইসলাম ছাড়া দুনিয়াবী কোনো স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব হলে পরকালে ওই বন্ধু তোমার শত্রুতে পরিনত হবে । তাই বন্ধুত্ব হতে হবে এমন সহপাঠীর সাথে যে তোমাকে নামাজের জন্য আহবান করে,ভালো কাজের অনুপ্রেরণা যোগায়।উল্লেখ্য, নৈশভোজের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।