জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী আজ। এই মহীয়সী নারীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির বাণী
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব বাঙালির অহংকার ও নারী সমাজের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।আজ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই মহীয়সী নারীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীতে প্রথমবারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পাঁচজন বিশিষ্ট নারীকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক প্রদান একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে তিনি উল্লেখ করেন। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য, “বঙ্গমাতা সংকটে সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী”, অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্ম। তাঁর ডাকনাম ছিল রেণু। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা। যে-কোনো পরিস্থিতি তিনি বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও সাহস নিয়ে মোকাবিলা করতেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী হওয়ার পর তাঁর জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। তিনি কেবল জাতির পিতার সহধর্মিণীই ছিলেন না, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামেও তিনি ছিলেন অন্যতম অগ্রদূত। দেশের স্বার্থে বঙ্গবন্ধুকে অসংখ্যবার কারাবরণ করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সেই কঠিন দিনগুলো দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করেছেন। পরিবারের দেখাশোনার পাশাপাশি স্বামীর মুক্তির জন্য মামলা পরিচালনা, দলের সাংগঠনিক কাজে পরামর্শ ও সহযোগিতা দান সবই তাঁকে করতে হয়েছে। তিনি সংগঠনের নেতা-কর্মী ও গরিব আত্মীয় স্বজনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ অর্থনৈতিক সংকটে মুক্তহস্তে দান করতেন।তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের নেপথ্যেও ছিলেন তিনি। তাঁরই পরামর্শে বঙ্গবন্ধু হৃদয় থেকে উৎসারিত অলিখিত এ ভাষণ প্রদান করেন। দেশ ও জাতির জন্য অপরিসীম ত্যাগ, সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতা তাঁকে বঙ্গমাতায় অভিষিক্ত করেছে। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব বাঙালির অহংকার, নারী সমাজের প্রেরণার উৎস।আবদুল হামিদ বলেন, বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে তাঁকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়েছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে কারাবন্দি স্বামীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গভীর অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার মাঝেও তিনি অসীম ধৈর্য, সাহস ও বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। জাতির মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, বঙ্গমাতা ছিলেন নির্লোভ, নিরহংকার ও পরোপকারী। পার্থিব বিত্ত-বৈভব বা ক্ষমতার জৌলুস কখনো তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পত্নী হয়েও তিনি সবসময় সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে স্বামী-পুত্র-পুত্রবধূসহ নিকট আত্মীয়ের সাথে তিনি ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে নির্মমভাবে শহিদ হন। জাতির ইতিহাসে যা এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।রাষ্ট্রপতি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকীতে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
তিনি আশা করেন, তাঁর জীবনি চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক অজানা অধ্যায় সম্পর্কে জানতে পারবে।
আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এক বাণীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এসব কথা বলেন।
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকীতে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘বঙ্গমাতা সংকটে সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী’ যথার্থ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে সর্বক্ষণের সহযোগী ও অনুপ্রেরণাদায়ী এই মহীয়সী নারীর কর্মময় জীবনের প্রকৃত অর্থ প্রতিফলিত হয়েছে । তিনি বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
মহীয়সী নারী ফজিলাতুন নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩ বছর বয়সে তিনি পিতা এবং ৫ বছর বয়সে মাতাকে হারিয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর পিতা-মাতার কাছে লালিত-পালিত হন এবং চাচাত ভাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁর দাদা তাঁকে বিয়ে দেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী ফজিলাতুন নেছা মুজিব আমৃত্যু স্বামীর পাশে থেকে একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি জাতির পিতার সঙ্গে একই স্বপ্ন দেখতেন। এ দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাক, ভালভাবে বাঁচুক এই প্রত্যাশা নিয়েই তিনি বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সবসময় ছিলেন সজাগ এবং দূরদর্শী।একজন সাধারণ বাঙালি নারীর মতো স্বামী-সংসার, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনে তিনি অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সাফল্যে বঙ্গমাতা উল্লেযোগ্য অবদান রাখেন। জাতির পিতা রাজনৈতিক কারণে প্রায়ই কারাগারে বন্দী থাকতেন। এই দুঃসহ সময়ে তিনি হিমালয়ের মতো অবিচল থেকে একদিকে স্বামীর কারামুক্তিসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, অন্যদিকে সংসার, সন্তনদের লালন-পালন, শিক্ষাদান, বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা, শক্তি ও সাহস যুগিয়ে স্বাধীনতা এবং মুক্তির সংগ্রামকে সঠিক লক্ষ্যে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ অবদান রাখেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তনি হানাদার বাহিনীর হাতে গৃহবন্দি থেকে এবং পাকিস্তানে কারাবন্দি স্বামীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গভীর অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা সত্ত্বেও তিনি সীমাহীন ধৈর্য, সাহস ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বিশেষ করে নির্যাতিত মা-বোনদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং সামাজিকভাবে তাদের প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেন। দেশ ও জাতির জন্য তাঁর অপরিসীম ত্যাগ, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতার কারণে জাতি তাঁকে যথার্থই ‘বঙ্গমাতা’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে জাতির পিতার সঙ্গে বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিবকেও সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে, যা জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।